বৃহস্পতিবার ● ২২ অক্টোবর ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ৪ মাসে একজন অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ৪ মাসে একজন অভিযুক্তকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: গ্রীণ হিল এনজিও পরিচালিত সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছোট হরিণা শাখার একজন নারীকে নানাভাবে অনলাইনে সাইবার অপরাধ সংগঠিত করার অপরাধে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করার চার মাস (৮৫ কর্মদিবস) অতিবাহিত হওয়ার পরও পাঁচজন অভিযুক্তদের মধ্যে একজন আসামীকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি রাঙামাটি জেলার বরকল থানা পুলিশ।
বরকল থানা মামলা নং-০১ তারিখ ২২ জুন-২০২০ এবং রাঙামাটি কগনিজেন্স আদালতের মামলা নং- ২০৯/২০২০।
অভিযোগ সুত্রে জানাযায়, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রটি প্রযুক্তির মাধ্যমে ইলেক্টনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করে প্রতারনার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ এছাড়া খাবারে নেশা জাতীয় দ্রব মিশিয়ে তা পান করিয়ে আপত্তিকর ভিডিও ধারন এবং ঐ ভিডিও সহ ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করে সাইবার অপরাধ সংগঠিত করায় রাঙামাটি জেলার বরকল থানায় গত ২২ জুন-২০২০ ইংরেজি তারিখ ভোক্তভোগি রাখী খীসা বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আজ ২২ অক্টোবর-২০২০ ইংরেজি তারিখ এ মামলার ১২০ দিন পূর্ণ হলো।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা অভিযুক্তরা আসামীরা হলো, ১। নকুল চন্দ্র শর্মা, পিতা-মৃত সুধন চন্দ্র শর্মা, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা, ২। মো. সোহেল ৩। মো. সুমন পারভেজ উভয়ের পিতা- আব্দুল মালেক, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), ৪। মো. ইউছুফ রানা, পিতা-মৃত আলি আহম্মদ, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল ও ৫। অমর শান্তি চাকমা, পিতা- চিরনজীব চাকমা, মাতা- ইন্দ্রদেবী চাকমা, গ্রাম-কুসুমছড়ি, সুভলং, বর্তমান ঠিকানা- গ্রাম-ধনুবাগ-মাষ্টার পাড়া (সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ মামলার মুল হোতা নকুল চন্দ্র শর্মা মামলা দায়ের পর সে বরকলের ছোট হরিণা থেকে পালিয়ে চট্টগ্রামের চানগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথায় একটি সেলুনে নাপিতের কাজ নেয়। চট্টগ্রাম থেকে গা ডাকা দিয়ে নাপিত নকুল চন্দ্র শর্মা এখন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা এলাকায় রয়েছে।
২ নাম্বার অভিযুক্ত আসামী মো. সোহেল পারভেজ চট্টগ্রামের ইপিজেট এলাকায় গার্মেস ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করছে।
৩ নাম্বার অভিযুক্ত আসামী মো. সুমন পারভেজ বরকল উপজেলার ছোট হরিণা বাজারে নিয়মিত মোবাইল দোকানে বসে ব্যবসা করছে, মো. সুমন ছোট হরিণা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির একজন নেতা।
৪ নাম্বার অভিযুক্ত আসামী মো. ইউছুফ রানা প্রায় প্রতিদিন হরিণা টু রাঙামাটি স্প্রেরিট বোট নিয়ে ড্রাইভার হিসাবে যাতায়ত করে এছাড়া মো. ইউছুফ রানার হরিণায় একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে।
মামলার অপর ৫ নাম্বার অভিযুক্ত আসামী অমর শান্তি চাকমা বর্তমান সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখায় ভারপ্রাপ্ত ক্লিনিক ম্যানেজার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে। একজন ছাড়া অভিযুক্তরা সবাই নিজ নিজ এলাকায় রয়েছে।
পুলিশের খাতায় অভিযুক্ত আসামীরা সকলেই পলাতক।
বাদি পক্ষ আসামীরা সকলেই পলাতক বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, অভিযুক্ত আসামীদের সাথে পুলিশের শখ্যতা রয়েছে। দেশে প্রতিদিন গুরুতর অপরাধের আসামী গ্রেপ্তার হচ্ছে অথচ আজ দীর্ঘদিন ধরে বরকল থানা পুলিশ ৫জনের মধ্যে ১জন আসামীর গ্রেপ্তার করতে পরেনি। ক্ষমতাসীন দলের এবং স্থানীয় কিছুর মুরব্বীর মাধ্যমে আসামীরা থানা পুলিশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে বলে গোপন সূত্রে জানেন বলে বাদির দাবি।
এদিকে উল্টা অভিযুক্ত আসামীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করায় সূর্যের হাসি ক্লিনিক এর চাকুরী থেকে স্বেচ্ছায় অব্যহতি (রিজাইন) দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তভোগী নারী রাখি খীসা। বাদি জানান, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রটির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করায় এবং অভিযুক্ত আসামী বর্তমান সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখার ভারপ্রাপ্ত ক্লিনিক ম্যানেজার অমর শান্তি চাকমার নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারে জন্য আমাকে (বাদিকে) বিভিন্ন ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
এদিকে সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখার ভারপ্রাপ্ত শাখা ম্যানেজার মামলার অপর অভিযুক্ত আসামী অমর শান্তি চাকমা মুঠোফোনে সিএইচটি মিডিয়াকে জানায়, আপত্তিকর ভিডিওটি মুলতঃ মাঠকর্মী মৌসুমী চাকমার মোবাইল থেকে সূর্যের হাসি ক্লিনিক এর প্রধান কার্যালয় গ্রীণ হিলে পাঠানো হয় এছাড়া মামলার তদন্তকারী অফিসার (আইও) তার মোবাইল ফোনটি জব্দ করে আইও জিম্মায় নিয়ে গেছেন এবং আপত্তিকর ভিডিওটি আমার মোবাইলেও ছিলো যা পুলিশ খুজে পেয়েছেন, বলে স্বীকার করে অমর শান্তি চাকমা।
বরকল থানায় গত ২২ জুন-২০২০ তারিখ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ (২)/ ২৫ (২)/ ২৯/ ৩০/ ৩১ (২)/ ৩৫ (২) ২০১৮ ধারায় দায়ের করা উল্লেখিত ৫ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মো. কামাল হোসেন সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, তিনি আরেকটি মামলার স্বাক্ষী দিতে মেহেরপুর জেলায় রয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী ১লা নভেম্বর এ মামলার ৯০ কর্মদিবস পূর্ণ হবে। ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।