বৃহস্পতিবার ● ১৫ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাউজানে আ’লীগ নেতার হাতে গুলিবিদ্ধ এক ব্যবসায়ী
রাউজানে আ’লীগ নেতার হাতে গুলিবিদ্ধ এক ব্যবসায়ী
ষ্টাফ রিপোর্টার :: চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর আলী নিজ হতে সাইফ উদ্দিন খান সাবু নামে এক ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একটি মসজিদ উন্নয়ন মূলক কাজ নিয়ে বিরোধের জেরে গতকাল বুধবার ১৪ এপ্রিল বিকেলে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম গহিরার শেখ ইব্রাহিম জামে মসজিদ মাঠে এ ঘটনা ঘটে। গুলি করার ঘটনায় কাউন্সিলর আলগীর আলীকে প্রধান আসামী করে রাউজান থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ সাবুরের ছোটভাই রাউজান পৌরসভা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন অভিযোগ করেছেন, ‘আমার ভাইকে কাউন্সিলর আলমগীর আলী গুলি করেছে।’ তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই কাউন্সিলর।
জানা গেছে, রাউজান পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। গুলিবিদ্ধ ঐ ব্যবসায়ী মুরগির খামার ব্যবসা করেন বলে জানা গেছে। আহত অবস্থায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় প্রবাসী ও জহুর আহমেদের ছেলে শেখ ইব্রাহিম মসজিদের জন্য একটি উন্নতমানের খাটিয়া দেন। এই খাটিয়া ফেরত দেওয়ার পক্ষে ছিলেন রাউজান পৌরসভা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন সহ সমাজের একটি অংশ। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। সর্বশেষ বুধবার বিকেল ৩টায় মসজিদে চলমান উন্নয়ন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলে স্থানীয় কিছু মুসল্লীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান আবদুল্লাহ আল মামুন ও তার ভাই সাবু। এক পর্যায়ে স্থানীয় মুসল্লিদের সঙ্গে আবদুল্লাহ আল মামুন, তার ভাই সাইফ উদ্দিন খান সাবু ও তার ভাতিজা মো. রিদোয়ানের সাথে ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময় কাউন্সিলর অস্ত্র হাতে নিয়ে পরপর তিন রাউন্ড গুলি করেন বলে প্রত্যাক্ষদর্শীরা দাবি করেন। তবে গুলি করার বিষয়টি স্থানীয়রা অনেকেই স্বীকার করেনি। মসজিদের ইমাম মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘খাটিয়ার দ্বন্দ্বও ছিল। এ ছাড়া মসজিদে টাইলস মিস্ত্রি, ইলেট্রিক মিস্ত্রি ও এসির মিস্ত্রি কাজ করছিল। হঠাৎ মামুনরা এসে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য হুমকি দেয়। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জের ধরে ধাক্কাধাক্কি হয়। গুলি করার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।’ গুলিবিদ্ধ সাইফ উদ্দিন খান সাবুর ছোটভাই আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কাউন্সিলর আলমগীর আলীর সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। কোন মসজিদ কমিটি নেই, যারা মসজিদটি পরিচালনা করছেন তাদের সঙ্গে আমাদের বাকবিতণ্ডা হয়। আলমগীর আলী মসজিদের কোনো অংশ নয়, তার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়নি। তিনি হঠাৎ করে এসে বলেন, ‘অনেক হয়েছে, অনেক দিন ধরে কান্ডগুলো দেখছি’ উল্লেখ করে গুলি চালান। পরে আমার ভাইকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমার ভাইকে কাউন্সিলর আলমগীর আলী গুলি করেছে।’ এ ব্যাপারে কাউন্সিলর আলমগীর আলী বলেন, ‘মসজিদের উন্নয়ন কাজে বাধা দেওয়ায় মুসল্লিসহ স্থানীয়দের সাথে বাকবিত হয়। গুলির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে।’
এবিষয়ে রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘পশ্চিম গহিরায় একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় রাউজান থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। আসামীরদের আটক করতে অভিযান অব্যহত রয়েছে। তিনি বলেন, অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন ভাবে কাজ করবে।
উল্লেখ্য, ঘটনার সময় অস্ত্র হাতে রাউজান পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর আলীর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাউজানে মার্কেটে ভূতুরে ব্যবসা, জরিমানা
রাউজান :: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন অমান্য করে দোকানের ভিতরে ব্যবসায় করতে গিয়ে ধরা পড়েন কয়েজন ব্যবসীরা। এসময় তাঁদের করা হয়েছে জরিমানা। রাউজানে লকডাউনে ২’য় দিনে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসন। এ অভিযানে দেখা গেছে ফকির হাট চৌধুরী মার্কেটে কয়েটি কাপড়ের দোকান অর্ধেক খুলে ব্যবসা পরিচালনা করতে। এসময় সড়ক পরিবহণ আইন ও স্বাস্থ্যবিধি আইনে ৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আজ ১৫ এপ্রিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যৌথ অভিযানটি পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক। এবং ফকির হাট বাজারে। রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোনায়েদ কবির সোহাগ ও রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুণের নেতৃত্বে পুলিশ ও আনাসার বাহিনীর সদস্য এই অভিযান পরিচালনা করেন। জানা যায়, কঠোর অবস্থান নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোড়ে মোড়ে চেক পোষ্টও বসানো হয়।
কাপ্তাই সড়কে লকডাউন কার্যকরে এএসপির দিনভর অভিযান মামলা, জরিমানা আটক
রাউজান :: প্রায় যানবাহন শূন্য সড়ক, স্বল্প সংখ্যক খোলা দোকান এবং পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্য দিয়ে সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথম দিন কেটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া- রাউজান সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম দিনভর মাঠে অবস্থান করে লকডাউন নিশ্চিতে পুলিশি তৎপরতা তদারক করেন। এসময় উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে অনেক যানবাহনকে মামলা, জরিমানা এবং আটক করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাঙ্গুনিয়ায় লকডাউন কার্যকরে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন শুরু করে পুলিশ। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে, অভিযানও চালাতে দেখা গেছে। এসব চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের পরিচয় এবং রাস্তার বের হবার কারণ জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। যেসব পেশার মানুষ জরুরি সেবার সাথে সম্পৃক্ত তাদের চেকপোস্ট অতিক্রম করার অনুমতি দিয়ে অন্যদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সকাল থেকে উপজেলার চন্দ্রঘোনা, রোয়াজার হাট, গোডাউন, শান্তির হাটসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এদিকে জনসচেতনার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচারণাও করা হয়।
সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, দেশকে করোনার অভিশাপমুক্ত করতে লকডাউন মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে সরকারের দেয়া নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। একমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন থাকলে এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
এ সময় তিনি সতর্ক করে বলেন, কেউ নির্দেশনা না মানলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শও দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
জানা যায়, বুধবার (১৪ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ১৩ দফা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এই আট দিন গণপরিবহন-বাস, ট্রেন, লঞ্চ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকবে। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে (কর্ম এলাকা) থাকতে হবে। শপিংমল ও অন্যান্য দোকানপাটও বন্ধ থাকবে। তবে নির্দিষ্ট সময় খোলা থাকবে ব্যাংক, কাঁচাবাজার ও নিত্যপণ্যের দোকান। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে এই সময়ের মধ্যে শিল্পকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিশ্রমিক পরিবহন ও গণমাধ্যমসহ সব ধরনের জরুরি পরিষেবা চালু থাকবে। এদিকে, নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ব্যাংক লেনদেন চলবে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। তবে, অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্যাবলি সম্পন্ন করার জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত।