শুক্রবার ● ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » মাইকেল চাকমার সন্ধান চেয়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৬ষ্ঠ জেলা যুব সম্মেলন
মাইকেল চাকমার সন্ধান চেয়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৬ষ্ঠ জেলা যুব সম্মেলন
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক মিঠুন চাকমা গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান,
খাগড়াছড়িতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ৬ষ্ঠ জেলা যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ক্যামেরন চাকমাকে সভাপতি, শুভ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও উৎপল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার ২৫ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা সদর এলাকায় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনের ব্যানার শ্লোগান ছিল, “ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার সন্ধান দাও, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ কর, শাসকগোষ্ঠীর ক্রীড়নক-দালালী-লেজুড়বৃত্তি নয়, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলি”।
সকাল ১০টায় সম্মেলনে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব লিটন চাকমার সঞ্চালনায় ও আহ্বায়ক ক্যামরন চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সংগঠক অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি নরেশ ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রতিনিধি ইশা চাকমা।
এরপর পার্বত্য চট্টগ্রামে লড়াই সংগ্রামে শহীদ মিঠুন চাকমা, পঞ্চসেন ত্রিপুরা, সুপ্রীম চাকমা, পলাশ চাকমাসহ অসংখ্য শহীদদের স্মরণে ও তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং যারা সরকার, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী কর্তৃক নিপীড়ন-নির্যাতনে পঙ্গুত্ববরণ করে অসহায় দিনযাপন করছেন তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য শুভ চাকমা। এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সংগঠক অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি নরেশ ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রতিনিধি ইশা চাকমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, সরকার ২০১১ সালের ৩০ জুন বিতর্কিত পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে পাহাড়িদের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পাহাড়িদের নিপীড়ন নির্যাতন চালানোর জন্য ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক দমনমূলক ‘১১ নির্দেশনা’ জারি করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি বলতে গেলে একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রয়েছে।
তিনি পার্বত্য চট্গ্রামে গণতান্ত্রিক অধিকার রুদ্ধ করা হয়েছে অভিযোগ করে বলেন, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদ, মিছিল, সভা-সমাবেশ করা যাচ্ছে না। যদিও তা সংবিধানস্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। আন্দোলনকারীদের দমন করার জন্য সরকার তাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠী লেলিয়ে দিয়ে হামলা, খুন, গুম, অপহরণসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে স্বনির্ভর বাজারে পুলিশ পোস্ট ও বিজিবির হেডকোয়ার্টারের সামনে শাসকগোষ্ঠীর লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে যুবব নেতা পলাশ চাকমাসহ সাতজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত ইউপিডিএফ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামসহ সহযোগী অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে আজ এই যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের ন্যায্য অধিকার তথা পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ও চলমান নিপীড়ন-নির্যাতন ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই বেগবান করতে যুব সমাজকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানান।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে যুব সমাজকে আন্দোলন বিমুখ করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। যুব সমাজের মধ্যে মাদকদ্রব্য ছড়িয়ে দিয়ে কিংবা নানা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে শাসকগোষ্ঠী তাদেরকে বিপথে পরিচালিত করার মাধ্যমে শাসন-শোষণ ও নির্যাতন চালিয়ে যেতে চায়। তাই এ বিষয়ে যুব সমাজকে সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, যুব শক্তিই হচ্ছে আন্দোলনের প্রধান শক্তি। আগামী দিনের আন্দোলন জোরদার করার জন্য গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতৃত্বে যুব সমাজকে আরও দঢ়ভাবে সংগঠিত হতে হবে। সকল নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতা নরেশ ত্রিপুরা বলেন, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠের মাধ্যমে উগ্রবাঙালী জাতীয়তাবাদের ভাবধারা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে। তিনি এর তীব্র নিন্দা জানান এবং যুব সমাজকে শাসকগোষ্ঠীর উগ্রবাঙালী জাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের প্রতিনিধি ইশা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার নির্যাতনের পাশাপাশি জুম্মদের ওপর ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে। সাংস্কৃতিকভাবেও আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। পাহাড়ি নারীরা প্রতিনিয়ত নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কোথাও নারীদের নিরাপত্তা নেই। বিদ্যমান নিপীড়নমূলক শাসন ব্যবস্থায় নারীরা এগিয়ে যেতে পারছে না। তিনি নিজেদের নিরাপত্তা বিধানে যুব সমাজের পাশাপাশি নারী সমাজকেও আন্দোলনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
সম্মেলন থেকে বক্তারা ২০১৯ সালে গুম হওয়া ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে সন্ধান দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও চলমান রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধের দাবি জানান।
পরে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে ক্যামেরন চাকমাকে সভাপতি, শুভ চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও উৎপল চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট নতুন খাগড়াছড়ি জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান।