সোমবার ● ১৬ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » কৃষি » দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেশীয় অর্ধশত প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব বিলীন
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেশীয় অর্ধশত প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব বিলীন
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেশীয় অর্ধশত প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। এখন আর পুকুর ভরা মাছ নেই। জলবায়ুর পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসচেতনতা, অবাধে লবণ পানি তুলে বাগদা চিংড়ি চাষ, ফসলের ক্ষেতে ক্ষতিকর কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের যথেচ্ছা ব্যবহার এবং মিঠাপানির অভাবে মৎস্য খনি খ্যাত দক্ষিণাঞ্চলে অর্ধশত প্রজাতির মিঠাপানির দেশীয় মাছের অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। সুস্বাদু দেশীয় মাছ এখন আর তেমন মিলছে না।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার শহর বন্দর গ্রামে গঞ্জে সর্বত্রই দেশীয় মাছের চরম সংকট। যা পাওয়া যায় তার অগ্নিমূল্য। বিগত দিনে সরকারের উদাসিনতা, মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবসম্মত সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণের অভাব এবং যে সকল প্রকল্প ও কর্মকাণ্ড হাতে নেয়া হয়েছিল তার যথাযত বাস্তবায়ন না করায় এ সেক্টরটি ‘শিকেয়’ উঠেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মৎস্য অধিদপ্তর এবং কয়েকটি এনজিও এসব বিষয়ে কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে তাও যৎ সামান্য। জন সচেতনতা তৈরিতে দায়িত্বশীলরা এগিয়ে আসছে না।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, কয়েক দশক পূর্বেও এ অঞ্চলে আড়াইশত প্রজাতির মিঠাপানির মাছ ছিল। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব মাছের অনেক প্রজাতি এখন চোখে পড়ে না। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমের সময় নদী-খাল-বিল থেকে কারেন্ট জালের মাধ্যমে ব্যাপকহারে ডিমওয়ালা মাছ ধরার কারণে দেশীয় মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কালের গর্ভে মাছে-ভাতে বাঙালির ঐতিহ্য আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দুই দশক পূর্বেও বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মংলার, রামপাল, খুলনার রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, কয়রা ও ফুলতলা এবং খুলনা সন্নিকটস্থ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় আড়াইশ প্রজাতির মিঠাপানির মাছ পাওয়া যেত। যার মধ্যে শোল, টাকি, কৈ, গজাল, টেংরা, চিতল, শিং, খয়রা, বাটা, পাইশ্যা, কালিবাউশ, বাইল্যা, কাজলি, সরপুঁটি, পাবদা, খৈলশা, ডগরি, জাবা, ভোলা, বাগাড়, বাশপাতা, ভাঙ্গান, কাইন, দেশী পুঁটি, গোদা চিংড়িসহ অর্ধশত প্রজাতির মিঠাপানির মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এ সকল মাছ স্বাদে ও পুষ্টি গুনে ছিল ভরপুর। এ অঞ্চলের গ্রামে-গঞ্জের কয়েকশ’ হাওড় বাওড়, বিল, খাল নদী থেকে এসকল মাছ সংগ্রহ করতো জেলে সম্প্রদায়। সারা বছর তারা মৎস শিকার করে নিজ পরিবারের চাহিদাপূরণ সহ জীবিকা নির্বাহ করত। শুষ্ক মৌসুমে খাল বিল হাওরের পানি কমে গেলে চলত মাছ ধরার উৎসব।
বর্ষা মৌসুমের পূর্বে এপ্রিল মাস থেকে খালে বিল নদীতে মাছ ডিম্ব নিঃস্বরণ শুরু করে। কারেন্ট জালের ব্যাপকতায় খাল, বিল নদীতে এ মাছের রেনু ধরা পড়ে মাছের প্রজনন প্রচণ্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জালে ধরা পড়ে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার রেনু মাছ।
পরিবেশ ও মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য প্রজাতি বিলুপ্তির কারণ হচ্ছে- অপরিকল্পিততভাবে জলাধারে বাধ দেয়ায় ভরা বর্ষা মৌসুমে ডিম ছাড়ার মা মাছ আসতে বাধা পায়। মাছের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা তদুপরি খাল, বিল, হাওর, বাঁওড়গুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে আসার কারণে মাছের বংশ বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন কারণে পানি দূষণ জলাশয়ের গভীররা হ্রাস, ছোট মাছ ধরার জন্য কারেন্ট জালের ব্যবহারের কারণেও মাছে প্রজাতি ধ্বংস হচ্ছে। মারাত্মক পানি দূষণের কারণে আজ খুলনার ময়ূর নদী মাছের বংশ বৃদ্ধি ও জীবনধারণের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য বাধ দিয়ে লোনা পানির আধার নির্মাণের কারণে অনেক প্রজাতির মিঠাপানির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে মৎস্যজীবী তথা সর্বসাধারণকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ ও মৎস্য সংরক্ষণ আইনের সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করণের মাধ্যমেই সম্ভব।
সুন্দরবন উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে. দামও বেশ সস্তা
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির :: সুন্দরবন উপকূলীয় নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। দামও বেশ সস্তা । ইলিশের মধ্যে অধিকাংশই ডিমওয়ালা মাছ।জেলে পল্লীর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মুখে ফুটছে আনন্দের হাসি । অথচ সাগরে মাছধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে আরো ৭ দিন পর, অর্থাৎ ১২ অক্টোবর থেকে। অথচ সাগরে মাছধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য।এরমধ্যে গত দুইদিন ধরে প্রায় ৮০ মেট্রিন টন করে ইলিশ রাজধানী ঢাকা, উত্তাঞ্চল উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রায় ২৫ দিন ধরে সুন্দরবন উপকূল সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে বিপুল পরিমাণ ইলিশ। তবে ধরা পড়া ইলিশের মধ্যে শতকরা নব্বই ভাগই ডিমওয়ালা মাছ। এরআগেই ইলিশের দল ডিম ছেড়ে গভীর সাগরের দিকে চলে যাবে।
অথবা জেলেদের জালে আটকা পড়ে মানুষের উদরে চলে যাবে। ইলিশের দল ডিম ছাড়ার জন্য যখন নদী মোহনার দিকে আসছে, তখন মাছধরা নিষিদ্ধ করা হল না কেন- প্রশ্ন তাদের। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী ড. ম কবির আহমদ বলেন- দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষা এবং প্রাচুর্য বৃদ্ধির জন্য মাছের প্রজনন মৌসুমের সঠিক সময় নির্ধারণ করতে হবে। সঠিক সময় নির্বাচনে ব্যর্থ হলে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়ে যাবে।
মওসুমের প্রথম দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছিল হাজার হাজার জেলে। কিন্তু অবশেষে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় । সাগর ও নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় বাগেরহাট প্রধান মৎস্য আড়ত কেবি বাজার চত্বরে দেখা যায় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। গত কয়েকদিন অন্তত অর্ধশত ট্রলার বোঝাই করে এ মৎস্য বাজারে এসেছে ইলিশ। মৎস্য ব্যবসায়ীদের আশা সাগরে এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে গত বছরের ধার দেনা পরিশোধ করে তারা লাভের মুখ দেখতে পারবেন
এদিকে নদীতে এবার প্রতিবছরের চেয়ে বেশি ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে।মোড়েলগঞ্জ গ্রামের জেলে রফিকুল বলেন, দাদনের বোঝা ও সংসারের ঘানিতে গত কয়েক বছর ধরে জেলেরা দুঃসহ জীবন-যাপন করে আসছেন। এবার নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ পাওয়ায় তারা আনন্দে আত্মহারা। বাজারের ইলিশ মাছের দামও বেশ চড়া থাকায় জেলে পরিবারের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রায় এক হাজার জেলে এখানকার নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। মাছ ধরা ও বিক্রি করাই তাদের পেশা।
বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, কয়েকজন প্রবীন ব্যাক্তি জানিয়েছেন, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীতে কয়েক বছর ধরে নদীতে মাছ কম পাওয়ার কারণে জেলেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে হতাশা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছিলেন। এবার যেভাবে জেলেদের জালে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে এটি অব্যাহত থাকলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এবারের জেলেদের জালে ধরা পড়া প্রতিটি ইলিশ মাছের ওজন চারশ’ গ্রাম থেকে এক কেজির ওপরে।
মোড়েলগঞ্জ পানগুছি নদীর পাড়ে ইলিশ কিনতে নদীতে এবার প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ইলিশ মাছ কিনতে নদীর পাড়ে আসছেন।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীর পাড়ে ইলিশ কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ মাছ। এ খবর শুনে টাটকা ইলিশ কিনতে এখানে এসেছি। তিনি জানান, আগেও এখান থেকে ইলিশ কিনেছেন। এ মাছের স্বাদ সাগরে ইলিশের চেয়ে কম নয়।
তিনি আরও বলেন, এতো কাছ থেকে ইলিশ মাছ ধরা দেখা যায় বলে অনেক দূর থেকে অনেকেই দেখতে আসেন।
এতে স্থানীয় বাজার সমুদ্রের ইলিশ ছাড়াই নদীর ইলিশে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় সব ধরনের ইলিশ জালে ধরা পড়ায় দামও অনেক কমে এসেছে। ফলে সব শ্রেণীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে এসেছে ইলিশ। তিনি বলেন, নদীর ঘাট থেকে ৪-৫টায় কেজি এ রকম ইলিশ ৩শ’ টাকায় এবং ৮শ’ থেকে ৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কম দামে পেয়ে অনেকেই মাছ কিনে ফ্রিজিং করছেন ও লবণ দিয়ে রাখছেন।
জলেরা জানান, যারা জ্যান্ত ইলিশ দেখতে আসেন তারা অনেকেই এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান। মোড়েলগঞ্জ পানগুছি নদীর জেলেআবুল হোসেন জানান, কারেন্ট ও বেহেন্দি জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ, মা ইলিশ সংরক্ষণ এবং জাটকা নিধন বন্ধ হওয়ায় এবার ইলিশের প্রজনন বেড়েছে। যার কারণে নদীতেও এবার ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। তারা আরও জানান, এবছর মাছ ধরতে বনদস্যু বা জলদস্যুর ইলিশ লুট ও জেলেদের জিম্মি করার মতো ঘটনা ঘটেনি। মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা অনেকটা নিরাপদ ও নির্বিঘেœ মাছ নিয়ে আসতে পারছেন। তবে মাঝেমধ্যে পুলিশকে কিছু দিতে হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।
অপরদিকে বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য আড়ত কেবি বাজারে আসতে শুরু করেছে সাগরে ইলিশ মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারগুলো। আর ফিরে আসা এ মাছধরা ট্রলারগুলো থেকে নামানো হচ্ছে প্রচুর ইলিশ। তাই এবার ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভিতরে থাকবে বলে আশা করছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়া ও দাম অনেকটা কম থাকায় সব শ্রেণীর ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে থেকে ক্রয় করছেন ইলিশ।
বাগেরহাটের প্রধান মৎস্য বন্দর কেবি বাজার গিয়ে দেখা গেছে, দড়াটানা নদীতে ইলিশ নিয়ে নোঙর করে রয়েছে বেশ কিছু ইলিশ বোঝাই ট্রলার। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় এ মৎস্য বন্দরের কার্যক্রম। প্রথমে নদীর ঘাটে ভেড়ানো ট্রলার থেকে ঝাঁকা বোঝাই করে নামানো হয় ইলিশ। সকাল সাড়ে ৬টায় ঘন্টা বাজিয়ে ইলিশ পাইকারীভাবে বেচা-কেনার ডাক শুরু হয়। সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে ইলিশের পাইকারী বেচাকেনা। প্রতিদিনই প্রায় কয়েক টন ইলিশ বিক্রি হয় এ বাজারে। লেনদেন হয় কয়েক কোটি টাকার। ইলিশের দাম কমসহ অধিক মাছধরা পড়ায় এ মওসুমের শুরুতেই পাইকারী বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও তাই বেশী। ইলিশের আমদানীর খবর শুনে বেশ কিছু পাইকাররা ভিড় করছে এই কেবি বাজার মৎস্য কেন্দ্রে। তারা মোটামুটি বড় ছাইজের ইলিশ বেশি দামের আশায় এখান থেকে কিনে উত্তাঞ্চলসহ রাজধানী ঢাকায় পাঠাচ্ছে ককসিটে করে। অবশ্য বেশ কয়েক বছর আগেও প্রতিদিন এ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে ১৫/২০টি ট্রাক বোঝাই করে ইলিশ যেত বিভিন্ন জেলায়। এখনও ত বেশি। তাই ট্রাকের পরিবর্তে ককসিটে মাছ মজুদ করে সীমিত আকারে যাচ্ছে অন্য জেলাগুলিতে।
গত কয়েক দিন ধরে কেবি বাজারে প্রচুর ইলিশ এসেছে এমন খবর শুনে অনেক খুচরা ক্রেতারা সেখানে ছুটে যান। ৬/৭ জনের এক একটি গ্রুপ করে কেউ একপোন কেউ বা দুই পোন ইলিশ পাইকারী দরে কিনে পরে ভাগ করে নিয়েছেন। এ বাজারের মাছ খুচরা বিক্রির সুযোগ না থাকায় অল্প আয়ের মানুষ প্রধান বাজারে না গিয়ে অনেকটা কম দামে দলবদ্ধভাবে এভাবে টাটকা ইলিশ কিনে থাকেন। তবে উদ্বেগের কথা এ সুযোগে সুকৌশলী পাইকাররা মাছ বিক্রির সময়ে বেশিডাক হেঁকে নতুন ক্রেতাদের বিপাকে ফেলে থাকে। তাছাড়া ওই বাজারে আবার অনেকেই পাইকারী মাছ কিনে তা বেশিদামে কিছু পরে এসকল ক্ষুদ্র ক্রেতাদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে থাকে।
মূলত সাগরে সম্প্রতি নিম্ন চাপের প্রভাবে অন্য এলাকার বেশ কিছু ট্রলার মাছ বিক্রির জন্য এই মৎস্য বাজারে আসে। অতিথি ট্রলারের কারণে কেবি বাজারের আড়তগুলোতে দীর্ঘদিন পর ইলিশের স্তূপ দেখা গেছে। ইলিশের এ ধরনের বেচাকেনায় বাগেরহাটের কয়েকশত জেলে ও মহাজনরা তাই ক’দিন ব্যস্ত সময়ও পার করেছেন। এই সময়ে এখানকার কোনো কোনো মাছ বিক্রেতা কেবি বাজার থেকে মাছ কিনে বাড়ি বাড়ি গিয়েও ফেরি করে ইলিশ মাছ বিক্রি করেছেন।
কেবি বাজারের আড়ৎদার মো. সিরাজ উদ্দিন শাহিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মূলত এই মৎস্য আড়তের সকল ব্যবসায়ীরা দাদনের মাধ্যমে প্রায় সারা বছর ব্যবসা করে থাকে। ফলে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া নির্ধারিত ট্রলার ছাড়া অন্য এলাকার ট্রলারের মাছ এখানে আসে না। তবে কয়েক দিন আগে নিম্ন চাপের কারণে সাগরে মাছ ধরারত অসংখ্য ট্রলার বাগেরহাটের কেবি বাজারে মাছ বিক্রি করেছে। অনেকটা বিপদে পড়েই তারা এখানে মাছ বিক্রি করেছে। যার ফলে বাজারে হঠাৎ করে মাছের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। ট্রলারে মাছ নষ্ট হবার ভয়ে ও ট্রলারের তেল খরচের কথা বিবেচনা করেই ওই সকল অতিথি ট্রলার থেকে মাছ পাওয়া গেছে কিছুটা কম দামে।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর সাগরে মাছধরা পড়ছে বেশি। এবছর মাছের সাইজ খুব বড় না হলেও মাঝারি ও ছোট সাইজের মাছের বেচাকেনা বেশ ভালই। বাজারে ছোট সাইজের এক পোন (৮০ পিচ ইলিশ ) ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর মাঝারি সাইজের এক পোন ইলিশ ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকার বেচা কেনা হয়েছে। তিনি জানান, বড় সাইজের ইলিশ তেমন না আসায় দামও তেমন উঠছে না। তারপরও সাগরে এভাবে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়লে তাদের বিগত বছরের লোকসান পুশিয়ে উঠতে পারবে বলে অনেক মৎসজীবীরা আশা করেন।
এদিকে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকায় পাইকারী বাজার থেকে কেনা এক পোন (৮০টি) ইলিশ খুচরা বাজারে কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকায়। আর ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকায় কেনা মাঝারি সাইজের ইলিশ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকায় প্রতি কেজি। তবে এর মধ্যে অতিথি ট্রলারের কারণে খুচরা বাজারে ছোট সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি সাড়ে ৩শ’ বা তার কমেও বিক্রি হয়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ ঘটা করেই কয়েক দিন বাজার থেকে ইলিশ কিনেছে।
এ ব্যাপারে উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী, মওসুমের শেষের দিকে হলেও অবশেষে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। ফলে অনেক জেলেদের মাঝে দেখা দিয়েছে স্বস্তি। মৎস্যজীবীদের এ নেতা বলেন, সাগরে দস্যুতা বন্ধে প্রশাসনের কড়া নজরদারি অব্যাহত থাকলে আর এভাবে ইলিশ ধরা পড়ে তাহলে জেলেসহ এ কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ী তাদের লোকসান পুশিয়ে নিতে পারবে।