বুধবার ● ১৬ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » চা শ্রমিকদের জন্য ন্যায্যমজুরি নির্ধারণে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ব্যর্থতা
চা শ্রমিকদের জন্য ন্যায্যমজুরি নির্ধারণে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ব্যর্থতা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: মজুরির খসড়া প্রস্তাবনা সংশোধন করে দৈনিক নগদ মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবি চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করে নিম্নতম মজুরি বোর্ড কর্তৃক ১৪ জুন ২০২১ প্রজ্ঞাপন জারীর প্রতিবাদ, চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ডের ব্যর্থতার নিন্দা এবং জারীকৃত প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে দৈনিক নগদ মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চা শ্রমিকদের একটি মাত্র কেন্দ্রীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বের অদক্ষতার সুযোগ নিয়ে চা বাগান মালিকরা মুনাফার পাহাড় গড়লেও বছরের পর বছর ধরে চা শ্রমিকদের প্রায় দাসত্বের জীবনের মধ্যে আটকে রেখেছে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রিয় মধ্যস্থতায় ন্যুনতম মানসম্মত মজুরি নিশ্চিত করার প্রত্যাশায় চা শ্রমিকরা মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের দাবি তুলেছিল। কিন্তু মজুরি বোর্ড বারবার মালিক পক্ষের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, শ্রমিকদের সুরক্ষায় ভুমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। শ্রম আইনের ১৩৯(৬) ধারা অনুসারে মজুরি বোর্ড প্রতি পাঁচ বছর অন্তর শ্রমিকদের মজুরি পূণ: নির্ধারণ করবে, ১৩৯(২) ধারা অনুসারে মজুরি বোর্ড গঠিত হওয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরির সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করবে, ১৪১ ধারা অনুসারে মজুরি বোর্ড শ্রমিকদের মজুরির নিম্নতম হার নির্ধারণে জীবন যাপন ব্যয়, উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য, মুদ্রাস্ফীতিসহ ১১ টি বিষয় বিবেচনা করবে। চা বাগান মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় শ্রম আইনের উল্লেখিত বিধানসমূহ লংঘন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের প্রায় ১১ বছর পরে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর চা শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। সেই মজুরি বোর্ড ৬ মাসের পরিবর্তে প্রায় ২০ মাস পরে চা শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরির সুপারিশ করে প্রজ্ঞাপন জারী করেছে। প্রকৃতপক্ষে নতুন মজুরি নির্ধারণে কালক্ষেপনের মধ্যে দিয়ে মজুরি বোর্ড চা বাগান মালিকদের সুযোগ দিয়েছে তারা যেন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির নামে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের অদক্ষতার সুযোগ নিয়ে নতুন জটিলতা তৈরী করতে পারে যা চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবিকে উপেক্ষা করার পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মজুরি বোর্ডের কার্যক্রম চলমান অবস্থায় গতবছরের শেষে বাংলাদেশিয় চা সংসদ এবং চা শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সংগঠিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সেই সময়ে আমরা আশংকা প্রকাশ করেছিলাম মজুরি বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি মূলত চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত রাখার নতুন কৌশল। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের পক্ষ থেকে বাগান মালিক আর অদক্ষ ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি বিবেচনায় না নিয়ে শ্রম আইনের ১৪১ ধারায় উল্লেখিত মানদন্ডসমূহ বিবেচনায় নিয়ে চা শ্রমিকদের নতুন মজুরি হার নির্ধারণের আহবান জানানো হয়েছিল। আমাদের আশংকা সত্য প্রমাণিত হয়েছে, নিম্নতম মজুরি বোর্ড চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবিকে পদদলিত করে চা বাগান মালিকদের ইচ্ছাপূরণের রাবার ষ্ট্যাম্প হিসাবে ব্যবহত হয়েছে। নেতৃবৃন্দ প্রশ্ন রাখেন, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা হলে একজন শ্রমিকের মাসিক আয় দাঁড়ায় ৩৬০০ টাকা, মজুরি বোর্ডের সম্মানিত চেয়ারম্যান বা সম্মানিত সদস্যদের পরিবারের কোন একজন সদস্যও কি মাত্র ৩৬০০ টাকায় একমাস জীবনযাপনের কথা কল্পনা করতে পারেন? বাংলাদেশের কোন প্রান্তে কি মাত্র ৩৬০০ টাকা দিয়ে একটি পরিবারের মানুষ্যচিত্ব ভাবে জীবনযাপনের সুযোগ আছে?
নেতৃবৃন্দ, চা বাগান মালিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য ঘোষিত প্রজ্ঞাপন বাতিল করে চা শ্রমিকদের দৈনিক নগদ মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণের দাবিকে বিবেচনায় নিয়ে চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের নতুন সুপারিশ তৈরী করার জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ডের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, চা শ্রমিকদের নতুন মজুরির সুপারিশ তৈরীতে কি কি বিষয় বিবেচনায় নিয়েছেন তা জনসম্মুখে প্রকাশ করুন। নতুবা মাত্র ৩৬০০ টাকায় সপরিবারে সুস্থভাবে জীবনযাপন করা যায় নিজেদের দিয়ে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।