সোমবার ● ২৭ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » কুষ্টিয়ায় নৌকা ডুবাতে আ’লীগ নেতার গোপন বৈঠক : ভিডিও ভাইরাল
কুষ্টিয়ায় নৌকা ডুবাতে আ’লীগ নেতার গোপন বৈঠক : ভিডিও ভাইরাল
কে এম শাহীন রেজা কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: কুষ্টিয়ায় ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে গোপন বৈঠক করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতাতে গোপন বৈঠকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের এই ভিডিওটি ভাইরালের ঘটনা এলাকায় তোলপাড় শুরু করেছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গোপন বৈঠকে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত আছেন। সেখানে কুষ্টিয়ার একজন জাতীয় পর্যায়ের নেতার উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তব্য রাখছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারক। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে গ্যাঞ্জামের পর আসামিদের ছাড়ানোর জন্য আমি নেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, নৌকার অবস্থানটা ভালো নেই। ওর (নৌকার প্রার্থী) যা অবস্থা তাতে ভোট চাওয়ার মতো, করার মতো অবস্থা নেই। ’ ওই ভিডিওতে ওমর ফারক বলেন, ওসব বিশ্লেষণে যাবো না। আমরা ঘোড়া মার্কার ভোট করছি। আমার নৌকার ক্যান্ডিডেটের অবস্থা সবাই জানেন, তার পক্ষে জেতা সম্ভব নয়। তাই নির্দেশনা আসছে ঘোড়া মার্কার (বিদ্রোহী প্রার্থী) ভোট করার। তিনি আরও বলেন, আমি কোনো নেতার নাম বললাম না, তবে আমি সিগন্যাল মতো কথা বলছি। ’ এসময় উপস্থিত নেতারা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন- কে সিগন্যাল দিয়েছে আমি বলতে পারব না। এতো বিশ্লেষণ করে বলা সম্ভব নয়। আমাকে বলেছে, ঘোড়া মার্কার ভোট করতে, আমি ঘোড়া মার্কার ভোট করছি। তিনি বলেন, আমার সাহস নাই নৌকা মার্কার বিরুদ্ধে ভোট করার। আমি নৌকাকে জেতাতে পারছি না। যেহেতু আমাদের আওয়ামী লীগ করা একজন লোক দরকার সেই হিসেবে এই নির্দেশনা দিয়েছে। বটতৈল ইউনিয়নের কয়েকজন নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বৈঠকটি হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিকের অফিসে। ২৫ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে এই বৈঠকে ওয়ার্ড পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বক্কার সিদ্দিক। তিনি বলেন, ইউনিয়নের বর্তমান পরিস্থিতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ সম্পাদক সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীদের নামে মামলা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কী করণীয় ঠিক করতে আমি সব ওয়ার্ডের সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে ডেকেছিলাম। সেখানে আমি কোন কথা বলিনি। ওমর ফারুকই এসব বলেছেন। তবে ঘোড়া মার্কায় ভোট করার তার এ প্রস্তাব নেতারা সবাই মেনেও নেননি। আবু বক্কার বলেন, দুপুরের নামাজের আগে এসব আলোচনা হয়। পরে নামাজ পড়ে এসে সবাই খাওয়া দাওয়া করেন। ভিডিওর এই বক্তব্যের কথা স্বীকার করেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওমর ফারুকও। তিনি বলেন, কেউ একজন গোপনে এই ভিডিও করেছেন। তবে কোন নেতা এই সিগন্যাল দিয়েছেন তার নাম তিনি বলেননি বলেও দাবি করেন। এ ব্যাপারে কথা হয় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার সঙ্গে। তিনি বলেন, এরকম ভিডিওর ব্যাপারে তিনি জানেন না। তিনি বলেন, দলের বিপক্ষে কেউ কথা বললে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এমএ মোমিন মণ্ডল বলেন, এই বৈঠকের ভিডিও আমিও দেখেছি। এটা খুবই নিন্দনীয়। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তিনি ওমর ফারুককে উদ্দেশ্য করে বলেন, তিনি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি আসছেন জামায়াত থেকে। জামায়াত-বিএনপিকে সমর্থন করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেননি। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই তিনি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। আগামী ৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
কুমারখালী ও খোকসা ইউপি নির্বাচনে বিজয় বিপর্যয়ে পর্যদুস্ত নৌকা
কুষ্টিয়া :: চতুর্থ ধাপে ইউপি নির্বাচনে কুষ্টিয়ায় দুটি উপজেলায় ২০টি ইউনিয়নে প্রত্যাশিত বিজয় দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে আওয়ামী লীগ। বিজয় বিপর্যয়ে পর্যদুস্ত হয়েছে দেশের বৃহত্তম দল আওয়ামী লীগ। দুটি উপজেলার পুরো ২০ ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ৫টিতে জয় দেখাতে পেরেছে দলের মনোনিত প্রার্থীরা। অন্যদিকে ভাল ফল করেছে বিদ্রোহীরা যারা মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। আগের ধাপে জেলার মিরপুর-দৌলতপুর ও ভেড়ামারার বিপর্যয় থেকে দলটির জন্য অনেক কিছু শিক্ষণীয় ছিল। কিন্তু তা আমলে নেয়া হয়নি। ফলে দলের স্থানীয় পর্যায়ে কোন্দল, ভাগাভাগি ও চাটুকারিতায় বলি হচ্ছে বর্তমান সরকারের আকাশচুম্বী উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা। তবে এবারের চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে যারা স্বতন্ত্র, বিদ্রোহী এবং বিএনপির প্রার্থীর অধিকাংশই বিপুল পরিমাণ পরিমাণ ভোটের ব্যবধানে নৌকাকে পরাজিত করেছে। কুষ্টিয়া কুমারখালীতে ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে নৌকা জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে, ৮টিতে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী-স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি পন্থীরা। কয়া ইউনিয়নে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন, সদকী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মিনহাজুল আবেদিন দ্বীপ, বাগুলাটে নৌকার প্রার্থী আজিজুল হক নবা, যদুবায়রা ইউনিয়নে নৌকার মিজানুর রহমান মিজান। অন্যদিকে শিলাইদহে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী হাসান তারেক বিপ্লব, জগন্নাথপুর ইউনিয়নে আব্দুল্লাহ আল বাকী বাদশা, নন্দলালপুরে জিয়াউর রহমান, চাপড়া ইউনিয়নে এনামুল হক মনজু, চাঁদপুর ইউনিয়নে হাফিজুর রহমান তুষার, পান্টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি পন্থী হাফিজুর রহমান ও চরসাদিপুরে মেছের আলী খান। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার ভয়াবহ ভরাডুবি হয়েছে। অপ্রকাশিত প্রাথমিক ফলাফলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া ৮ ইউনিয়নে নৌকা জয় পেয়েছে মাত্র দুটিতে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা জিতেছে ৪টিতে। আর বিএনপি পন্থী জিতেছে দুটিতে। মনোনয়নে টাকার বাণিজ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের নৌকা প্রতীক দেয়ার কারনে এ বিপর্যয় বলে মনে করা হচ্ছে। খোকসার জানিপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র মজিবর রজমান মজিদ বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছে। শিমুলিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস প্রতীকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছে। ওসমানপুর ইউনিয়নে বিএনপি পন্থী ওয়াহিদুল ইসলাম ডাবলু বিজয়ী হয়েছে। শোমসপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী বদর উদ্দিন খান বিজয়ী হয়েছে। আমবাড়িয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আকমল হোসেন জয়লাভ করেছে। খোকসা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মালেক, গোপগ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোতালেব হোসেন ও জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাকিব হাসান টিপু বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে বেতবাড়িয়া ইউনিয়নে আগেই বিজয়ী হন খোকসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবুল আকতার। এদিকে আওয়ামী লীগের এই ভয়াবহ পরাজয়ে দলের নেতাকর্মীরা দুষছেন মনোনয়নে চরম ধরনের অনিয়মকে। খোকসা উপজেলা এবারের নির্বাচনে খুবই গুরুত্বর্পণ ছিল। উপজেলার নির্বাচনের প্রতি সবার দৃষ্টি ছিল। কারন এই উপজেলাতেই বসবাস করেন আওয়ামী লীগের জেলার র্শীর্ষ নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান। সদর খানের একক সিদ্ধান্তে ও কতৃত্বে এই উপজেলাতে মনোনয়ন দেয়া হয় বলে জানা যায়। এখানে প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন আওমী লীগের অসংখ্য ত্যাগী নেতা-কর্মী। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।