বুধবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » গুনীজন » ৪ ডিসেম্বর চাষাঢ়া শহীদ মিনারে কমরেড মিনুর শোকসভা
৪ ডিসেম্বর চাষাঢ়া শহীদ মিনারে কমরেড মিনুর শোকসভা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা আজীবন বিপ্লবী জননেতা কমরেড গোলাম ইয়াজদানী খান মিনুর স্মরণে আগামী ৪ ডিসেম্বর ২০২০ শুক্রবার বিকেল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে।
শোকসভাতে উপস্থিত থাকার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষনেতা জননেতা কমরেড সাইফুল হক। বক্তব্য রাখবেন পার্টির কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরোর সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জননেতা কমরেড আবু হাসান টিপু, পার্টির কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা কমরেড সহিদুল আলম নাননু, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক নারীনেত্রী রাশিদা বেগমসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত: কমরেড গোলাম ইয়াজদানী খান মিনু গত ১২ নভেম্বর বৃহ¯পতিবার সকাল ৯ টা ১৭ মিনিটে ব্রেনষ্ট্রোকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। রেখে গেছেন স্ত্রী ও তিন কন্যাসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী।
প্রয়াত এই বামনেতা ১৯৬৫ সালে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। কিছু দিন পর পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন বিভক্ত হলে তিনি ছাত্র ইউনিয়ন মেনন গ্রুপের সাথে যুক্ত থাকেন। ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি বিভক্ত হলে তিনি পার্টি কর্মী হিসেবে পিকিংপন্থী অংশে থাকেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এম এল) বিভক্ত হয়। সুখেন্দু দস্তিদার ও মোহাম্মদ তোয়াহা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকেন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অপর অংশ আব্দুল হকের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ স¤পর্কে দুই কুকুরের কামড়াকামড়ি বলে পাকিস্তানের ঐক্য রক্ষার আহ্বান জানান। কমরেড মিনু ছিলেন সুখেন্দু দস্তিদার ও মোহাম্মদ তোয়াহার পক্ষে।
মুক্তিযুদ্ধের পর সুখেন্দু দস্তিদার ও মোহাম্মদ তোয়াহা সাম্যবাদী দল গঠন করলে কমরেড মিনু সাম্যবাদী দলের সাথে যুক্ত হন। এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৬ সালে কমিউনিস্ট লীগের সাথে ঐক্যবদ্ধ হন। ১৯৮৯ সালে কমিউনিস্ট লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টি (অমল সেন) ঐক্যবদ্ধ হলে গঠিত হয় ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ। এরপর ১৯৯২ সালে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সাম্যবাদী দল ও ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন) ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন হলে কমরেড মিনু ওয়ার্কার্স পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এবং একই সময়ে তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির লেজুড়বৃত্তির সুবিধাবাদী নেতৃত্ব যখন মৌলবাদ বিরোধী সংগ্রামের কথা বলে পার্টিকে আওয়ামী লীগের লেজুড়ে পরিণত করলো, যখন বাম ফ্রন্ট ও ১১ দলকে ছত্রভঙ্গ করে আওয়ামী লীগের সাথে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে তথাকথিত ২৩ দফার ভিত্তিতে প্রথমে ১৪ দলীয় জোট ও পরবর্তীতে স্বৈরতন্ত্রী এরশাদের জাতীয় পার্টি ও মৌলবাদী খেলাফত মজলিশসহ শাসকশ্রেণীর যাবতীয় জঞ্জালের সঙ্গে একাকার হয়ে গিয়ে ক্ষমতার ছিটেফোটা বখরা পাওয়ার মোহে মহাজোটে সামীল হয়ে নৌকায় উঠে বসার পরিকল্পনায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো ঠিক তখনই ২০০৪ এর ১৪ জুন বিপ্লবী রাজনীতি ও বিপ্লবী সত্তা রক্ষায় কেন্দ্র থেকে শুরু করে সারাদেশেই পার্টি পুনর্গঠনের যাত্রা শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিপ্লবী ভাবমানস সম্পন্ন পার্টির নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে নারায়ণগঞ্জেও গড়ে ঊঠে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (পুনর্গঠন কমিটি) যা আজকের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। এ পর্যায়ে কমরেড মিনু বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহন করেন। এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসাবে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বয়সের কারণে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তিনি গত কয়েক বছর ধরে সাংগঠনিক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও সহজ-সরল মানুষ। আজকের যুগে এত সহজ সরল সাহসী মানুষ পাওয়া সত্যিই বিরল।