বুধবার ● ১৪ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » সুন্দরবনে উপকুলে ট্রলার বোঝাই করে মাছ নিয়ে ফিরলেও জেলে-মহাজনদের মুখে হাসি নেই
সুন্দরবনে উপকুলে ট্রলার বোঝাই করে মাছ নিয়ে ফিরলেও জেলে-মহাজনদের মুখে হাসি নেই
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: সুন্দরবনে উপকুলে ট্রলার বোঝাই করে মাছ নিয়ে ফিরলেও জেলে-মহাজনদের মুখে হাসি নেই।
সারা মৌসুমে তেমন একটা ইলিশ ধরা পড়েনি বাগেরহাটে জেলেদের জালে। এখন মৌসুমও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবার এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ইলিশের অবরোধ।বাগেরহাটের সামুদ্রিক মাছ ক্রয়-বিক্র্য়ের পাইকারি আড়ত কেবি বাজারে উপচে পড়া ভীড় লক্ষ করা গেছে। মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) ফজরের পর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতা ও জেলেদের ভীড়ে সরগরম ছিল কেবি বাজার। কিন্তু ভরা মৌসুমে ইলিশ না মিললেও অবরোধের আগেরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইলিশ বোঝাই করে সাগর থেকে উঠে এসেছে ফিশিং ট্রলারগুলো।শরণখোলা উপজেলার রাজৈর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ বিক্রির ধুম পড়েছে। শেষ মুহুর্তে এতে ইলিশ নিয়েও বিপাকে পড়েছেন আড়ৎদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই ট্রলারগুলো সাগর থেকে উঠতে শুরু করে। ঘাটে ভিড়েছে অর্ধশতাধিক ফিশিং ট্রলার। প্রত্যেক ট্রলারে কমপক্ষে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার করে ইলিশ বোঝাই করে ঘাটে ফিরেছে। জেলে শ্রমিকরা কেউ ব্যস্ত ট্রলার থেকে মাছ উঠাতে, কেউ ব্যস্ত ঝুড়িতে মাছ ভরতে। খুলনার মোকামে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ট্রাক-পিকআপ। জেলে-মহাজন-শ্রমিক কারোরই কথা বলার যেনো ফুরসত নেই।
এসময় ব্যস্ততার ফাঁক গলিয়ে কথা হয়, মৎস্য আড়ৎদার মজিবর তালুকদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারা মৌসুম ইলিশের দেখা নেই। শেষ ট্রিপে এসে ইলিশ ধরা দিয়েছে জালে। কিন্তু এই মুহুর্তে মাছ নিয়ে সবাই অস্বস্তিতে রয়েছে। মধ্যরাত থেকেই অবরোধ শুরু হবে। রাত ১২টার আগেই খুলনার মোকামে মাছ পৌঁছাতে না পারলে বিপদ হয়ে যাবে।
বাগেরহাট জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন জানান, এবছর একেকজন জেলে-মহাজন তিন লাখ-চার লাখ টাকার লোকসানে আছে। এখন ট্রলার বোঝাই করে মাছ নিয়ে ফিরলেও জেলে-মহাজনদের মুখে হাসি নেই।
বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি এম সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, অন্যান্য এলাকার জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও প্রত্যেক ট্রিপেই শূণ্য ট্রলার নিয়ে ফিরেছে শরণখোলার জেলেরা। এবার সবাই লোকসানে আছে। সরকারের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে-মহাজনদের প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানাই।সকাল ৮টার দিকে কেবি বাজারে দেখা যায়, কেজি-কেজি মাছের পোন (৮০ পিস) বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।৫‘শ থেকে ৬‘শ গ্রামের মাছের পোন ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, ৭‘শ থেকে ৮‘শ গ্রামে মাছ ৫৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ২‘শ থেকে ৩‘শ গ্রাম ওজনের মাছও বিক্রি হয়েছে। এসব মাছের পোন বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়।
ইলিশের বাইরে রুপচাঁদা, সাগরের বাইলা, লইট্যা, ঢেলা চ্যালা, কঙ্কন, মেইদ, কইয়া ভোল, জাবা ভোল, জাবা, বউ মাছ, পোয়া, টোনাসহ বিভিন্ন মাছ বিক্রি হয়েছে প্রচুর। এসব মাছ আকার, আকৃতি ও চেহারা ভেদে ১‘শ ৫০ থেকে ৩শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। তবে রুপচাঁদা সর্বনিম্ন ৫‘শ থেকে ৮‘শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এই ক্রয় বিক্রয় রাত ১২ টা পর্যন্ত চলবে বলে জানয়েছেন কেবি বাজার ব্যবসায়ীরা।
সাগর থেকে মাছ ধরে আসা লতিফ, নজরুল, জাহিদসহ কয়েকজন জেলে বলেন, এ বছর ইলিশের মৌসুম শুরু হওয়ার পরে প্রথম কিছু দিন মাছ বেশি পেয়েছি। তবে শেষদিকে আমরা বড় মাছ পেলেও, পরিমানে অনেক কম পেয়েছি। কাল থেকে ২২ দিন আমরা ২২দিন পর্যন্ত মাছ আহরণ করতে পারব। এ সময়টা খুব কষ্টে যাবে আমাদের। কারণ এবার ট্রেলার মালিকরা লোকসানে পড়েছেন।যারফলে এই সময়ে আমরা মহাজনের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাব না। আর সরকার ঘোষিত সহায়তা পাব কিনা তাও বলতে পারি না।
মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা কেবি বাজার থেকে মাছ ক্রয় করে নিয়ে এলাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করি। আজকে ইলিশ বিক্রির শেষ দিন। তারপরও বেশি দামে তিন পোনের মত মাছ কিনেছে। শেষদিন তো অনেকেই মাছ ক্রয় করবেন। কিন্তু বাজার যদি ভাল না হয় লসে পড়তে হবে।
উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, এবছর মাছের সাইজ বড় থাকলেও পরিমান কম ছিল। তাই জেলেরা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন।ব্যবসায়ীরা তেমন লাভবান হতে পারবেন। তবে গেল বছরের মত শীতের মৌসুমে যদি সাগরে বেশি ইলিশ পাওয়া যায় তাহলে জেলে ও ব্যবসায়ীরা লোকসান পোষাতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
মা ইলিশ রক্ষার জন্য সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ ও বিপনন বন্ধ থাকবে।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মোঃ খালেদ কনক বলেন, বুধবার (১৪অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে ২২দিনের ইলিশ অবরোধ। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ৪নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, বিপনন ও মজুদ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শেষ মুহুর্তে আহরিত ইলিশ নির্ধারিত সময়ের আগে বিক্রি করতে না পারলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মজুর রেখে অবরোধ শেষে হলে বিক্রি করতে হবে।