শনিবার ● ৩১ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » টোল ট্যাক্সের টাকা মওকুফ করে দিলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলায় যাবেন রুমা সদর ইউপি সদস্যরা
টোল ট্যাক্সের টাকা মওকুফ করে দিলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলায় যাবেন রুমা সদর ইউপি সদস্যরা
রুমা (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: ইজারা ও নিলামের টোল ট্যাক্সের টাকা আদায় নিয়ে বান্দরবানের রুমা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে । ফলে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যরা গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সম্মানি ভাতা পাচ্ছেন না। এর সাথে গত এক বছর ধরে ইউনিয়ন পরিষদের অংশে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না- ইউপির নিয়োজিত চৌকিদার, দফাদার ও গ্রাম পুলিশেরা।
এ অবস্থায় তাদের সংসার চালাতে গিয়ে অর্থকষ্টে দিনযাপন করছে।
তবে ইজারা ও টোল ট্যাক্সের টাকা আদায় না হওযার পিছনে নিলাম ডাক গ্রহিতা ও ইউপি চেয়ারম্যান- সচিব এর মধ্যে দফা রফায় যোগসাজশে রয়েছে বলে জানা গেছে।
ইউপি সদস্যদের সূত্রে জানা যায় ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ম অনুযায়ী ১২মাসের জন্য গত বছর (২০২০) জুলাই মাসে ইজারা ও টোল ট্যাক্স আদায়ের জন্য নিলামের দরপত্র আহবান করা হয়। রুমা সদর ইউনিয়নে ভ্যাটসহ ২০ লক্ষ ৮১ হাজার ৫০০ টাকায় নিলাম গ্রহিতা হচ্ছেন বান্দরবানের বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু তৈয়ুব চৌধুরী। নিয়ম অনুযায়ী নিলামের দিনই ডাক গ্রহিতাকে লিলাম ডাকের চুড়ান্তু ধার্যকৃত মূল্য থেকে অর্ধেক টাকা জমা দিতে হয়। ভ্যাটসহ বাদাবাকি সম্পূর্ণ টাকা পরবর্তী ৯০দিনের মধ্যে জমা দিতে হয় ইউনিয়ন পরিষদকে। তবে নিলাম গ্রহিতা আবু তৈয়ুব সে নিয়ম অনুযায়ী টাকা জমা দেননি। সদর ইউপি’র অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সচিব উক্যথোয়াই চাক ‘প্রতিনিধিকে বলেন, টোল ট্যাক্স নিলাম চুক্তি অনুযায়ী নিলাম গ্রহিতা আবু তৈয়ুব এখনো সাত লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা ইউনিয়ন পরিষদের কাছে জমা দেননি। তার ভাষ্যমতে, বাকি টাকা জমা দানের ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান তাগিদ না দেয়ায় নিলাম গ্রহিতাকে এ পর্যন্ত কোনো তাগাদা চিঠি দেয়া হয়নি। তাছাড়া এর আগে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে রুমা সদর ইউপি টোল ট্যাক্স ও ইজারা নিলাম গ্রহিতা আওয়ামীলীগের নেতা সুধীর দাশ। তিনি এখনো বকেয়া এক লক্ষ টাকা পরিশোধ করেননি। তাঁর নামে নিলামের চুক্তির মেয়াদ শেষে তিন লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বকেয়া ছিল।
এবিষয়ে আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সুধীর দাশ প্রতিনিধিকে জানান, বকেয়া তিন লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মধ্যে নিজেদের মানুষ চেয়ারম্যান এক লাখ ৪০ হাজার টাকা মওকুফ করে দিয়েছেন। এক লাখ টাকা এক সপ্তাহ’র আগে জমা দিলাম আর বাকি এক লাখ টাকা আগামী দেড় - দুই মাসের মধ্যে জমা দিয়ে দেয়া হবে। তবে চেয়ারম্যানের টোল ট্যাক্সের বকেয়া মওকুফ করে দেযার ব্যাপারে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে- ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষতি আসনে মহিলা মেম্বার রূপনা বড়ুয়া বলেন, টোল ট্যাক্স ঠিকমতো আদায় না হওয়ায় গত প্রায় দুই বছর যাবত ইউপি সদস্য ও চৌকিদার- দফাদার ও গ্রাম পুলিশেরা ইউনিয়ন পরিষদ অংশে কোনো ভাতা পান না। চেয়ারম্যানের একক নিজ সিদ্ধান্তে যথেচ্ছায় ব্যয় করে থাকেন। ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য শৈহ্লাপ্রু মারমা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান অবহেলা ও আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারণে ইজারা -নিলামের টোল ট্যাক্স গ্রহিতারা টাকা দিচ্ছেনা।
এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রুমা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা বলেন, টোল ট্যাক্স আদায়ে নিলাম গ্রহিতা মো. আবু তৈয়ুব পাঁচ লক্ষ টাকা মওকুফ চেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কাছে এক সপ্তাহ আগে দরখাস্ত করেছেন। তিনি বলেন এনিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সভায় আলোচনাও হয়েছে নিলামের টাকা নিয়ে। নিলাম গ্রহিতাকে বলা হয়েছে যে, পাঁচ লক্ষ টাকা মওকুফ করা যাবে না। দুই লক্ষ ৫০০০ টাকা মওকূপ করা যেতে পারে। তবে এর আগে পাওনা সাত লক্ষ ৫০০০টাকার মধ্যে মোট পাঁচ লক্ষ টাকা আগে জমা দিয়ে দিতে বলা হয়েছে আবু তৈয়ুব চৌধুরীকে। তা নাহলে আবু তৈয়ুবের বিরুদ্ধে কিছু দিনের মধ্যে অনাদায়ী মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শৈমং মারমা।
বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের মধ্যে তীব্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনে সদস্য রূপনা বড়ুয়া, ৪,৫ ও ৬নং সংরক্ষিত আসনে সদস্য ক্রাসংউ মারমা, ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য থিয়াংময় বম ও ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য শৈহ্লাপ্রু মারমা বলেন টোল ট্যাক্স সংক্রান্ত কোনো সভা হযনি। কোনো কারণ ব্যতীত ২০১৯-২০২০ নিলাম ডাক গ্রহিতা পক্ষ নিয়ে চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে এক লক্ষ মওকূফ করে দিয়েছে। এবার একক সিদ্ধান্তে আড়াই লক্ষ টাকা মওকূফের ঘোষণা করছেন। ইউপি সদস্য শৈহ্লাপ্রু মারমা বলেন, নিলাম ডাক গ্রহিতাদের অর্থ মওকুফ করে দিলে চেয়ারম্যানের অদৃশ্য কিছু লাভ না হলে এ কাজ করতেন না। এবার টোল ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা না করে মওকুফ করে দিলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্যরা। তবে ১নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, টোল ট্যাক্স টাকা কিছু অংশ মওকুফ করার বিষয়ে কয়েকদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদে সভা হয়েছে।