বুধবার ● ৭ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » কঠোর লকডাউনের ৭ম দিন : রাঙামাটিতে ২৮৪ মামলা, ৮০,৩৫০ টাকা অর্থদন্ড, চিকিৎসাধীন- ২৩১ জন
কঠোর লকডাউনের ৭ম দিন : রাঙামাটিতে ২৮৪ মামলা, ৮০,৩৫০ টাকা অর্থদন্ড, চিকিৎসাধীন- ২৩১ জন
স্টাফ রিপোর্টার :: করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমনের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার প্রথম পর্যায়ে ১ জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে আজ ৭ জুলাই বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত ২য় পর্যায়ে ৭ জুলাই মধ্যরাত হতে ১৪ জুলাই দিবাগত রাত ১২ টা পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষনা করেন।
এ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা ২১টি শর্ত দিয়ে গত ৩০ জুন ও ২য় বার ৫ জুলাই সময়সীমা বর্ধিত করে করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯)-এর বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক কার্যাবলি/চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করেন।
আজ ৭ জুলাই বুধবার সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউন ৭ম দিন কার্যকর করতে রাঙামাটি শহরের মানিকছড়ি, ভেদ ভেদী, কলেজ গেইট, বনরুপা, পুরতন বাস ষ্টেশন (দোয়েল চত্বর মোড়), ইন্দ্রপরী সিনেমা হল মোড়, রিজার্ভবাজার ও তবলছড়ি বাজার এলাকায় সকাল থেকে পুলিশ চেকপোষ্ট বসিয়ে চলাচলকারি যানবাহন তল্লাসী করতে দেখা গেছে।
রাঙামাটি জেলা শহরে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খোলা ছিল এছাড়া সকল সরকারি, বে-সরকারি অফিস বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষনা অনুযায়ী সকল ব্যাংক খোলা ছিল ব্যাংকিং লেন-দেন হয়েছে।
শহরের বনরুপা, তবলছড়ি ও রিজার্ভবাজার এলাকায় সকল মার্কেট, দোকান-পাট বন্ধ ছিল।
তবে কঠোর লকডাউনের প্রথমদিনের চেয়ে শহরের বনরুপা, তবলছড়ি ও রিজার্ভবাজার এলাকায় জনসমাগম বেশী ছিল। মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি। করোনা সংক্রামন ছড়িয়ে পড়ার আশংকা।
রাঙামাটিতে দুরপাল্লারসহ নৌপথে সকল যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সকল পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল-মোটেল ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ আছে।
কঠোর লকডাউন প্রথমদিন কার্যকর করতে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের তদারকি করতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মাঈন উদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ ও রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কবির হোসেনকে গাড়ি নিয়ে শহরে টহল দিতে দেখা গেছে।
সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনের ৭ম দিন কার্যকর করতে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাঈনুল ইসলাম খানসহ একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত (মোবাইল কোর্ট) রাঙামাটি শহরে টহল দিতে দেখা গেছে। এসময় ভ্রাম্যমান আদালতের সাথে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ বাহিনী ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে টহল দেন। এসময় রাঙামাটি শহরে সেনাবাহিনীকে পৃথকভাবে টহল দিতে দেখা গেছে।
কঠোর লকডাউন চলাকালিন ৭ম দিন শহরে জনসাধারনের চলাচল প্রথম দিনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশী, এতে করে করোনা সংক্রমনের হার বৃদ্বি পাচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়াও ঘর থেকে লোকজন বের হতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরী পরিসেবা কৃষি পণ্য, খাদ্যদ্রব্য, স্বাস্থ্য সেবা, রোগীবাহি গাড়ি, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা ফার্মাসিটিক্যাল ও গণমাধ্যমের গাড়ি ব্যতিত যাত্রীবাহি মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিক্সা শহরের মধ্যে চলাচল করছে।
কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে ভেদ ভেদী এলাকায় নিয়োজিত পুলিশের এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, আজ বুধবার বাজারের দিন হওয়াতে অন্য দিনের চেয়ে সাধারন জনগণ রাস্তায় বেশী বের হচ্ছে। শিশুদের টিকা দেয়ার কথা বলে এবং রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে লোকজন সিএনজি বা মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছে। বাঁধা দিলে বিভিন্ন উসিলা দেখাচ্ছে। এছাড় কৃৃষিপণ্য ও দোকানে মালামাল সরবরাহের কথা মানুষজন সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে রাস্তায় চলাচল করছে। পরিচয়পত্র দেখিয়ে মোটরসাইকেল রাস্তায় চলাচলকারীদের সংখ্যা দিন-দিন বেড়েছে।
কঠোর লকডাউন কার্যকর করতে তবলছড়িবাজার মোড় এলাকায় নিয়োজিত পুলিশের এএসআই নজরুল ইসলাম বলেন, বাজারের দিন হওয়াতে অন্যদিনের চেয়ে লোকজনের চলাচল-উপস্থিতি বেশী। ঘর থেকে বের হওয়া লোকজনদের কম-বেশী জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে।
কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ৭ম দিন কঠোর লকডাউন কার্যকর হচ্ছে এবং সরকার জারিকৃত বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে প্রতিপালনের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে ম্যাজিষ্ট্রেটসহ পুলিশ কর্মতৎপর রয়েছে বলে এএসআই নজরুল ইসলাম জানান।
বুধবার সকালে রিজার্ভবাজার এলাকার রাঙামাটি শিশু নিকেতন মাঠে কোভিড-১৯ এ ক্ষতিগ্রস্থ অস্বচ্ছল দুঃস্থ ও দরিদ্র জনগণের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা ১৩৭ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরন করেছে জেলা প্রশাসন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।
এদিকে করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমনের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার প্রথম পর্যায়ে কঠোর লকডাউন চলাকালিন ১ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল ৬ জুলাই মঙ্গলবার পর্যন্ত রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় মোট ৭১ টা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এসময় সরকারি নির্দেশনা পালন না করায় ও মাস্ক পরিধান না করায় ২৮৪ মামলা, ৮০,৩৫০ টাকা অর্থদন্ড করা হয়। কেবলমাত্র রাঙামাটি সদরে ৩৫ টা মোবাইল কোর্ট, ৯৩ মামলায় ৯৩ জনকে ২৭,৬৫০ টাকা অর্থদন্ড করা হয়।
জেলা সদরে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং কাউখালী, রাজস্থলী, কাপ্তাই, নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন।
তথ্যটি নিশ্চিত করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মাছুমা বেগম।
এছাড়া করোনাভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমনের বর্তমান পরিস্থিতি চলাকালিন ৬ জুলাই মঙ্গলবার পর্যন্ত রাঙামাটিতে পিসিআর ল্যাবে মোট নমুনা পরিক্ষা ১৩৪২৪ জন, মোট রোগী সনাক্ত ১৮৪৭ জন, মোট মৃত্যু ১৯ জন, ১ম ডোজ ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে ৩৩২১৪ জনকে, ২য় ডোজ ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছে ১৮৮৮১ জনকে, নতুন সনাক্ত সদর উপজেলা-১০জন, কাপ্তাই উপজেলা-৩, কাউখালী উপজেলা-২, লংগদু উপজেলা-২, বিলাইছড়ি উপজেলা-১, বাঘাইছড়ি উপজেলা-১। রাঙামাটি জেলায় করোনা সংক্রমিত বর্তমানে মোট ২৩১ জন চিকিৎসাধীন আছে।
এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ফোকাল পার্সন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।