সোমবার ● ৯ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় » চলচ্চিত্রের নায়িকা, মডেলসহ নারীকে গ্রেফতারের ঘটনা জাতীয় ইস্যুতে পরিনত করায় শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর নিন্দা
চলচ্চিত্রের নায়িকা, মডেলসহ নারীকে গ্রেফতারের ঘটনা জাতীয় ইস্যুতে পরিনত করায় শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর নিন্দা
শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর সভাপতি বহ্নিশিখা জামালী ও সাধারণ সম্পাদক রাশিদা বেগম আজ গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে দেশে করোনার এক ভয়াবহ দূ্র্যোগের সময় গত কয়েকদিন চলচ্চিত্রের নায়িকা, মডেলসহ কয়েকজন নারীকে গ্রেফতার ও গ্রেফতারের ঘটনাকে যেভাবে অনেকটা জাতীয় ইস্যুতে পরিনত করা হয়েছে তাতে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন এবং বলেছেন গ্রেফতারের আয়োজন দেখে মনে হয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর সদস্যরা যেন রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গ্রেফতার করছেন। সমগ্র ঘটনা গ্রেফতারের উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। নির্দিষ্ট কোন পরোয়ানা ছাড়া মাদক রাখাসহ যেসমস্ত অভিযোগে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তার আইনগত ভিত্তি কতটুকু সেটাও বড় বিবেচনার বিষয়। এসব অভিযোগে নারীদের আটক করতে হলে তো কেবল ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকাসমূয়ের কয়েক হাজার বাড়িতে অভিযান চালাতে হবে।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভের সাথে উল্লেখ করেন, এসব নারীদের আটকের পর আইন শৃংখলা বাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদেরকে যেভাবে চিত্রিত করেছেন ও তাদের সম্পর্কে যেসব আপত্তিকর বিশেষণ ব্যবহার করেছেন তা তাদের পেশাগত এক্তিয়ারবহির্ভত, বেআইনী, অশোভন ও নারীদের জন্য অপমানজনক। আদালতে অভিযোগ প্রমাণ হবার আগেই যেভাবে এই নারীদের ক্যামেরা ট্রায়াল হয়ে যাচ্ছে তা একদিকে অভিযোগের নিরপেক্ষ সুষ্ঠু তদন্তকে প্রভাবিত করছে, আর অন্যদিকে বিচারের আগেই তাদের বিচার হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত ঘটনা আইনশৃংখলা বাহিনীর পেশাদারী দায়িত্বকে গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমাদের বাহিনীর কোন কোন সদস্যরা ক্ষমতাবান বিশেষ কোন কোটারীদের দ্বারা প্রভাবিত কিনা নাগরিকদের মধ্যে এসব নিয়েও উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এই প্রশ্ন আরও জোরদার করেছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের অধিকাংশ মিডিয়াসমূহ নায়িকা ও মডেলদের এসব গ্রেফতারের ঘটনাকে দেশের মানুষের কাছে যেভাবে হাজির করছে তা দেশের নারীদের জন্য অসম্মান ও অমর্যাদাকর। তারা বলেন, গত কয়েকদিনের এসব বিষয় সমাজে নারীদের ক্ষমতায়ন , অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কেও ভুলবার্তা দিচ্ছে। দেশের চলচ্চিত্রসহ সাংস্কৃতিক জগৎ সম্পর্কেও ভুল ধারণা তৈরী হবে। এহেন তৎপরতা সমাজে নারীর সম্মান ও অধিকার বিরোধী বিকৃত ধর্মান্ধ প্রচারণাকে কেবল আরও জোরদার করবে।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনায় আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ রাষ্ট্র ও সমাজের চরম পুরুষতান্ত্রিক আচরণকেও দৃষ্টিকটুভাবে সামনে নিয়ে এসেছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
তারা প্রশ্ন তোলেন, আটক করা এই নারীদের সাথে রাষ্ট্র ও সমাজের যেসব বিত্তবান ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা - পুরুষেরা যুক্ত তারা কোথায়! তাদেরকে কেন এখনো আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না? জিজ্ঞাসাবাদে এই নারীরা ক্ষমতাবান যাদের নাম বলেছেন তাদেরকে কি আইনের আওতায় আনা হবে? তারা বলেন, ডিবি’র যে কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হোল তার শাস্তির বিধান কি?
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের সমাজে অধিকাংশ নারীরা,এমনকি বিরাট সংখ্যক পেশাজীবি নারীরাও নানাদিক থেকে বিপন্ন অসহায় ও নিরাপত্তাহীন থাকেন।সে কারণে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত যে রাষ্ট্রের অংগিকার নারী - পুরুষের সমতাবিধান- সে রাষ্ট্র, সরকার, তার বাহিনীসমূহকে নারীদের বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সতর্ক ও সংবেদনশীল হওয়া দরকার। তারা বলেন আদালতে গ্রেফতার করা নারীদের অপরাধ প্রমাণ হলে তারা নিশ্চয় দন্ডভোগ করবেন। কিন্তু তার আগে যেভাবে তাদেরকে প্রশাসনিক ও সামাজিক ভাবে নিগৃহীত ও দন্ডিত করা তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
তারা এই ব্যাপারে সবাইকে দায়িত্বশীল হবার আহবান জানান। একই সাথে তারা দেশের গণমাধ্যমসমূহকেও আরও দায়িত্বশীল হবার অনুরোধ জানান।