রবিবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » করোনার স্থবিরতার পর বান্দরবান জেলার রাজনীতি কোন পথে
করোনার স্থবিরতার পর বান্দরবান জেলার রাজনীতি কোন পথে
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: সমতল এবং পার্বত্য জেলা বান্দরবান জেলার রাজনীতিতে পার্থক্য রয়েছে । তার মধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কিছু ভিন্নতাও রয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বান্দরবান জেলায় বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং গুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে হারিয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় জেলায় উল্লেখযোগ্য করোনাকালিন কর্মহীনদের মাঝে ত্রান সহায়তা প্রদান করেছেন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় জাতীয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে। এ জেলায় জাতীয় পর্যায়ের মাত্র ২টি রাজনৈতিক দল সক্রিয়।
এছাড়া বান্দরবানে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মূল), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রোটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল), বাঙ্গালী গণ পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমধিকার আন্দোলন, মগ পার্টি (প্রশাসনের চাপে বিলুপ্ত), পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসি বাঙ্গালী সংগঠন ও পার্বত্য নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ জেলায় নতুন হিসাবে আঞ্চলিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদে সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতা বীর বাহাদুর উশৈসিং বান্দরবান-৩০০ আসনের সংসদ সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী।
বান্দরবান জেলা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কমিটিতে তিনি কোন বড় পদবীর কেউ নয়, বীর বাহাদুর হচ্ছেন জেলার কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য, তার পরও বান্দরবানের অভিবাবক খ্যাত এই নেতা ৬ বারের এমপি, ২ বার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন, ১ বার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এবারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের চট্টগ্রাম বিভাগের ২ বারের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে কেন্দ্রীয় নেতার দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলাকে একটি অন্যতম আধুনিক জেলায় পরিনত করেছেন এছাড়া সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সমানভাবে জনপ্রিয় একজন নেতা বীর বাহাদুর এমপি বলে দাবি করেন তার অনুসারীরা।
বান্দরবান জেলা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কমিটিতে বড় ধরনের কোন কোন্দল না থাকলেও জেলা আওয়ামীলীগের নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, আর এ আভিযোগ করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক কাজী মো. মুজিবুর রহমান, তিনি বলেন, জেলা আওয়মীলীগ সভাপতি ক্যশৈহ্লা মারমা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০১, আবার ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত একই ব্যক্তি বান্দরবান পার্বত্য জেলা ক্ষমতা আখড়ে আছেন, ১শত জনের চাকুরী হলে ৯৫ জন ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর সম্প্রদায় ভুক্ত লোকজন চাকুরী পায়, আত্মীয় করণের কারণে দলের ত্যাগী বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের লোকজন চাকুরী পায় না। একজন মানুষ ছাড়া কি বান্দরবান আওয়ামীলীগে আর ২য় জন কেউ না ? অন্যায়ের প্রতিবাদ করিলে অথবা সত্য কথা প্রকাশ করিলে দলে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়।
এবিষয়ে বান্দরবান জেলা আওয়মীলীগ সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
তবে বান্দরবান জেলা আওয়মীলীগের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৭ জানুয়ারী-২০১৫ সালে রাজার মাঠে বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে হামলা করা হয়, ঐ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালিন সভাপতি এইচ এম বদিজামানসহ ২০ জন ছাত্রলীগ নেতা আহত হয় এ ঘটনার মদদ দাতা হিসাবে তৎকালিন জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কাজী মো. মুজিবুর রহমানকে জেলা কমিটির সভা করে অনাস্থার মাধ্যমে বহিস্কার করা হয়েছে।
এবিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক কাজী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ৭১ জন সদস্যের ভিতর ৬৯ জন সদস্য আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রধান করেছে, এটা আমার বিরুদ্ধে গভির ষড়যন্ত্র করা হয়ে। দলের তৃর্ণমুলের নেতা-কর্মীরা আমার সাথে ছিলো,আছে এবং থাকবে আমি আশাবাদি। কিছু কিছু নেতা দলের নাম ব্যবহার করে দুর্নীতি আর অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছে, আর দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা ঠিকমত দু’বেলা খেতে পায় না, সাধারন মানুষের জন্য কথা বলায় আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি একজন ভাল মানুষ, মন্ত্রী তৃর্ণমুল পর্যায়ের অনেক বিষয় আছে খবর নিতে পারেন না, মন্ত্রী তিন পার্বত্য জেলার দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বান্দরবানে একটি মহল ফায়দা লুটছে।
দলের নাম ভাঙ্গিয়ে মো. শাহেদ গংরা অপকর্ম করার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাদের ছাড় দেয়নি ঠিক তেমনি এরাও ছাড় পাবেনা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হাত থেকে বলেন আওয়ামীলীগ নেতা কাজী মো. মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল-বিএনপির বান্দরবান জেলায় বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে গুত্বপূর্ণ কোন নেতা-কর্মীকে হারানো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বান্দরবানে বিএনপিতে প্রকাশ্যে কোন্দল রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে, এদের মধ্যে একটি গ্রুপে নেতৃত্বে রয়েছে বান্দরবান স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান সাচিংপ্রু জেরী এবং অপর গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ম্যামাচিং মারমা।
বান্দরবান জেলায় বিএনপির দলীয় কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত পরিসরে চলছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মূল) বান্দরবান জেলায় বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসে গুত্বপূর্ণ কোন নেতা-কর্মীকে হারানো তথ্য পাওয়া যায়নি।
বান্দরবানে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মূল) বিগত দিনে সাংগঠনিক ভাবে শক্ত অবস্থানে থাকলেও আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের হত্যার দায়ে পিসিজেএসএস-মূল এর কেন্দ্রীয় নেতাসহ জেলা ও উপজেলার গুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে ডজন খানিক মামলা দায়ের পর বেশী ভাগ নেতারাই এখন জেলখানায় আছে।
করোনাকালিন বান্দরবানে আওয়ামীলীগ এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কর্মী অস্ত্রধারীদের হাতে নিহত হয়। এসব নেতা-কর্মী হত্যাকান্ডের সন্দেহের তীর পিসিজেএসএস-মূল এর দিকে।
আর যে সব পিসিজেএসএস-মূল এর নেতা-কর্মী জামিনে মুক্তি পেয়ে বাইরে আছে তারাও এলাকা ছাড়া বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
দলীয় ভাবে করোনাকালিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মূল) এর অবস্থান বান্দরবানে অনেকটাই অগোছালো এবং নেতৃত্ব শূণ্য অবস্থায় বলে জানা গেছে।
বান্দরবানে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রোটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর অবস্থান ছিলো এখন নাই।
বান্দরবানে বর্তমান সময়ে বাঙ্গালী গণ পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমধিকার আন্দোলন, মগ পার্টি (প্রশাসনের চাপে বিলুপ্ত) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসি বাঙ্গালী সংগঠনের কোন কার্যক্রম নাই।
তবে এ জেলায় বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক কাজী মো. মুজিবুর রহমান নেত্বত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শক্তিশালী হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দল সমুহের নিজেদের মধ্যে কোন্দল গ্রুপিং-লবিং প্রকাশ্যে বা গোপনে লেগেই আছে, জাতীয় রাজনৈতিক দল সমুহের মধ্যে দুরত্ব বেড়েছে এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সমুহের মধ্যে দুরত্ব বেড়েছে সর্বশেষ ক্ষমতাসীন দলের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদনকারী আঞ্চলিক দলের সাথে দুরত্ব বেড়েছে। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষ আর বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দুরত্ব বেড়েছে বান্দরবান জেলায় করোনাকালীন স্থবিরতার পর এ জেলায় রাজনীতি সংকট পরিস্কার, দেখার বিষয় হচ্ছে পাহাড়ে রাজনীতি কোন পথে ?