সোমবার ● ২৫ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের স্বারকলিপি
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজিকে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের স্বারকলিপি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :: জনগণের নাগরিক সুবিধা সাংবিধানিক অধিকার, কারো করুনা নয়। জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা রাষ্ট্রের, তাহলে রাত জেগে সীতাকুণ্ডের সাধারণ মানুষ লাঠি হাতে গ্রাম পাহারা দিতে হয় কেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সীতাকুণ্ডে ডাকাত আতঙ্ক, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার এমনটা দাবী করে চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ার হোসাইন বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)কে সীতাকুণ্ডবাসীর পক্ষথেকে স্বারকলিপি দিয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখা।
আজ ২৪ জানুয়ারী রবিবার সকাল ১১ টায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে নগরীর খুলশী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে স্বারকলিপিটি প্রদান করা হয়।
স্বারকলিপিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম জেলার গুরুত্বপূর্ণ সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রতিটি এলাকায় প্রতিরাতে অস্ত্রধারী ডাকাতদলের হামলা, প্রায় ১৭ টি পরিবারের সর্বস্ব লুট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অথচ পুলিশ প্রশাসন ডাকাত নিয়ন্ত্রনে কোন ধরনের কুল কিনারা করতে পারছেনা। এলাকার সাধারণ লোকজন রাতজেগে গ্রাম পাহারা দিচ্ছে। তবুও আতঙ্কে রয়েছে সাধারণ মানুষ। একদিকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ের অভাব অন্যদিকে প্রশিক্ষণ বিহীন নিরীহ সাধারণ জনগণ লাঠি হাতে অস্ত্রধারী ডাকাত দলের সাথে মোকাবেলা করতে গিয়ে বিভিন্ন ভাবে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তাছাড়া নিরস্ত্র কিংবা আত্নরক্ষা প্রশিক্ষণ/কৌশল ছাড়া অস্ত্রধারী ডাকাতদলের কাছে সাধারণ মানুষ কতটুকু নিরাপদ ? ডিআইজিকে এমন প্রশ্নও করেছেন তারা। এছাড়া স্বারকলিপিতে আরো বলা হয়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন তোমরা জনগণের পুলিশ হও। বর্তমান গণতান্ত্রিক জনপ্রিয় সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ও জনগণেন নিরাপত্তা দিতে যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর সময়ে সীতাকুণ্ডের মানুষ কেন এত অবহেলা আর আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হবে? সীতাকুণ্ডের মানুষ মনে করে প্রশাসনের সদিচ্ছায় সীতাকুণ্ডের ডাকাতির ঘটনা জিরোতে নামিয়ে আনা সম্ভব। এই সময় যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সীতাকুণ্ডের স্থায়ী বাসিন্দা মো. সামসুদ্দীন চৌধুরী বলেন, জনগণের জান মাল নিরাপত্তা দেওয়ার কথা রাষ্ট্রের। কিন্তু সেখানে এলাকাবাসী জান এবং মালের নিরাপত্তা রক্ষাথে নিজেই হাতে তুলে নিয়েছে সশস্ত্র অস্ত্র। নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব নিলে তাহলে আমরা ১৯৫৩ সালে ফিরে যাওয়াটায় শ্রেয়তর হয়! প্রশাসনের জন্য জনগণের কর/ভ্যাটের টাকায় যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। এর পরেও কেনো ২০২১ সালে এসে সাধারণ মানুষ হাতে আইন কিংবা লাঠি তুলে নিতে হবে। কিছু কতিপয় ডাকাতদল কি প্রশাসন থেকে এতই শক্তিশালী যে নিয়ন্ত্রণ করা আদৌ অসম্ভব।
সুপারিশমালাঃ ১। সীতাকুণ্ড মডেল থানায় দক্ষ কর্মকর্তা দিয়ে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নতুন ভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।
২। হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশকে সমন্বয় করে, রাত্রিকালিন সময়ে হাইওয়ে পুলিশকে মহাসড়কে, জেলা পুলিশকে এলাকার বিভিন্ন উপ-সড়কে দায়িত্ব পালনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। জনবল সংকট থাকলে দুযোর্গকালীন এই সময়ের জন্য সশস্ত্র আনসার ব্যাটেলিয়ন অথবা এপিবিএন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য সংযুক্ত করতে হবে।
৪। আনসার বিডিপির প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সদস্যদের থানা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে এই সময়ে গ্রাম পাহাড়ার কাজে লাগাতে হবে।
৫। সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যদের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে আরো সচেতন হতে হবে। এবং অনুসন্ধানের চোঁখকে আরো গভীরে নিয়ে যেতে হবে।
৬। সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের বিট পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো জোরদার ও সাধারণ জনগণকে নিয়ে ইউনিয়ন ভিত্তিতে কমিউনিটি পুলিশ গঠন করতে হবে। এবং তাদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৭। সীতাকুণ্ড থানা ও পাশ্ববর্তী থানার পূর্বের রেকর্ডভুক্ত চোর-ডাকাতদের বিষয়ে পুলিশের নজরদারী বাড়াতে হবে। এবং নতুন ডাকাত যেন তৈরী না হয় সে বিষয়ে পাশ্ববর্তী থানা গুলোসহ সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
৮। এলাকার সন্দেহবাজন বেকার যুবকদের কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সচেতন করতে হবে, অন্যায় কাজে জড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বাভাবিক জীবনের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
৯। ইতিমধ্যে সীতাকুণ্ড এলাকায় ঘটে যাওয়া ডাকাতি ঘটনা গুলো তদন্ত করে প্রশাসনের কোন সদস্যের ব্যর্থতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
১০। সীতাকুণ্ড এলাকায় রাতে মহাসড়কে প্রতি ১০ কিলোমিটার পরপর হাইওয়ে পুলিশের চেক পোষ্ট বসাতে হবে। এবং সন্দেহজনক প্রতিটি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসে তল্লাশি করতে হবে।
এই সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবু জাফর, সীতাকুণ্ড শাখার সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম, আক্তার হোসাইন, শাখাওয়াত হোসেন জুয়েল, মো. জাহাঙ্গীর আলম বাবু ও ইয়াছিন হক প্রমুখ।