বৃহস্পতিবার ● ৩ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » দারিদ্রসীমার নীচে থাকা ৬ কোটি মানুষের জন্য বাজেটে কিছু নেই : সাইফুল হক
দারিদ্রসীমার নীচে থাকা ৬ কোটি মানুষের জন্য বাজেটে কিছু নেই : সাইফুল হক
ঢাকা :: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আজ প্রস্তাবিত নতু অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সম্পর্কে গণমাধ্যমে প্রদত্ত প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, গতানুগতিক ধারায় ঘোষিত বাজেট দিয়ে করোনার বহুমাত্রিক নেতিবাচক অভিঘাত মোকাবেলা করা যাবে না। বিপুল অংকের ঘাটতি বাজেট দিয়ে করোনা দুর্যোগজনীত পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাবে না। বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে বিপুল অংকের বাজেট কোন আশা জাগাতে পারছে না। তিনি বলেন, ছয় লক্ষ তিন হাজার ছয়শত একাশি কোটি টাকার বাজেটে ২,১৪,৬৮১ কোটি টাকার যে ঘাটতি তা পূরণে যেমন মারাত্মক অনিশ্চয়তা রয়েছে, তেমিন শেষ পর্যন্ত তার দায় মেটাতে হবে স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষকে। তিনি বলেন, ঘোষিত বাজেটের আকার দিয়ে কোনভাবেই সরকারের সাফল্য নিরূপণ করা যাবে না। সরকার বাজেট করতে গিয়ে দরিদ্রসীমার নীচে নেমে আসা ৬ কোটি মানুষের জন্য বড় কিছু নেই। সরকার তথা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের আমলাতান্ত্রিকতা, উদ্যোগহীনতা, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং সর্বোপরি রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের রাজনৈতিক ও নৈতিক কর্তৃত্ব দুর্বল থাকায় বাজেট বাস্তবায়নের বিস্ময়কর শৈথিল্য ও দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা তো খুব শোচনীয়। আর করোনা মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজিরবিহীন অকার্যকারিতার জন্য সাত হাজার কোটি টাকা খরচই করা যায়নি; গবেষণার জন্য বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকার মধ্যে এক টাকাও খরচ করা যায়নি।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, মহামারী দুর্যোগ থেকে উত্তরণে প্রবৃদ্ধির বয়ানের পরিবর্তে দরকার ছিল দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ কিভাবে বিদ্যমান বিপর্যয় থেকে বেরিয়ে আসবে তার বিশ^াসযোগ্য ও কার্যকরি পদক্ষেপ। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবনার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা অনুপস্থিত। দারিদ্রসীমার নীচে নেমে আসা ৬ কোটি মানুষের কাছে খাদ্য ও নগদ অর্থ পৌছানোর কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও বরাদ্দ বাজেটে নেই। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যে লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে চুরি, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও দলীয়করণ এড়িয়ে তা কিভাবে অভাবীদর কাছে পৌঁছাবে তার উপযুক্ত পদক্ষেপ নেই। আত্মকর্মসংস্থানসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ কিভাবে বাড়বে তারও সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।
তিনি ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার বিপুল অর্থের বড় অংশ এবারও যথেচ্ছ উপর তলার শিল্পপতিদের কাছে। মাঝারি, ছোট ও প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য এখনও প্রণোদনা অপ্রতুল। কৃষি ও গ্রামীণ খাতের বরাদ্দ এখনও অত্যন্ত কম। আর বিদ্যমান ব্যবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি ভর্তুকীতে প্রকৃত কৃষক লাভবান হয় না। দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য ‘গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার উদ্যোগ ও বরাদ্দ এবারও বাজেটে অনুপস্থিত। অথচ উন্নয়ন বাজেটে মেগা প্রকল্পসমূহে জবাবদিহিহীন বরাদ্দ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চল এবারও বাজেটে অবহেলিত। বন্ধ রাষ্টীয় পাটকল, চিনিকলসহ জাতীয় শিল্প পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ বাজেটে অনুপস্থিত।
তিনি এই দুর্যোগকালীন সময়ে সরকার পরিচালনায় ব্যয় বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, মহামারীর এই সময়ে সরকার পরিচালনার ব্যয় হ্রাসসহ অনুৎপাদনশীল খাতসমূহে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে কৃষি, শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতসমূহে পরিকল্পিতভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানান। তিনি সীমাহীন আয় ও ধনবৈষম্য কমিয়ে আনার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানান।