বৃহস্পতিবার ● ৩ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » পরিকল্পনামন্ত্রীর ছিনতাই হওয়া মোবাইল ৫ দিনেও হয়নি উদ্ধার
পরিকল্পনামন্ত্রীর ছিনতাই হওয়া মোবাইল ৫ দিনেও হয়নি উদ্ধার
ঢাকা :: সম্প্রতি রাজধানীর বিজয় সরণি সিগন্যালের যানজটে আটকা পড়া পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে বহনকারী গাড়ি থেকে মোবাইল ফোন ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়। ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে যেতে চললেও এখনও উদ্ধার করা যায়নি মন্ত্রীর ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোনটি। যদিও ফোনটি উদ্ধারে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে রাজধানীর বিজয় সরণি, তেজগাঁও, চন্দ্রিমা উদ্যান, কাফরুল এলাকার প্রায় ডজনখানেক চিহ্নিত ছিনতাইকারীকে ধরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। স্থানীয় ছিনতাইকারী ও ছিঁচকে চোরের কেউই বলতে পারছে না মোবাইলটি কে নিলো! তাদের দাবি, তাদের কেউ ছিনতাই করেননি ফোনটি। তাদের চুরি ও ছিনতাই নেটওয়ার্কেও পরিকল্পনামন্ত্রীর ফোন ছিনতাইয়ের তথ্য নেই।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনাস্থলে সরাসরি কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় তদন্ত কার্যক্রম অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। আশপাশের এলাকার ক্যামেরাগুলো থেকে ছিনতাইয়ের সময়ের ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অস্বাভাবিক কিছুই পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কাফরুল থানা পুলিশ জানায়, ইতোমধ্যে চন্দ্রিমা উদ্যানের ভেতরের টোকাই-ছিনতাইকারী, শেরেবাংলা মাঠ সংলগ্ন এলাকার টোকাই, আগারগাঁওসহ আশপাশের এলাকার স্থানীয় এবং সন্দেহভাজনদের থানায় আনা হয়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মোবাইলের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় কাফরুল থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিএম ফরিদুল আলম।
সংশ্লিষ্ট মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা জিএম ফরিদুল আলম বলেন, ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একাধিক লোক ও সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখনও ফোন উদ্ধারের মতো কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি।
কাফরুল থানার ওসি মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, থানা পুলিশ, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। তবু এখনও কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে।
মামলার ছায়া তদন্ত করা ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় করা মামলাটি মূলত থানা পুলিশ তদন্ত করছে। তবে আমরা থানা পুলিশকে এ বিষয়ে সাধ্যমতো সহযোগীতা করছি।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় অফিস থেকে বের হয়ে ৬টা ৪৫ মিনিটে বিজয় সরণী এলাকা অতিক্রম করছিলেন। একপর্যায়ে গাড়িটি সিগন্যালে অপেক্ষা করছিল। এ সময় গাড়ির এসি বন্ধ করে দিয়ে কাঁচ নামিয়ে দেন তিনি।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘গাড়িটা দাঁড়িয়ে ছিল। আমি পেছনের সিটে বসা ছিলাম, আমার হাতে মোবাইল ছিল। আমি মোবাইলে কিছু একটা করছিলাম। হয়তো নিউজ পড়ছিলাম। হঠাৎ করে এক ঝলকে অবিশ্বাস্য রকম গতিতে ঝড়ের মতো এসে হাত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে চলে গেল। আমি দেখিনি লোকটাকে। আমাদের লোক গাড়ি থেকে নামল। কিন্তু ওই ৩০-৪০ সেকেন্ডের মধ্যে লোকটা কোথায় মিশে গেল।’
এই ঘটনাকে অবিশ্বাস্য বলছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি এই ঘটনা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘মনে হলো কী যেন হয়ে গেল।’
উল্লেখ্য, গত রবিবার (৩০ মে) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে বের হয়ে বিজয় সরণির সিগন্যালের যানজটে আটকা পড়ে পরিকল্পনামন্ত্রীকে বহনকারী গাড়ি। তখন গাড়ির গ্লাস খুলে মোবাইলে কথা বলছিলেন মন্ত্রী। এ সময় হঠাৎ এক ছিনতাইকারী ছোঁ মেরে মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায়। এ ঘটনার পরপরই পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ব্যক্তিগত সহকারী কাফরুল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সড়কে সড়কে ছিনতাইকারীদের উপদ্রব ও খোদ একজন মন্ত্রীর গাড়ি বহরে প্রটোকল থাকার পরও ফোন ছিনতাই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানান রকমের মন্তব্য প্রকাশ করেন লোকজন।