বুধবার ● ৯ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » যে ১২টি কারণে পাসপোর্ট প্রদানে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে সরকার
যে ১২টি কারণে পাসপোর্ট প্রদানে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে সরকার
অনলাইন ডেস্ক :: ১২ কারণে পাসপোর্ট প্রদানে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে সরকার। এত দিন বিষয়টি অলিখিত থাকলেও এখন সেটা আইনি রূপ দেয়া হচ্ছে । পুরনো আইনটি সংশোধন করে এ সংক্রান্ত বাংলাদেশ পাসপোর্ট আইন, ২০১৬ এর খসড়া তৈরি করেছে সরকার। এখন খসড়া আইনটি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে যাচাই বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর বাংলাদেশ পাসপোর্ট আইন ২০১৩-এর খসড়াটি অধিকতর যাচাই বাছাই ও পর্যালোচনা করে গত ২০শে জানুয়ারি নতুন আইনটি পাঠিয়েছে। খসড়া আইনের ৯ ধারায় পাসপোর্ট ও ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদানে অস্বীকৃতি কলামে বলা হয়েছে…আবেদনকারীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বা শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ থাকলে তিনি পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন না। এ ছাড়া আবেদনকারী যদি বাংলাদেশ কোলাবরেটস অর্ডার এবং দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর অধীনে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাকে পাসপোর্ট দিতে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। কারও বিরুদ্ধে রুজু করা ফৌজদারি মামলার উপস্থিতি এড়াতে বা তার অপরাধের বিচার বা দণ্ড এড়ানোর জন্য কেউ বাংলাদেশ ত্যাগ করতে উদ্যোগী হলে; মানিলন্ডারিং, মানব পাচার বা মুদ্রা, মাদকদ্রব্য বা অস্ত্র পাচারে বা অন্য কোনো আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ব্যবসায় জড়িত আছে মর্মে যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ থাকলে তাকে পাসপোর্ট প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। একই সঙ্গে সরকার কর্তৃক কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলে; গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আবেদনকারী বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশে সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হবে বা জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন ব্যক্তিকে অস্বীকৃতি জানানো যাবে। একই সঙ্গে কোনো বিদেশী রাষ্ট্রে আবেদনকারীর অবস্থানের কারণে সেই দেশের বা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া আবেদনকারী কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সংগঠন বা আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাকে পাসপোর্ট দেয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতি জানানো যাবে।
নতুন আইনে ছয় কারণে পাসপোর্ট আটক ও প্রত্যাহার করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আটক ও প্রত্যাহারের কারণের মধ্যে রয়েছে- পাসপোর্টে মৌলিক কোনো তথ্য গোপন করলে বা মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে; আদালত কর্তৃক পাসপোর্ট প্রত্যাহার বা আটক করার সুপারিশ করলে; কোনো পাসপোর্টধারীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলে এবং কোনো পাসপোর্টধারী পাসপোর্টের শর্ত ভঙ্গ করলে বা পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ সত্ত্বেও ওই পাসপোর্ট ফেরত দিতে ব্যর্থ বা অস্বীকৃতি জানালে পাসপোর্ট আটক বা প্রত্যাহার করা যাবে। আইনে বলা হয়েছে, কোনো ফৌজদারি আদালত পাসপোর্টধারীকে দণ্ড দিলে দণ্ড দেয়ার সময় তার পাসপোর্ট প্রত্যাহারের আদেশ দিতে পারবেন। এ ছাড়া কোনো ফৌজদারি আদালত কোনো অভিযুক্তকে জামিন দেয়ার শর্ত হিসেবে সাময়িকভাবে তার পাসপোর্ট আটক করতে পারবে। একই সঙ্গে সরকার বা সরকারের পূর্ব অনুমতি নিয়ে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ক্ষেত্রে কোনো পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে প্রত্যাহার বা আটক করতে পারবে।
পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, অননুমোদিতভাবে একাধিক পাসপোর্ট গ্রহণ করা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য সজ্ঞানে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য গোপন করেছেন বা পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে জালকৃত বা অন্যের দলিল বা কাগজপত্র জমা দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। সজ্ঞানে জালকৃত বা পরিবর্তনকৃত পাসপোর্ট অবৈধ উদ্দেশ্যে দখলে বা হেফাজতে রাখলে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কাজে বা অপরাধে ব্যবহারের জন্য কেউ পাসপোর্ট অধিকারী হলে বা সংগ্রহ করলে তিনি তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন। নতুন আইনে পাসপোর্টের জন্য তল্লাশি ও জব্দের বিধান রাখা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত ১৬ ধারায় বলা হয়েছে, পুলিশের উপ-পরিদর্শকের নিচে নন এমন কর্মকর্তা বা বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা যে কোনো স্থানে তল্লাশি করে যে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট জব্দ করতে পারবেন। এ ছাড়া প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন করে কেউ বহির্গমনের চেষ্টা করলে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) এর নিচে নন এমন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা ওই ব্যক্তিকে নৌ, জাহাজ, বিমান বা অন্য কোনো বাহন থেকে নামিয়ে আনতে পারবেন এবং তার পাসপোর্ট জব্দ করতে পারবেন। জব্দকৃত পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ৩০ দিনের মধ্যে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। যদি তা উপযুক্ত আদালতের কাছে উপস্থাপন না করা হয়ে থাকে। খসড়া আইন অনুযায়ি বিদেশি নাগরিকদেরও পাসপোর্ট ইস্যু করা যাবে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, এই আইনে যা কিছু থাকুক না কেন, সরকার জনস্বার্থে সমীচীন মনে করলে বা অন্য কোনো প্রচলিত আইনের বিধান বাস্তবায়নের প্রয়োজন হলে, কোনো বিদেশি নাগরিক বা রাষ্ট্রবিহীন ব্যক্তিকে এ আইনের অধীনে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিতে পারবে। আইনে অতি দ্রুত ইংরেজিতে অনূদিত একটি নির্ভরযোগ্য তৈরির বিষয়ে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা জানান, নতুন আইনটি নিয়ে ফাইল চালাচালি চলছে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শিগগিরই এটি চূড়ান্ত রূপ পাবে।