সোমবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহীদ দিবস পালিত
গাজীপুরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহীদ দিবস পালিত
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ৮.১০মিঃ) গাজীপুরে প্রতি বছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মহান একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে ৷ এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে৷
২০ ফেব্রুয়ারি শনিবার দিবাগত রাতে একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে নগরীর ভাওয়াল রাজবাড়ি মাঠের দক্ষিণ পাশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে গাজীপুর বাসীর পক্ষ থেকে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান জেলা প্রশাসক এস. এম. আলম৷ এ সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাহেনুল ইসলাম ও তার অন্যান্য সহকর্মী উপস্থিত ছিলেন ৷
এর পরই শ্রদ্ধা জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদ৷ এরপর একে একে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান গাজীপুর সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে প্রচার সম্পাদক এডভোকেট মনজুর মোর্শেদ প্রিন্স, জেলা জাকের পার্টি, জেলা আনসার-ভিডিপি, গাজীপুর প্রেসক্লাব এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান৷
২১ ফেব্রুয়ারি রবিবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নগর ও জেলার সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়৷ শহরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় জামে মসজিদসহ নগর ও জেলার বিভিন্ন মসজিদে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় করা হয় বিশেষ দোয়া ৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অমর একুশের দিনে দুপুরে নলজানিতে অবস্থিত শহীদ বরকতের মায়ের কবর জিয়ারত করা হয় ৷ এদিন সন্ধ্যায় নাটমন্দিরে ‘৫২এর ভাষা আন্দোলনের ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়৷ আলোচনাসভায় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় ভাষা আন্দোলনের শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরদের ৷
আলোচনাসভায় বক্তারা বলেন, আমাদের বিশ্ব স্বীকৃতির সূত্রপাত হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকেই৷ আর বঙ্গবন্ধু এর সূচনা করেছিলেন ৷ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে তার প্রথম ভাষণ বাংলায় দিয়ে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন৷ এরই ফলে পরবর্তীতে নানা প্রচেষ্টায় একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি লাভ করে৷ এছাড়াও ভাষা আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সংগঠক প্রফেসর আবুল কাশেম থেকে শুরু করে ভাষা সৈনিক মোহাম্মদ তোয়াহা, আব্দুল মতিন, গাজীউল হক, অলি আহাদ, শামসুল আলম, গোলাম মওলা, আবদুল গফুর, আনোয়ারুল হক খান, আলী আজমল, ইব্রাহিম তাহাসহ ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী জানা-অজানা সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়৷
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে জেলা ও নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানে নির্মিত শহীদ মিনারের বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয় ৷ একুশের প্রভাতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অগণিত মানুষের ঢল নামে গাজীপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৷ নগরীর সকল পথেই খালি পায়ে ফুল হাতে মানুষের মিছিল ছুটে আসতে থাকে শহীদ মিনারের দিকে৷ তাদের কন্ঠে ধ্বনিত হয় ‘আমার ভাইয়ের রক্তের রাঙানো একুশে ফেব্রম্নয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’৷
দিবসটিতে গাজীপুরস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও অনুরূপ কর্মসূচি পালিত হয়৷
এ দিকে দিবসটি উপলক্ষে ভাষাশহীদ আবুল বরকতের পরিবারের সদস্যরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নলজানী এলাকায় বরকতের মা হাসিনা বানুর কবরের পাশে রবিবার দিনভর কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং কাঙালি ভোজের আয়োজন করেন৷ দিবসটি উপলক্ষে রবিবার ভোর থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নলজানী এলাকায় ভাষাশহীদ বরকতের মা হাসিনা বানুর কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও শিল্প-কারখানার হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, নারী, পুরুষ, শিশু ও শ্রমিকদের ঢল নামে৷
শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি রবিবার ইকবাল সিদ্দিকী এডুকেশন সোসাইটির উদ্যোগে দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ, প্রভাতফেরি, শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ, সুন্দর বাংলা হাতের লেখা প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়৷
কালীগঞ্জে অব্যবস্থাপনার কারণে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আগতরা দুর্ভোগে পড়েন ৷ শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার সাথে সাথে সেগুলো কুড়িয়ে নিতে একদল উচ্ছৃঙ্খল তরুণ ও কিশোরদের হুড়াহুড়িতে নারী-শিশুসহ আগতরা বিড়ম্বনায় পড়েন ও নাজেহাল হন৷
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার কালীগঞ্জে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে উপজেলা চত্বরে শিশুমেলা আইডিয়াল স্কুলে অমর একুশের উপর শিশুদের উন্মুক্ত চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ পরে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়৷ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পির সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুল আহ্সান তালুকদার৷
টঙ্গীতে মাতৃ ভাষা দিবস উপলক্ষে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা টঙ্গী ক্যাম্পাসে ২১ ফেব্রম্নয়ারি রবিবার সকালে ছাত্রদের কুচকাওয়াজ, কুরআন তিলাওয়াত, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা মিজানুর রহমান, ছাত্রদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন মো. মনির হোসাইন৷ আলোচনা শেষে মুনাজাত করেন ড. মোয়াজ্জেম হোসেন আল-আজহারী ৷
অপর দিকে টঙ্গীর এরশাদ নগরে ক্রিয়েশন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ফ্রি ডায়াবেটিকস পরীা ও সুন্নতে খত্না ক্যাম্পেইন করে ৷ এতে সহায়তা করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ৷ ক্যাম্পেইনে বিনামূল্যে ৩০০ জনের ডায়াবেটিকস পরীৰা করা হয় এবং ১৫০ শিশুর সুন্নতে খত্না করানো হয় ৷ এসব শিশুকে ওষুধ, লুঙ্গি, চকোলেট, বিস্কিট ইত্যাদি দেয়া হয় ৷
কালিয়াকৈরে যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও জাতীয় শহীদ দিবস পালিত হয়েছে ৷
২১শের প্রথম প্রহরে কালিয়াকৈর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচী শুরু করা হয় ৷
২১ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকালে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও সংগঠনের উদ্যোগে আলোচনা সভাসহ নানা প্রকার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি উদ্যাপন করে৷
দিবসটি উপলক্ষে উপজেলার কালামপুর প্রি-ক্যাডেট স্কুল, ভারটেক্স একাডেমিক স্কুল, ফুলকুড়ি কলেজিয়েট স্কুল, চান্দরা আইডিয়াল স্কুল, সফিপুর আইডিয়াল স্কুল সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রভাতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলী, কবিতা আবৃত্তি, দেশাত্ববোধক গানের আয়োজনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে৷
দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা আওয়মীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন৷
এছাড়া উপজেলার কারুল সুরিচালা এলাকায় সবুজ বাংলা স্পোর্টিং ক্লাব-এর উদ্যোগে কারল সুরিচালা টি-টোয়েন্টি প্রিমিয়ার লীগের উদ্বোধন করা হয়৷
কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. জসিম আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে খেলার অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কালিয়াকৈর পৌর যুবলীগের সভাপতি মোঃ আতাউর রহমান জয়৷
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কালিয়াকৈর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক মো. সাঈদ সরকার, সবুজ বাংলা স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি আরিফুল ইসলাম,সাধারন সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হেসেন প্রমূখ৷
এছাড়াও জেলার শ্রীপুর, কাপাসিয়ায় গভীর শ্রদ্ধার সাথে অমর একুশে পালিত হয়েছে৷