বৃহস্পতিবার ● ৬ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ঢাকা » নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সংলাপ অপ্রয়োজনীয় ও প্রচারসর্বস্ব : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
নির্বাচন কমিশন গঠনকল্পে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সংলাপ অপ্রয়োজনীয় ও প্রচারসর্বস্ব : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: আজ সকালে সেগুনবাগিচায় সংহতি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন এই সংলাপ অপ্রয়োজনীয়, প্রচারসর্বস্ব ও রাষ্ট্রপতির মূল্যবান সময়ের অপচয় মাত্র। কারণ রাষ্ট্রপতি ব্যক্তিগতভাবে যাই মনে করুন না কেন, বাস্তবে সরকার তথা প্রধানমন্ত্রীর মতামত ও পরামর্শের বাইরে সাংবিধানিকভাবে তাঁর কিছুই করার অবকাশ নেই। বিগত দুই নির্বাচন কমিশন এবং তার আগে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে সংলাপ ও সার্চ কমিটির অভিজ্ঞতাই তার এক বড় নজির। বিশেষ করে নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের তিক্ত ও করুণ অভিজ্ঞতা তার প্রমাণ। সরকার ও সরকারি দল অনুগত এই নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীন ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে দেশের মানুষের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে, সরকারি দলের পক্ষে কাজ করতে যেয়ে দেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই তুলে দিয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ও মর্যাদা পুরোপুরি ভূ-লুন্ঠিত করেছে। গোটা নির্বাচনকে হাস্যকর, প্রতারণাপূর্ণ আর নির্মম তামাশায় পরিণত করেছে। নির্বাচনের চেয়ে সরকারি দলের মনোনয়ন পাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর নির্বাচনকে ইতিমধ্যে ব্যবসায় পরিণত করা হয়েছে। ব্যতিক্রম ছাড়া নির্বাচন পুরোপুরি টাকার খেলা, পেশীশক্তি, প্রশাসনিক ম্যানিপুলেশন আর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাফিয়াদের দৌরাত্মের ক্ষেত্রে পর্যবসিত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক কার্যকরি নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমরা বিগত ০৩.০৮.২০১৭ সালে সংলাপকালে নির্বাচন কমিশনের কাছে ৩৬ দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
এই প্রেক্ষিতে এবারও যেভাবে সংলাপের আয়োজন, সার্চ কমিটি ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত সরকারি দলের পছন্দের বাইরে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবার কোন সুযোগ নেই। দুঃখ ও পরিতাপের সাথে উল্লেখ করতে হচ্ছে, এসব বিষয়ে কথা বলতে দেশের ৫৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের জন্য যে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাকেও সম্মান জানানো হয়নি। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার ধ্বসে পড়ার সংকটটি রাজনৈতিক। রাষ্ট্রপতির উপর ভর দিয়ে এই সংকটের সমাধান করা যাবে না। সরকারকে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে এই সংকট সমাধানে কার্যকরি ও বিশ্বাস সযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিদ্যমান সংকট উত্তরণে তিনি পার্টির পাঁচ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন:
এক॥ অনতিবিলম্বে সরকারকে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে দেশে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐক্যমত্য ও সমঝোতার ভিত্তিতে সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী আইনী কাঠামো প্রণয়ন করে নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, দক্ষ ও মেরুদণ্ডসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
দুই॥ মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাঁর পদের নৈতিক ক্ষমতার জোরে রাজনৈতিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে দ্রুত রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে সরকারকে সুনির্র্দিষ্ট পরামর্শ দিতে পারেন। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এই ক্ষেত্রে সময়ের অজুহাত কোন সমস্যা নয়।
তিন॥ ইতিমধ্যে কয়েক দফায় রাজনৈতিক দলসমূহ প্রদত্ত মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে দেশে ভেঙ্গে পড়া সমগ্র নির্বাচনী ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন এবং মাফিয়া সন্ত্রাসীদের দৌরাত্মমুক্ত অবাধ নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরী।
চার॥ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনে ভোটের সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন; যাতে সংসদ আরও প্রতিনিধিত্বমূলক হয়।
পাঁচ॥ বিদ্যমান ব্যবস্থায় যেহেতু দেশে দলীয় সরকারের অধীনে ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই সেই কারণে বর্তমান সরকার কিভাবে কখন পদত্যাগ করবে এবং কিভাবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠিত হবে রাজনৈতিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সে ব্যাপারেও ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
তিনি আশা করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাই নির্বাচনকেন্দ্রীক গভীর সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাসমূহ বিবেচনায় নেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আবু হাসান টিপু, আনছার আলী দুলাল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, সিকদার হারুন মাহমুদ, কামরুজ্জামান ফিরোজ, ঢাকা মহানগর নেতা সালাউদ্দীন আহমেদ, কাঞ্চন মিয়া প্রমুখ।