শনিবার ● ৩ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে চলছে কঠোর লকডাউন,কমেছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা
ঝিনাইদহে চলছে কঠোর লকডাউন,কমেছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে কমেছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে ১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছে ৩ জন। সিভিল সার্জন: ডা: সেলিনা বেগম জানান, সকালে কুষ্টিয়া ল্যাব থেকে ৫৯ টি নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এসেছে। এদের মধ্যে ১৭ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। আক্রান্তদের মধ্যে সদরে ১১ জন, শৈলকুপায় ২ জন, কালীগঞ্জে ৩ জন ও কোটচাঁদপুরে রয়েছে ১ জন। এছাড়াও গত ২৪ ঘন্টায় সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাড়ালো ১’শ জনে। নতুন করে ১৭ জনসহ জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ৪ হাজার ৫’শ ৯১ জনে। এদিকে লকডাউনের ৩ দিন চলছে কঠোর ভাবে। লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছে সেনা, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার সকাল থেকেই শহরের পোস্ট অফিস মোড়, মুজিব চত্বর, হামদহসহ বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। শহরের আগতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বিনা কারণে বাইরে বের হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও শহরের গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। দোকান-পাট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান যেন খোলা না হয় এ জন্য অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। যশোর সেনানিবাসের ২য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানী কমান্ডার ক্যাপ্টে মো: তানজিমুল আনোয়ার বলেন, আমার আমাদের ৩য় দিনের প্রেট্টোল এ্যাকিভিটির অংশ হিসেবে কাজ করছি। যারা বাইরে বের হচ্ছে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন কি না? সামাজিক দুরত্ব মানা হচ্ছে কি না? এই বিষয়টি লক্ষ্য করছি। বিশেষ করে বিভিন্ন বাজার ও পাবলিক প্লেসে আমরা কাজ করছি। তাছাড়াও জরুরী পরিসেবা বাদে যে সমস্ত গাড়ি চলছে তাদের সঠিক কারণ যাচাই করা হচ্ছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা আছেন তাদের সাথে একসাথে কাজ করে সরকারি যে নির্দেশনা আছে তা কার্যকরে কাজ করছি।
ব্র্যাকের কর্মকর্তার বাড়িতে নগদ অর্থসহ সোনার গহনা চুরি
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ শহরের উপশহর পাড়ার দুধর্ষ চুরি হয়েছে। চোরেরা ব্র্যাকের কর্মকর্তা শফিকুর রহমানের বাসার গ্রিল কেটে নগদ দেড় লাখ টাকা ও সাত ভরি সোনার গহনা নিয়ে গেছে। এ সময় তিনি গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানা গেছে, সাতদিনের লকডাউনে গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার রাজাপুর গ্রামে বেড়াতে যান শফিকুর। শহরের বাড়ি তালাবদ্ধ ছিল। গতকাল শনিবার বাসায় ফিরে দেখতে পান ঘরের আসবারপত্র এলোমেলো। ঘরের আলমিরা ভাঙ্গা। খোজ নিয়ে জানতে পারেন তার সব কিছু নিয়ে গেছে। এর আগে ঝিনাইদহ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের কর্মচারী মেহেদী লাভলুর বাড়িতে চুরি হলে তিনি চোর সনাক্ত করে সব কিছুই ফিরে পান। গ্রেফতর হয় চোরসহ ৭ জন। এদিকে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার, সদর থানা ওসি মিজানুর রহমান, ওসি তদন্ত এমদাদুল হক খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা জানান, পার্শ্ববর্তী বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ দেখে চোর সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে সার্থক গ্যাসঘর ও পাগলাকানাই মডেলদের বাসাবাড়িতেও চুরি সংঘটিত হয়েছে। সাধুহাটী ইউনিয়নের বারোমাইল এলাকায় জনৈক শাহাদতের কাঠের আড়তেও চুরি হয়। করোনাকালে লকডাউন ও জনমানবহীন পাড়া মহল্লায় চোরের উপদ্রপ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে এলাকাবাসি জানায়।
ঝিনাইদহের ২০টি এলাকায় ব্যপক জলাবদ্ধতা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে কয়েকদিনের ভারী বর্ষনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাষন ব্যবস্থা না থাকার ফলে শহর ও গ্রামে একই চিত্র ফুটে উঠেছে। সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারের ত্রিমোহনী এলাকায় জলাবদ্ধতায় ২০ টি চাতাল ও বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। পানি উঠেছে চাতালে থাকা শ্রমিকদের ঘরে। প্রায় দুই মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে চাল উৎপাদন কার্যক্রম। এতে কোটি টাকা লোকসান হয়েছে মালিকদের। বেকার হয়ে অসহায় দিনযাপন করছে দুই শতাধীক শ্রমিক। শনিবার চাতাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই এলাকার চাতালগুলোর পাশে একটি বিল ছিল। এই বিল দিয়ে পানি নিষ্কাষণ হত। কিন্তু প্রায় এক বছর আগে শুকনো মৌসুমে এই বিল এলাকায় পুকুর খণন করে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। ফলে বন্ধ হয়ে যায় পানি নিষ্কাষণ ব্যবস্থা। এখন বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে মানুষ। চাতাল শ্রমিক আবু তালেব জানান, চাতালে কাজ করে সংসার চলে। কিন্তু বৃষ্টিতে পানি জমে প্রায় দুই মাস চাতাল বন্ধ রয়েছে। ফলে রোজগার না থাকায় কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। অনেক সময় তিন বেলাও খাবার জুটছে না। জলাবদ্ধতার স্বীকার একটি বাড়ির মালিক ইমান আলী বলেন, পাশেই পুকুর কেটে বাধ দেওয়ার ফলে বৃষ্টিতে এখানে পানি জমে গেছে। এই পানি বের হতে না পেরে ঘরে ঢুকছে। উপজেলা প্রশাসনকে জানানোর পরও কোন কাজ হচ্ছে না। চাতাল মালিক ও ডাকবাংলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আক্তার হোসেন ভান্ডারী জানান, চাতালের পাশে প্রভাবশালীরা পুকুর খনন করায় চাতাল এলাকার পানি বের হচ্ছে না। এখন পানি নিষ্কাষন না হওয়াই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়িতে পানি ঢুকছে। তিনি জানান, প্রায় ২০ টি চাতাল ক্ষতিগ্রস্থ। উৎপাদন কাজ বন্ধ। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম শাহীন জানান, এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। দ্রুতই বিষয়টি সমাধানে চেষ্টা করা হচ্ছে।
সরকারী আদেশ অমান্য করে বন্ধ করা ক্লিনিকে রোগী দেখে ব্যপক আলোচনায় চিকৎসক
ঝিনাইদহ :: বিউটি খাতুন (২৪) নামে এক গর্ভবতি নারীর মৃত্যুর ঘটনায় বন্ধ করে দেওয়া “শৈলকুপা প্রাইভেট হাসপাতাল” নামে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে রোগী দেখে বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডাঃ হুমায়ন সাহেদ। তিনি সরকারী আদেশ অমান্য করে কি ভাবে ওই ক্লিনিকে শুক্রবার দিনভর রোগী দেখলেন তা নিয়ে সমালেঅচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন টাকা হলেই কি সব আদেশ আর বিধি বিধান থোড়াই কেয়ার করা যায় ? তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গত ২৬ জুন সরকারী হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া বিউটি ডাক্তার ও নার্স না থাকার কারণ ওই ক্লিনিকে মারা যান। এ নিয়ে জেলা ব্যাপী আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। সিভিল সার্জন খবর পেয়ে চিঠি দিয়ে ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেন। অথচ সেই বন্ধ ক্লিনেক রোগি দেখেন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডাঃ হুমায়ন সাহেদ। শুক্রবার তিনি শতাধীক রোগী দেখেন। রোগী দেখা অবস্থায় সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম তাকে ফোন করেন এবং বন্ধ ক্লিনিকে রোগী দেখার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। জবাবে ডাঃ হুমায়ন সাহেদ সিভিল সার্জনকে জানান, ক্লিনিকটি যে চিঠি দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। গনম্ধ্যম কর্মীদের কাছেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু চিকিৎসক ডাঃ হুমায়ন সাহেদ বলেছেন তিনি বন্ধের বিষয়টি জানতেন না। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন বন্ধ করা ক্লিনিকে রোগী দেখার কথা স্বীকারে করে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। উল্লেখ্য বিউটি খাতুন (২৪) নামে এক গর্ভবতি নারীর প্রসব বেদনা শুরু হলে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটস্থ শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু শৈলকুপা সরকারী হাসপাতালের গেটের সামনে অপেক্ষমান দালালরা তাকে জোর পুর্বক ভাগিয়ে শৈলকুপা প্রাইভেট হাসপাতাল নামে ওই বেসরকারী ক্লিনিকে ভর্তি করেন। ডাক্তার ও নার্স না থাকার কারণে ওই নারী ৩ ঘন্টা প্রসব বেদনায় ছটফট করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বিউটি খাতুন শৈলকুপা পৌরসভার বাজারপাড়া গ্রামের রিপন হোসেনের স্ত্রী। বিউটির মৃত্যুর পর ক্লিনিকের ছয় মালিক ও ম্যানেজার গাঢাকা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ক্লিনিকের সামনে মোতায়েন করা হয় পুলিশ।
ঝিনাইদহে পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুই যুবকের মৃত্যু
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকালে বৃষ্টিসহ বজ্রপাতের সময় পৃথক স্থানে সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের লালু মিয়ার ছেলে আল আমিন হোসেন (৩০) ও পৌর এলাকার আরাপপুর গাবতলা পাড়ার আঃ হামিদের ছেলে শাকিব (২৮) এর মৃত্যু হয়। জানাগেছে, বিকাল ৪ টার দিকে গাবতলা মাঠে যাওয়ার সময় বজ্রপাতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয় শাকিব। আহত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে, অন্যদিকে দুপুরে আলিমিন গরুর জন্য বাড়ির সামনের জমিতে থেকে ঘাষ কাটতে যাই। অসাবধবশত সেখানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাই। তার অকাল মৃত্যুতে পরিবার ও নিকটজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মৃত্যুর খবরে হতাশ ও উদ্বিগ্ন ঝিনাইদহের মানুষ
ঝিনাইদহ :: একের পর এক মৃত্যুর বিভিষিকাময় খবরে হতাশ আর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ঝিনাইদহের মানুষ। ঘরে ঘরে অসুস্থ মানুষের ভীড় বাড়ছে। গ্রাম শহর সর্বত্রই ভুগছে মৌসুমি ঠান্ডা কাশি ও জ্বর নিয়ে। সামান্যতেই মানুষ আতংকিত হয়ে ছুটছে চিকিৎসকের কাছে। ফলে সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি ভিড় বাড়ছে প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে। করোনার লক্ষন নিয়ে অনেকের মৃত্যু হলেও তাদের কোভিড পরীক্ষার সুযোগ হচ্ছে না। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই। নেই পর্যাপ্ত হাই ফ্লো অক্সিজেন ব্যবস্থা। এমন কথা চিন্তা করে অনেকেই কোভিড রোগী নিয়ে আতংকে দিন পার করছেন। এদিকে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন শুধুই মৃত্যুর সংবাদ ভেসে আসছে। কেও কোভিডে আবার কেও হৃদরোগে মারা যাচ্ছেন। কারো কারো মধ্যে থাকছে করোনার উপসর্গ। এমন প্রতিদিন স্বজন হারানোর বেদনায় অশ্রুসিক্ত হচ্ছে মানুষ। নিকাট জনের কাছ থেকে ফোন পেয়ে অনেকেই আতংকিত হয়ে পড়ছেন। চারিদিক যেন এক অস্বস্তিকর পরিবেশ। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, শৈলকুপার বাগুটিয়া গ্রামে দুই সপ্তাহ আগে একই দিন স্বামী স্ত্রীর মৃত্যু হয়। একই উপজেলার ফুলহরি কাজিপাড়া গ্রামে জিহাদ হোসেন নামে এক কিশোর গত ২১ জুন মৃত্যুর পর তার মা করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৪ জুন মারা যান। ১১ দিনের ব্যবধানে তারা নানা সৈয়দ মাহবুব হোসেন শুক্রবার মারা গেছেন। জিহাদের পিতা সৈয়দ কোরবান আলী হিরন করোনার লক্ষন নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গ্রাম শহরে অনেকর পরিবার ধরেই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। অনেকে ভয়ে পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন না এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে। হরিণাকুন্ডুর পায়রাডাঙ্গা গ্রামের সোহরাব হোসেন মন্ডল জানান, আজ শনিবার সকালে গ্রামের এক নিকটাত্মীয়কে দাফন করা পর দুপুরে খবর আসে বৃদ্ধ নানা করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এখন সেখানে যাচ্ছি দাফন করতে। লকডউনের কারণে স্বজনরা মারা গেলেও করোনা ভয় ও সড়ক পথে যাতায়াতের কারণে অনেকই বিদায় বেলায় প্রিয় মানুষটির মুখ দেখতে পারছেন না। ডাঃ নজরুল ইসলাম নামে এক চিকিৎসক জানান, বর্তমান এই মৌসুমে ইনফ্লয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ থাকে। সাধারণনত গ্রামে গ্রামে এই রোগ দেখা দিচ্ছে। তারা সুস্থও হচ্ছেন। আবার অনেক বয়স্ক মানুষের হৃদরোগসহ নানা সমস্যা আছে। মৃত্যুবরণ করলেই উপসর্গ থাকায় অনেকেই ঢালাও ভাবে করোনা ভাইরাসের কথা উল্লেখ করছেন। এসব কারণে মানুষের মধ্যে আতংক কাজ করছে। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় ঝিনাইদহে করোনায় মারা গেছে ৩ জন। এই নিয়ে জেলায় করোনা শুরুর পর থেকে এক’শ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১৭ জন। ঝিনাইদহ করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন ৫৭ জন। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ পর্যন্ত ১১১ জনের লাশ দাফন করেছে। এর মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীরাও আছেন।
কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার নার্সসহ করোনায় আক্রান্ত ১২
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা আক্রান্ত অপর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়েই এই হাসপাতালকে সামাল দিতে হচ্ছে অব্যাহত ভাবে খারাপ হতে থাকা করোনা মহামারি। হাসপাতালের ডাক্তার,নার্স,ওয়ার্ডবয়সহ অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা দিতে কর্মকর্তারা হিমসিম খাচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর সংকট প্রকট আকার ধারণ করায় সংক্রমণ রোধে লকডাউন দেওয়া হয়েছে। তবে এই কালীগঞ্জ হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার ও নার্স। কর্মরতদের মধ্যে অনেকের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে করোনা রোগিদের সেবা দেওয়ার জন্য। যে কারণে এ হাসপাতালে করোনা রোগিদের চিকিৎসা দিতে মারাতœক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। করোনা রোগিদের জন্য রাখা হয়েছে ১৭ বেড। রোগি বৃদ্ধি হলে বেড বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কালীগঞ্জ হাসপাতালে ২ জন ডাক্তার, ৫ জন নার্স, ১জন ওয়ার্ডবয়, টিকিটপ্লান ১জন, ফার্মাাসিষ্ট ১ জন, প্যাথোলোজিষ্ট ১ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে এ ১২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। সাধারন বহিরাগত করোনা রোগি রয়েছেন ১১ জন ভর্তি। এ হাসপাতালে অন্তত ২৫ জন ডাক্তারের প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে কর্মরত রয়েছেন ১১ জন। দু’জন ডাক্তার কে খুলনা মেডিকেলে ডেপুটেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ১১ জন ডাক্তার কে দুটি ভাগ করে দায়িত্ব পালন করছেন। আবার সকাল, সন্ধ্যা ও রাতের শিফটে ভাগ হয়ে প্রতিদিন কাজ করেন, তারা কোন ভাবেই বিরাম পাচ্ছেন না। হাসপাতালে এখন ও ১২ জন নার্স প্রয়োজন রয়েছে, বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৩ জন। ৪ জনকে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে করোনা রোগির সেবা প্রদানের জন্য। ১৩ জন নার্সের মধ্যে ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কালীগঞ্জ হাসপাতালে ক্রমবর্ধমান করোনা রোগীর চাপ রয়েছে, প্রতিদিন রোগির চাপ বাড়ছে আবার বেশি গুরুতর হলে যশোর, খুলনাতে পাঠানো হচ্ছে উন্নত চিকিৎসার জন্য। এখানে জনবল সংকট রয়েছে ফলে চিকিৎসা দেওয়া খুবই কষ্ট হচ্ছে। কালীগঞ্জ হাসপাতাল টি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জনবলের দিক থেকে ভালো অবস্থানে নেই বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান। কালীগঞ্জ হাসপাতালের কর্মরত করোনায় আক্রান্তরা সবাই এর আগে টিকা ও নিয়েছিলেন। আক্রান্ত সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শামিমা শিরিন লুবনা জানান, ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ জনবল সংকট থাকার কারণে করোনার চিকিৎসা দেওয়া খুবই কষ্ট হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে ডাক্তার, নার্সদের খুলনা ও ঝিনাইদহে ডেপুটেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ফলে জনবল সংকট হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে অনেক পদ শূন্য রয়েছে। জনবল বৃদ্ধির জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্বাস্থ্য বিভাগের উপরি মহলে চিঠি পাঠিয়েছেন। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবল নেই আমরা বিদ্যমান জনবল দিয়ে রোস্টার অনুযায়ী কাজ করছি এবং রোগীদের চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করছি। হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার মাজহারুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ও ডাক্তার সুমন আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হয়েছেন। এদিকে ডাক্তার মাজহারুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ঝিনাইদহ কারাগারের ডাক্তার হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তার শিশু কন্যা ও আক্রান্ত হয়েছে। ডাক্তার মাজহারুল ইসলামের পরিবারের ৩ জন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের জন্য এ উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিতে সারা বছরই রোগী ভর্তি থাকে। আবার অনেকের মধ্যে করোনা নিয়ে চলছে অজানা এক আতঙ্ক। কালীগঞ্জে একমাত্র সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি সব সময় বেশি থাকে। সারা দিনেই ঠান্ডা-কাশির সাধারণ রোগীরা আসছেন। তাদের ব্যবস্থাপত্র দেয়ার পাশাপাশি করোনা সংক্রান্ত নিয়মকানুন মেনে চলতে এবং আতঙ্কিত না হওয়ার সাহস দিচ্ছেন।