শুক্রবার ● ১ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » গুনীজন » ডঃ আবু মাহমুদ এর জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি : সাইফুল হক
ডঃ আবু মাহমুদ এর জন্মশতবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি : সাইফুল হক
আজ প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডঃ আবু মাহমুদ এর জন্মশতবার্ষিকী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে তিনি আমার শিক্ষক ছিলেন। তিনি মাস্টার্স এ মার্কসবাদের উপর একটি কোর্স পড়াতেন। ছাত্র রাজনীতির ব্যস্ততায় মাঝেমধ্যে অন্য ক্লাস মিস করলেও স্যারের ক্লাস খুব একটা মিস করতাম না।তখনকার জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বন্ধুপ্রতীম আবুল হাসিব খানও স্যারের এই ক্লাসে তেমন অনুপস্থিত থাকতেন না।স্যার এর পড়ানোর ধরন ছিল অসাধারণ।স্যারের পড়ানো ছিল মাথা আর হ্রদয়ের যুগলবন্দী। কথা বলতেন একেবারে ভিতর থেকে।ছাত্র - ছাত্রীরা না বুঝে যাবে কোথায়! স্যার এর ফুলার রোডের বাসায়ও বার কয়েক গেছি।সলিমুল্লাহ খানসহ আমাদের আরো বন্ধুরা স্যারের বাসায় যেতেন নিয়মিত।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি হাতে গোনা যেসব শিক্ষককে লাইব্রেরীতে মগ্ন থাকতে দেখেছি অধ্যাপক আবু মাহমুদ তার মধ্যে অন্যতম। এখনো চোখে লেগে আছে কাঁধে বই এর বিরাট ঝোলা আর হাতে একগাদা বইপত্র নিয়ে স্যার লাইব্রেরীতে ঢুকছেন- বেরুচ্ছেন।বিপ্লবী মতাদর্শ, রাজনীতি আর রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রতি আমার আগ্রহ আর অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তুলতে স্যার এর রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
স্যার এর মৃত্যু অকালমৃত্যুই, ১৯৮৮ সালে।স্যারকে অসময়ে হারানো আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।স্যার ছিলেন সত্যিকার অর্থেই ‘A man of resistance and commitments’
স্যার এর এই প্রতিবাদী ভূমিকার কারনেই পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পেটোয়া এনএসএফ এর গুন্ডাবাহিনী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্যারের উপরনজিরবিহীনভাবে ন্যাক্কারজনক হামলা চালায় এবং স্যারকে মারাত্মক আহত করে।এই হামলা আক্রমণের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে।বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়।শেষ অব্দি ‘৬৭ সালে স্যারকে দেশত্যাগ করতে হয়।’৭৭ এ দেশে ফিরে স্যার আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং পেয়ে যান আমাদের মত কয়েক গুচ্ছ ছাত্রদের।
পাকিস্তানী জমানায়, ৫০, বিশেষ করে ৬০ দশকে বিখ্যাত ও বহুল আলোচিত দুই অর্থনীতি তত্বের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন তিনি।এই তত্বই পরবর্তীতে আমাদের স্বাধিকার আর স্বাধীনতার পথ অনেকখানি তৈরী করে দেয়।এটা ৬ দফা আর ১১ দফার পিছনে এক বড় ভিত্তি হিসেবেও কাজ করে।
ভোরে স্যার এর জন্মশতবর্ষ মনে করিয়ে দিলেন স্যারের আর এক ছাত্র প্রিয়ভাজন সাংবাদিক - লেখক কামরুল ইসলাম চৌধুরী সমকালে তার লেখার মাধ্যমে। তাকে ধন্যবাদ জানাই জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এই লেখার জন্য।
এরপর বাসায় বই এর সেল্ফ থেকে স্যার এর ‘মার্কসীয় বিশ্ববীক্ষা’ বইটি বের করা।এটি প্রথম খন্ড।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আবুল বারকাত এর সম্পাদনায় ১৯৮৬ সালে একুশে বইমেলায় বাংলা একাডেমি এই গুরুত্বপূর্ণ বিরাট গ্রন্থটি প্রকাশ করে।
এই প্রজন্মের তরুণ শিক্ষার্থী আর বিপ্লব আকাংখী কতজন এই অসাধারণ গুণী পন্ডিত মানুষটিকে চেনেন বা মনে রেখেছেন বলা মুশকিল।কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছর পর বাংলাদেশে আবার যখন পাকিস্তানী জমানার মত এক দেশে একধরনের প্রায় দুই অর্থনীতি কায়েম হয়েছে,শ্রেণী শোষণ আর শ্রেণী মেরুকরণ যখন প্রকট,নাগরিকদের ভোটের অধিকারসহ সাধারণ গণতান্ত্রিক অধিকার যখন অস্বীকৃত, রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক - প্রশাসনিক মাফিয়ারা মুক্তিযুদ্ধের দেশটা যখন প্রায় দখলে নিয়ে নিয়েছে তখন বিপ্লবী অর্থনীতিবিদ - সমাজবিজ্ঞানী ডঃ আবু মাহমুদ আবার নতুনভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন এই আশাবাদ বোধ করি অমূলক নয়।
জন্মশতবর্ষে অপার শ্রদ্ধা।
লেখক : সাইফুল হক
সাধারন সম্পাদক
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।