সোমবার ● ২৪ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ মগড় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ মগড় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির,ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: নলছিটি উপজেলায় সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে লুটপাট করার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ওয়ার্ড ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে এ গাছ কাটিয়ে ট্রলারে সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঝালকাঠি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন সেক্টর প্রকল্পের অধীনে ২০০১-০২ অর্থবছরে নলছিটি মগড় ইউনিয়নের আমিরাবাদ বাজার হয়ে খাওখীর মিল ঘড় পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কের পাশে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প করা হয়। এ সময় রেইনট্রি, মেহগনি, কড়ই, শিশু, আকাসমনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫ হাজার গাছ লাগানো হয়। মগড় ইউনিয়ন পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি এই বনায়নে যুক্ত ছিল।
সমিতির সভাপতি আলমগির হোসেন খান জানান, তাঁদের নারী সদস্যসহ ৪০ জন সদস্য রয়েছে যাঁরা ওই সামাজিক বনায়নের বড় অংশের (৭০ শতাংশ) মালিক। আমার কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হান্নান হাওলাদার তার কাছে সকল কাগজপত্র আছে। আমি তাকে অবহিত করেছি। এই সামাজিক বনায়ন প্রকল্প হওয়ার সময় এলজিইডি থেকে আমাদের ট্রেনিং দেওয়া থেকে গাছের পহাড়া দেওয়ার জন্য মাসে মাসে টাকাও দিয়েছে। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য গত ২২ ও ২৩ জানুয়ারি দুইদিনে ছোট-বড় ৫ শতাধিক গাছ বিক্রি করেছে স্থানীয় গাছ ব্যবসায়ী মো. আফাংউদ্দিনের কাছে। গাছ ব্যবসায়ী আফাংউদ্দিনের ১০-১৫ জন শ্রমিক দিয়ে গাছগুলো কেটে দ্রুত ট্রলারে নিয়ে যাচ্ছে বলে সমিতির সভাপতি আলমগির হোসেন খান জানান ।
গাছ ব্যবসায়ী আফাংউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই গাছ গুলো এলাকার কবির হোসেন, মিজান শরিফসহ কয়েক জনের কাছ থেকে ক্রয় করেছি। তাদের জমিতে বলে তারা বিক্রি করেছে। কয়টি গাছ ক্রয় করেছেন ও কত টাকায় জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন।
গাছ ব্যবসায়ীর তথ্য মতে এলাকার কবির হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় থাকি। আমরা সরকারি গাজ বিক্রি করব কেন। আমি একটু বাড়িতে ফোন করে জেনে নেই। তিনি জানান, এই বনায়নের গাছ গুলো ইউপি চেয়ারম্যান মো.এনামুল হক শাহিন ও ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলু মিলে বিক্রি করেছে। খাওখীর গ্রামের রাসেল, আরিফ হোসেনসহ কয়েক জন বলেন, গত কয়েক দিনে নির্বিচারে গাছ কেটে নিচ্ছে শ্রমিকেরা। এরপর শ্রীরামপুর খালে ট্রলার ভিড়িয়ে গাছ গুলো অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে মগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো.এনামুল হক শাহিন বলেন, ভাই ২/৩ টা গাছ কেটেছে এলাকার লোকজন। কিন্তু এ গাছের দাবি করছে মগড় ইউনিয়ন পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি। তাদের আজ (২৪ জানুয়ারি) ইউনিয়ন পরিষদে আসতে বলেছি। এই সামান্য বিষয় নিয়ে সকাল থেকে আমাকে জবাব দিতে দিতে কাহিল হয়ে পরেছি। আমি এ গাছ কাটানোর কথা সঠিক নয়। গাছ গুলো কেটে দ্রুত ট্রলারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসি গাছ কাটলে ট্রলারে নিবে কেন জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন আজ সুরাহা করা হবে।
ঝালকাঠি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা ২৮দিন পর কর্মস্থলে
ঝালকাঠি :: ঝালকাঠি সরকারী হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হোসনে আরা আরজু মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারনে বিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পরেছে। বার্ষিক পরীক্ষা ও নতুন ভর্তির সময় কালেও প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারনে অলিখিত দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ফরিদ লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন শ্রেনীতে বেপরোয়া ভর্তি বানিজ্যে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে বেশ কিছু ছাত্রীকে অবৈধ ভর্তির ঘটনা শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে জানাজানির পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে প্রধান শিক্ষিকা আরজু ২৮ দিন পর ২২ জানুয়ারী শনিবার কর্মস্থলে আসেন বলে জানাগেছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির (জেলা প্রশাসক) নাম ভাংগিয়ে উক্ত দুই শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারীতা ও দূর্নীতির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার
পর অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, ৫ এপ্রিল ২০২১ই তারিখে ঝালকাঠি সরকারী হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিক পদে হোসনে আরা
আরজু যোগদানের পর থেকে চলতি ২২জানুয়ারী পর্যন্ত মাত্র ২৫ দিন বিদ্যালয়ে আসেন। মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও তিনি বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন প্রকার ছুটি বা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে অবগত করেনি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষিকের অনুপস্থিতিতে নিয়মানুযায়ী তার পরবর্তী জেষ্ঠ শিক্ষককে লিখিত ভাবে দায়িত্ব দেয়ার বিধান থাকলেও তিনি
বিভাগীয় নিয়মকানুনের কোন তোয়াক্কা করেনা। বরং বিধিবিধান লংঘন করে তিনি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসকের দোহাই দিয়ে দ্বিতীয় জেষ্ঠ শিক্ষক ফরিদ হোসেনকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে চলে যান।
এ বিষয়ে কেউ মুখ খুললে বা প্রতিবাদ করলে প্রধান শিক্ষিক আরজু ও শিক্ষক ফরিদ মিলে জেলা প্রশাসকের কানভারি করে তার বিরুদ্ধে নানারকম চাপ সৃষ্টি ও হয়রানি করে থাকেন। যে কারনে বিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষকরা কারো কাছে মুখ খুলতে বা অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেনা বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছে। এরফলে ঝালকাঠির মেয়েদের শিক্ষা গ্রহনের এ প্রধান শিক্ষাপিঠ সরকারী হরচন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড দারুন ভাবে ব্যহত হচ্ছে। তবে দীর্গ দিন ধরে এঅবস্থা বিরাজ করলেও প্রতিকারের যেনো কেউ নেই।
একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষক অভিযোগ করেন, চলতি শিক্ষা বর্ষে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শুধূমাত্র তৃতীয় শ্রেনীর প্রভাতি ক,খ ও দিবা শাখায় ৬০জন করে মোট ১৮০জন এবং ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে দিবা শাখায় ৬০জন শিক্ষার্থী ভর্তির কোটা নির্ধারিত করে দেয়া হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষিক আরজু অনুপস্থি থেকে অলিখিত দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ফরিদকে দিয়ে বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেনীর প্রতিটি শাখায় ও ৬ষ্ঠ শ্রেনীর একটি শাখায় ৬০টি কোটার স্থলে ৬২/৬৩জন করে ভর্তি করে তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগে আরো জানাযায়, শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এই দুই শিক্ষক মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ৪র্থ, ৫ম,৭ম ও ৮ম শ্রেনীর প্রভাতী ও দিবা শাখায় বেশ কিছু ছাত্রীকে ভর্তির বানিজ্যে মেতে ওঠেন। বর্তমানে এ শ্রেনীগুলোর প্রতিটি শাখায় ৬০জনের স্থলে ২জন থেকে সর্বচ্চো ৬জন পর্যন্ত শিক্ষার্থী বেশী রয়েছে। এসব শ্রেনীর ক্লাশ টিচারদের হাতে বিষয়টি ধরা পরলে তাদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে আলাপ আলোচনার সুযোগে অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা হোসনে আরা আরজুর (০১৭১৫৪৭৩৪৫২) কাছে জানতে চাইলে ‘তিনি প্রতিদিন ২৪ঘন্টা অফিস করেন বলে দাবী করেন। চলতি শিক্ষা বর্ষে ৩য় ও ৬ষ্ঠ শ্রেনীর প্রতি শাখায় ভর্তির কোটা কয়টি জানতে চাইলে তিনি ‘এটা সভাপতি জেলা প্রশাসকের কাছে জানতে’ বলেন। তিনি বলেন, আমাদের ভর্তি শেষ হয়ে গেছে, বলতে হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ কে বলবো। আপনি জানতে চাইবেন কেনো? কোটার অতিরিক্ত ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা লিখে দিন, আমি জবাব দিলে কর্তৃপক্ষকে দিবো’।