রবিবার ● ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় » ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম জোট
৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাম জোট
ঢাকা :: বন্ধ সকল রাষ্ট্রীয় পাটকল সেপ্টেম্বরের মধ্যে চালু ও আধুনিকায়ন করার দাবিতে আজ ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে দেশব্যাপী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে সচিবালয়ে পাটমন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল অগ্রসর হলে নূরহোসেন স্কোয়ারে আব্দুল গণি রোডের মুখে পুলিশ বাঁধা দিলে সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়। একই দাবিতে সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জোটের কেন্দ্রীয় নেতা সিপিবি’র সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাজ্জাদ জহির চন্দন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী কমরেড জোনায়েদ সাকি, কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক কমরেড অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুইয়া। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান লিপন।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, করোনা মহামারিতে পুরো দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন। ঠিক এ সময়েই বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৫১ হাজার শ্রমিককে বেকার করে দিয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার। এই দুর্যোগে সারা দুনিয়ায় যেখানে নানা প্রণোদনা দিয়ে মানুষের জীবিকা রক্ষার চেষ্টা চলছে, সেখানে বাংলাদেশে করোনা মহামারির এই দুর্যোগের মধ্যে সোনালী আঁশের ঐতিহ্যবাহী পাটকল বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার একবার বলছে পাটকলগুলোকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে চালু করা হবে, আবার বলছে লীজ দেয়া হবে। বাস্তবে জনগণের পাটকল ব্যক্তিমালিকদের কাছে বিক্রি করার পাঁয়তারা করছে সরকার।
বক্তাগণ বলেন, করোনা পরবর্তী বিশ^ব্যাপী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ার ফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে বিপুলভাবে। সারা ইউরোপে একযোগে প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। ফলে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বিশ্বে ক্রমাগত বাড়তে থাকবে।
বক্তাগণ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের পেছনে সরকারের বড় অজুহাত লোকসান। কিন্তু কেন লোকসান, কাদের কারণে লোকসান, লোকসান বন্ধ করতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল? সে সব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। সরকার মাথা ব্যথায় ওষধ না দিয়ে মাথা কেটে ফেলার ব্যবস্থা করছে।
বক্তাগণ বলেন, আমরা বার বার বলেছি লোকসানের জন্য দায়ী সরকারের ভুলনীতি, দুর্নীতি এবং লুটপাট। সময়মত পাট কেনার টাকা না দেয়া, পরবর্তীতে বেশি দামে নিম্নমানের পাট কেনা, ৫০/ ৬০ বছরের পুরনো তাঁত দিয়ে উৎপাদন করা, বিজেএমসি’র মাথাভারি প্রশাসনের ব্যয় ইত্যাদি হলো লোকসানের প্রধান কারণ।
বক্তাগণ বলেন, ২৫টি পাটকলের ১০ হাজার তাঁতের মধ্যে অর্ধেকই অচল, ফলে অচল ও পুরনো যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন না করে পাটকল লাভজনক করা যাবে না। বাম জোট ও স্কপের পক্ষ থেকে হিসেব করে দেখানো হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক তাঁত স্থাপন করলে উৎপাদন বাড়বে তিনগুণ, শ্রমিকদের গড়ে ২৫ হাজার টাকা বেতন দিয়েও পাটকল লাভজনক করা সম্ভব। কিন্তু সরকার সে পথে না গিয়ে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে দেশী-বিদেশী লুটেরাদের স্বার্থে কারখানা বন্ধ করে শ্রমিক ছাঁটাই করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
বক্তাগণ বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ৫১ হাজার পাটকল শ্রমিক, ৪০ লাখ পাটচাষি, পাট ও পাটশিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ৪ কোটি মানুষ। বন্ধ হওয়ায় সরকারি পাটকল আর পাট কিনবে না। এ সুযোগে বেসরকারি পাটকলগুলো সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো পাটের দাম নিয়ন্ত্রণ করবে। এতে পাটচাষীরা পাটের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হবে। পাটকল বন্ধ হওয়ায় ভারতে কাঁচা পাট পাচার আরও বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। পাট বাংলাদেশের একটি স্থায়ী শিল্পের ভিত্তি রচনা করেছিল, যার কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত হয়, সস্তা শ্রম শক্তিও দেশের, উৎপাদিত পণ্য দেশের চাহিদা পূরণ করার পরও রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। সেই শিল্প অর্থনীতি ও শ্রমিক কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় পাটকল বন্ধের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে অবিলম্বে চালুর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
বক্তাগণ বলেন, সরকার বলে লোকসান - আমরা বলি দুর্নীতি, সরকার বলে লোকসান - আমরা বলি লুটপাট। আর পাট শিল্পে ৪৪ বছরে লোকসান ১০,৬৭৪ কোটি টাকা, বছরে মাত্র ২৪০ কোটি টাকা অথচ প্রধানমন্ত্রীর অফিসের খরচ বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। পাট খাতের চেয়ে বড় লোকসানী খাত হলো বর্তমান সরকার, গত বাজেটে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার কথা ছিল ৪৮ হাজার কোটি টাকা, নিয়েছে ৮২ হাজার কোটি টাকা। ফলে লোকসানে পাটখাত বেসরকারিকরণ করার আগে তো এই সরকারকে বেসরকারিকরণ করতে হয়।
বক্তাগণ বলেন, এই সরকার আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। ভোট ডাকাতির সরকারের দেশ ও জনগণের প্রতি কোন দায় নাই, ফলে দেশ ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে। নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রীয় পাটকলসহ সকল রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার্থে গণবিরোধী ভোট ডাকাতির সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বন্ধ সকল রাষ্ট্রীয় পাটকল সেপ্টেম্বরের মধ্যে চালু ও আধুনিকায়ন করা, শ্রমিকদের সকল বকেয়া পরিশোধ, লোকসানের জন্য দায়ী মন্ত্রণালয় ও বিজেএমসির কর্মকর্তাদের বিচার, সরকারি-বেসরকারি সকল পাটকলে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে আগামী ৫ অক্টোবর ২০২০ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোসণা করা হয়।