শনিবার ● ২১ নভেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » সুন্দরবনের নিষিদ্ধ সুন্দরী কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরী
সুন্দরবনের নিষিদ্ধ সুন্দরী কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরী
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের লীলাভূমি সুন্দরবন।বাগেরহাটের সুন্দরবনের এক শ্রেণির অসাধু বন-কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজসে বন সংলগ্ন এলাকার বিভিন্নস্থানে নৌকা তৈরীতে কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে । সম্প্রতি উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর (রসুলপুর) এলাকার বাসিন্দা গোলপাতা ব্যবসায়ী মো. আফজাল হোসেন চাপরাশীর নির্মাণাধীন একটি নৌকায় প্রকাশ্যে কিছু সুন্দরী কাঠের ব্যাবহার দেখে স্থানীয় কতিপয় বাসিন্দারা বন-বিভাগকে অবহিত করেন। সরেজমিনে দেখা যায়, আসন্ন গোলপাতা মৌসুমকে সামনে রেখে পুর্ব সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জের আওতাধীন ভরাট হওয়া ভোলা নদীর তীর সংলগ্ন দাসের ভাড়ানি টহল ফাঁড়ির সামনে উপজেলার একাধিক ব্যবসায়ীর পুরাতন নৌকা মেরামতে অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। নৌকা তৈরীতে নিষিদ্ধ সুন্দরী কাঠের ব্যবহারের বিষয় জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই শ্রমিক বলেন, মালিকরা মালামাল সরবারহ করেন আমরা শুধু নৌকা তৈরীর কাজ করি। সে ক্ষেত্রে কে কোন কাঠ দিল তা আমাদের দেখার বিষয় না। কারণ আমরা শ্রমিকরা কাজ করি দিন শেষে মজুরি পাই। সে ক্ষেত্রে সুন্দরী কাঠ দিলেও আমরা বাঁধা দিতে পারি না। তাছাড়া এখানে বন-বিভাগের একটি অফিস আছে। নৌকা তৈরীর ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম হলে বাঁধা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের। অপরদিকে নাম গোপন রাখার শর্তে, বন সংলগ্ন এলাকার কয়েক জনবাসিন্দা বলেন, আফজাল চাপরাশী দাসের ভাড়ানী টহল ফাঁড়িসহ বন-বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীকে ম্যানেজ করে বিশাল আকৃতির ওই নৌকায় অনেক সুন্দরী কাঠ ব্যবহার করলেও বনরক্ষীরা তা দেখেও তা না দেখার ভান করে চলছেন। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী মো. আফজাল হোসেন চাপরাশী বলেন, আমাকে না জানিয়ে আমার নৌকাটির মধ্যে ৩/৪ টুকরা পুরাতন সুন্দরী কাঠ শ্রমিকরা লাগিয়ে ফেলেছে। তবে বন-বিভাগের সাথে কথা হয়েছে ২-৩ দিনের মধ্যে ওই কাঠ খুলে তাদের কাছে দেওয়া হবে। অন্যদিকে, দাসের ভাড়ানী টহল ফাড়ির (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. ইউনুস আলী জানান, যোগসাজশের বিষয়টি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। তবে নৌকাটিতে কিছু কাঠ আছে তা আফজাল নিজেই স্বীকার করেছেন। তাছাড়া তিনি দু’দিন সময় নিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে কাঠগুলো খুলে দিবেন। সে ক্ষেত্রে কোন তালবাহানা করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের লীলাভূমি সুন্দরবনের বুকে বঙ্গবন্ধু’র চর আরেক হাতছানি
বাগেরহাট :: বিশ্বের প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের লীলাভূমি সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল।বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধু’র চর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে সেখানে একটি টহল ফাঁড়ি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চরটির ওপর একটি সার্ভে করারও উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু’র চরটি বেশ দুর্গম। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ সেখানে যেতে চান না। সচিব হিসেবে জিয়াউল হাসান প্রথম চরটি পরিদর্শন করে চরের ভূ-প্রকৃতি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। চরটিতে যেন জীববৈচিত্রে পরিবেশ অক্ষুন্ন থাকে ও কেউ ক্ষতিসাধন করতে না পারে এ কারণে সেখানে একটি টহল ফাঁড়ি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার ওই নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে একটি ফাঁড়ি করার কাযক্রম চলছে।
এদিকে, গত ১৪ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু’র চর পরিদর্শন করেন। সচিব পদ মর্যাদার কোন কর্মকর্তা প্রথম চরটি পরিদর্শন করলেন। চরটিতে যেন জীববৈচিত্রে পরিবেশ অক্ষুন্ন থাকে এবং কেউ যেন ক্ষতিসাধন করতে না পাওে সে জন্য সেখানে একটি টহল ফাঁড়ি করার নির্দেশ দেন তিনি।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, জেগে ওঠা চরটিতে ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ জন্ম নিচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের বন্য পশুপাখিরও বিচরণ দেখা গেছে। এ কারণে সেটি সংরক্ষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ফাঁড়ি স্থাপিত হলে ওই চরের জীববৈচিত্র রক্ষা ও বনের পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হবে।
বন বিভাগের সূত্র জানান, সুন্দরবনের সর্বশেষ সীমানা থেকে প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার দূরের এ চরটি সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রের আওতার মধ্যে পড়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে চরটি বন বিভাগের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর থেকেই সেখানে নিয়মিত তদারকি করে যাচ্ছে বন বিভাগ।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর চরের আয়তন প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার। তবে প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে সেটির আয়তন আরও বাড়বে। ইতোমধ্যেই চরটিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নজর পড়েছে। ওই সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের স্টেশন ও ট্যুরিস্ট স্পট করার প্রস্তাবনা দিয়েছে। তবে এই মুহুর্তে ওই চরকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। আর বিরক্ত না করলে সেটিও হয়ে উঠবে বঙ্গোপসাগরের বুকে আরেকটি সুন্দরবন।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. আবু সালেহ বলেন, ইতোমধ্যেই বঙ্গবন্ধুর চরে ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মাতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে চরটি হয়ে উঠছে সুন্দরবনের অংশ। কেউ যেন ওই বনের ক্ষতি করতে না পারে এ কারণে সেখানে টহল ফাঁড়ি করা হবে। আগেও স্থানটি বন বিভাগের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রের আওতায় সেটি তদারক করা হতো। চরে স্থাপিত ফাঁড়িটিও ওই কাযালয়ের আওতায় থাকবে।
প্রসঙ্গত, চরটির নামকরণ ‘বঙ্গবন্ধু’র চর’ কে বা কারা কবে করেছে তা বলতে পারেন না বন কর্মকর্তারা। তবে তাঁরা শুনেছেন জেলেরাই প্রথম চরটির অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। এরপর কেউ হয়ত চরটির নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর চর। সেই থেকে চরটি ওই নামেই পরিচিতি পেয়েছে।