রবিবার ● ২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » গাজীপুরে ডাকাত সন্দেহে প্রতিবন্ধীকে গণধোলাই
গাজীপুরে ডাকাত সন্দেহে প্রতিবন্ধীকে গণধোলাই
গাজীপুর প্রতিনিধি :: গাজীপুরের কালীগঞ্জে ডাকাত সন্দেহে মোঃ আতিকুর রহমার (৩০) নামে এক প্রতিবন্ধী যুবককে গণধোলাই দেয়া হয়েছে৷ ১৯ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার রাতে উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের আড়াবান্দাখোলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে৷
বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী আতিক নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে৷
এলাকাবাসী জানায়, গত সাত মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২০/২২টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে৷ আর এ কারণে উপজেলার সর্বত্র সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের ডাকাত আতঙ্ক বিরাজ করছে৷ রাতে কোনো মানুষ দেখলেই ডাকাত বলে সন্দেহ হয়৷ আর সেই সন্দেহের রোষানলে পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে প্রতিবন্ধী আতিক৷
বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে পুরুষ ওয়াডের্র কেবিনে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন যুবক আতিকুর রহমার৷ দরিদ্র পরিবারের সন্তান আতিক হাসপাতালের বেডে কাতরালেও সুচিকিত্সা করার সামর্থ নেই৷
কালীগঞ্জে এভাবে একের পর এক ডাকাতি হতে থাকলে উপজেলাবাসীর মনে যে ডাকাত আতঙ্ক কাজ করছে তাতে আরো যে কোনো ধরনের বড় বিপদ ঘটতে পারে৷ তাই অনতিবিলম্বে থানা পুলিশের আরো আন্তরিকতা কামনা করেন স্থানীয়রা৷
আতিকের মা মিনারা বেগম জানান, তিন মেয়ে আর এক ছেলের মধ্যে আতিক সবার ছোট এবং বুদ্ধি -প্রতিবন্ধী৷ স্বামী কফিল উদ্দিনও বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী কোনো কিছুই করতে পারেনা৷ তিনি নিজেই রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন৷ ছেলের চিকিত্সা করাতে পারেন না৷ তাই বেশির ভাগ সময় পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন৷ ওই দিন একটু ভালো দেখে তার পায়ের শিকল খুলে দেন ৷
আতিকের চাচাত ভাই নুরুজ্জামান জানান, নদী সাঁতরিয়ে কালীগঞ্জে গিয়ে ওই দিন রাতে উপজেলার আড়াবান্দাখোলা গ্রামের মৃত পাগালি রায়ের ছেলে করুণা রায়ের বাড়িতে পানি চাইতে গেলে ওই বাড়ির মহিলারা ডাকাত বলে চিত্কার-চেচামেচি করে৷ পরে এলাকার লোকজন তাকে ডাকাত মনে করে অমানবিকভাবে মারধর করে পুলিশে খবর দেয়৷
পরে উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মোঃ শফিকুল ইসলাম তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন৷ বর্তমানে সে হাসপাতালের বেডে সু-চিকিত্সার অভাবে ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ৷ আতিকের নামে ওই বাড়িওয়ালা বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়৷ পরে ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যানের হস্থক্ষেপে তা বন্ধ করা হয়৷
ডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল হোসেন জানান, আতিক একজন প্রতিবন্ধী এবং দরিদ্র যুবক৷ আমি নিজে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দিয়েছি৷ তবে ওর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে সত্যি খুব অমানবিক৷
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মোঃ ফরিদ উদ্দিন জানান, আতিকের মায়ের আবেদন এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের হস্তক্ষেপে তাকে পরিবারের হেফাজতে দেয়া হয়েছে৷