বৃহস্পতিবার ● ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় সেটেলারেরা নির্দিষ্ট শ্মশানে উত্তম বড়ুয়ার মৃতদেহ দাহ করতে দিল না
রাঙামাটিতে সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় সেটেলারেরা নির্দিষ্ট শ্মশানে উত্তম বড়ুয়ার মৃতদেহ দাহ করতে দিল না
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম :: (আপলোড ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৬: বাংলাদেশ সময় রাত ১১.৫৫ মিঃ) এইডস বর্তমান উন্নত প্রযুক্তির যুগেও একটি ঘাতক ব্যাধি। অধ্যাবধি যার কোন প্রতিবিধান আবিষ্কৃত হয়নি। ঠিক একই রকমভাবে উগ্র জাতীয়তাবাদ যাকে আমরা মৌলবাদ বলে জানি, এই মৌলবাদীদেরও নিবৃত করার কোন ঔষধ বাংলাদেশে নেই। গত ১৪ ফেব্রুয়ারী রবিবার ২০১৬ ভোর ৪ টায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার করেঙ্গাতলি ইউনিয়নের বড়ুয়া পাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা প্রদীপ বড়ুয়ার পুত্র উত্তম বড়ুয়া (৪০)ষ্ট্রোক করে মৃত্যু বরন করেন। ঐদিন করেঙ্গাতলি বৌদ্ধ বিহারের শ্মশানে উত্তম বড়ুয়ার মৃতদেহ দাহ করতে স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন উদ্যোগ নিলে স্থানীয় বাঙ্গালী (সেটেলার) মোঃ ইয়াছিন, মোঃ শাহাজান, জগুর আলি, আনসার আলি ও সোহেল খান বৌদ্ধ বিহার শ্মশানে এসে উত্তম বড়ুয়ার দাহ কার্যে বাধা প্রদান করেন। তারা বলেন,উত্তম বড়ুয়ার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান এ এলাকাতে করা যাবেনা, এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াবে। তারা উত্তম বড়ুয়ার মৃতদেহ দূরে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে বলেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন করেঙ্গাতলি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উপতিষ্য মিত্র ভিক্ষুর কাছে গেলে বিহারের অধ্যক্ষ বিহার সংলগ্ন শ্মশানে উত্তম বড়ুয়ার দাহ করার পরামর্শ দেন। স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বীরা দাহ প্রস্তুতি নিলে স্থানীয় সেটেলারেরা বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে করেঙ্গাতলি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে জানালে, তৎক্ষনিক বেশ কয়েকজন করেঙ্গাতলি সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সদস্য বৌদ্ধ বিহারে উপস্থিত হয়ে দাহকাজে বাধাপ্রদান করেন এবং বলেন ক্যাম্পের কর্মরত অফিসার মৃতদেহ দুরে কোথাও পাহাড়ে নিয়ে দাহ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এক পর্যায়ে সেনা সদস্যরা ও স্থানীয় সেটেলারেরা মিলে উত্তম বড়ুয়ার দাহ পাহাড়ের ভিতর করাতে বাধ্য করেন। এ বিষয়ে সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম করেঙ্গাতলি বিহার অধ্যক্ষ উপতিষ্য মিএ ভিক্ষুর কাছে জানতে চাইলে, তিনি বিহার শ্মশানে উত্তম বড়ুয়ার দাহকার্য সম্পাদনে স্থানীয় সেটেলার ও সেনাবাহিনীর বাধা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর কাজ হচ্ছে বহির্শত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা, যেকোন দুর্যোগের সময় উদ্ধার কাজে অংশ গ্রহণ করা, দেশের আইন শৃংখলা রক্ষা করা ও স্বেচ্ছাসেবা মূলক কাজে অংশ গ্রহণ করা। আমাদের দেশের সেনা বাহিনীর সদস্যরা বিদেশে মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে কাজ করেন। করেঙ্গাতলি সেনা বাহিনী ক্যাম্পের সদস্যরা উগ্র মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে তারা তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
স্থানীয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের দাবি মৃত ব্যক্তিকে তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শ্মশানে দাহ করতে না দেওয়ায় মৃত উত্তম বড়ুয়ার নাগরিক অধিকার খর্ব করা হয়েছে, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতি মানবাধিকার লঙ্গন করা হয়েছে, বৌদ্ধ ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করা হয়েছে, এটা চরম ও সুষ্পষ্ট দেশের নাগরিকদের প্রতি বৈষম্য। মৃত উত্তম বড়ুয়ার পরিবার ও স্থানীয়রা স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের দাবি কেবলমাত্র সংখ্যালঘু হওয়াতে মৃত উত্তম বড়ুয়া এদেশের নাগরিক হিসেবে নির্দিষ্ট শ্মশানে দাহ কার্য সম্পাদনের মর্যাদার সুযোগ পর্যন্ত পেলনা। পার্বত্য অঞ্চলে এর চাইতে আরো বড় বড় মানবাধিকার লঙ্গনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশে স্থানীয় প্রশাসনের বাধা রয়েছে । মৃত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয়রা বাংলাদেশের আর কোন সংখ্যলঘু সম্প্রদায় যেন কারো দ্বারা শেষকৃত্য অনুষ্ঠান ও শ্মশানে মৃতব্যক্তিদের দাহ কার্যে বাধা গ্রস্থ না হয় এবং নির্দিষ্ট শ্মশানে মৃত উত্তম বড়ুয়ার দাহ কার্যে বাধা প্রদানকারী উগ্র মৌলবাদী স্থানীয় সেটেলার ও করেঙ্গাতলি সেনা ক্যাম্পের সদস্যদের যথাযত তদন্ত পুর্বক আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আবেদন জানিয়েছেন। পার্বত্য অঞ্চলসহ বাংলাদেশে এই ধরনের হীনকর্ম , মানবাধিকার লঙ্গন, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য প্রদান করতে দুঃসাহস আর যেন বাংলার মাটিতে না হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিপ্লব বড়ুয়া সোহেল।