শনিবার ● ৫ ডিসেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » শিরোনাম » ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস
৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: আজ ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাথা দিনগুলোর মধ্যে একটি দিন হল নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। তবে স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিবাহিত হলেও নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস কখনোই উৎযাপিত হয়না। চলতি বছরেও মুক্ত দিবসে নেই বড় ধরণের কোনো অনুষ্ঠান বা আয়োজন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্ত দিবসে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মান প্রদর্শনসহ নানা অনুষ্ঠান করা হয়। তবে নবীগঞ্জে এ দিবসে কোনো আয়োজন না থাকায় প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। তবে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এবার প্রথম এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পূর্বাকাশের সুর্যোদয়ের সাথে সাথেই মুক্তিযোদ্ধারা পাক-বাহিনীদের হটিয়ে দিয়ে মুক্ত করেছিলেন নবীগঞ্জ শহরকে। তিনদিনের সন্মুখ যুদ্ধের পর সেদিন সুর্যোদয়ের কিছুক্ষন আগে নবীগঞ্জ থানা সদর হতে পাকহানাদার বাহিণীকে সম্পূণরূপে বিতাড়িত করে মুহর্মুহ গুলি ও জয় বাংলা শ্লোগানের মধ্যে বীরদর্পে এগিয়ে আসে কয়েক হাজার মুক্তিকামী জনতা। এ সময় সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদীর নেতৃত্বে ও রশীদ বাহিনীর প্রধান মুর্শেদ জামান রশীদসহ মুক্তযোদ্ধারা থানা ভবনে উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। পরে স্থানীয় নবীগঞ্জ ডাকবাংলো সন্মুখে হাজার হাজার জনতার আনন্দে উদ্বেলিত ভালবাসায় সিক্ত মাহবুবুর রব সাদী আবেগ জড়িত কন্ঠে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যে বর্ননা করেন এবং ঐদিন বিকালে মুক্তিবাহিনীসহ সিলেট রওয়ানা দেন। ৬ই ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই মুক্তিযুদ্ধারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। বিভিন্ন সময় পাকবাহিনীর উপর গেরিলা হামলা চালিয়ে তাদের ভীত সন্ত্রস্থ করে রাখে মুক্তি সেনারা। কৌশলগত কারনে নবীগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধারা নবীগঞ্জ থানা দখলের সিদ্ধান্ত নেয়। নবীগঞ্জে পাক বাহিনীর অন্যতম ক্যাম্প নবীগঞ্জ থানাকে লক্ষ্য করে তিনদিকে মুক্তিযুদ্ধারা অবস্থান নেয়। ৩রা ডিসেম্বর রাত থেকে ক্ষনে ক্ষনে গুলি বিনিময় চলে উভয়ের মধ্যে। মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারনে ও আত্মরক্ষার্থে কখনোও পিছু হটা, আবার কখনোও আক্রমন চালিয়ে পাক বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে থাকে। সারাদেশে পাকবাহিনীর অবস্থান খারাপ হওয়ায় নবীগঞ্জেও তাদের খাদ্য এবং রসদ সরবরাহ কমে যায়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনী একেক সময়ে একেক দিক দিয়ে আক্রমন চালিয়ে যায়। ৪ ঠা ডিসেম্বর রাতে থানা ভবনের উত্তর দিকে রাজনগর গ্রামের নিকট থেকে মুক্তিযোদ্ধা রশিদ বাহিনী পাকবাহিনীর উপর প্রচন্ড আক্রমন চালায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর কিশোর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব ৪ঠা ডিসেম্বর শহীদ হন এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পরদিন ৫ ডিসেম্বর রাতে নবীগঞ্জ থানায় অবস্থিত পাকবাহিনী ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা চরগাঁও ও রাজাবাদ গ্রামের মধ্যবর্তী শাখা বরাক নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান নেয়। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী প্রচন্ড যুদ্ধের পর শক্র বাহিনী পালিয়ে যায়। পরদিন ৬ ই ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকবাহিনীর নিকট থেকে কোন বাধা না আসায় মুক্তিবাহিনী বীরদর্পে জয় বাংলা শ্লোগানের মধ্য দিয়ে নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গনে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জ উপজেলাকে পাকিস্তান মুক্ত ঘোষণা করেন। তবে স্বাধীনতার পর থেকে এইদিনটিকে পালনে নেয়া হয়না কোনো উদ্যোগ।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর অতিবাহিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাথা দিনটি পালনে কোনো আয়োজন না থাকার পেছনে উপজেলা প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে বলে দাবী মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের।
এ ব্যাপারে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী রশীদ বাহিনীর প্রধান মুর্শেদ জামান রশীদ বলেন, ৭১ এর নির্বাচনের পর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ভাষন ও নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি। এরপর টানা ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। এর আগে ৬ ডিসেম্বর কয়েক দফা গুলি বিনিময় শেষে পাক-হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে আমরা নবীগঞ্জকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নবীগঞ্জ স্বাধীন ঘোষণা করা হয়। তবে স্বাধীনতার এতবছর হয়ে গেলও নবীগঞ্জ মুক্তদিবস পালনে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে যা অত্যান্ত হতাশা জনক। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার দাবী নবীগঞ্জ মুক্তদিবস পালনে যাতে প্রশাসনসহ সবাই এগিয়ে আসে এবং প্রতিবছর যাতে মুক্তদিবস পালন করা হয় এ ব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করা হয়েছে।