মঙ্গলবার ● ২২ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » রাঙামাটিতে হাসপাতালের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকান নির্মাণ
রাঙামাটিতে হাসপাতালের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে দোকান নির্মাণ
ষ্টাফ রিপোর্টার :: (২২ মার্চ ২০১৬ :বাংলাদেশ সময় রাত ৮.২০মিঃ) পর্যটন শহর হিসেবে খ্যাত পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নাম শুনলে যেকোন সৌন্দর্য প্রিয় মানুষকে কাছে টানে৷ ছিমছাম ছোট শহর, চারদিকে ঘিরে আছে এশিয়ার বৃহত্তম লেক কাপ্তাই লেক ৷ কিন্তু এই শহরের ঐতিহ্য আর আগের মত নেই৷ একদিকে রাজনৈতিক সঙ্কট অন্যদিকে সৌন্দর্য রক্ষায় প্রশাসনের বিমাতা সুলভ আচরন আর অবৈধ স্থাপনায় ভরে গেছে পুরো শহর৷ কয়েকবছর আগেও শোনা যেত অমুকের জায়গা তমুক দখল করেছে, জায়গা দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ইত্যাদি ইত্যাদি৷ যেন জায়গা দখলের হিড়িক পড়েছে৷ ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা থেকে শুরু করে সরকারী জায়গায় পর্যন্ত খলদারদেরই দৌড়াত্য৷ কিন্তু এই কয়েক বছরে সেইসব দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করাতে দখলবাজি একটা ভয়ানক ছোঁয়াসে রোগ হয়ে গেছে, তাই হয়তো বর্তমানে প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষও পর্যন্ত তাদের কীর্তিকান্ডে ঘুমের ভান করে থাকে৷
কিছু দিন আগে আমরা বলেছিলাম রাঙামাটির ভেদভেদী ও কলেজ গেইট এলাকার সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারী জায়গা দখল এবং কাপ্তাই লেকের জায়গা দখল নিয়ে৷ এবার বলতে হচ্ছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার একমাত্র হাসপাতাল রাঙামাটি সদর হাসপাতালের চলাচলে রাস্তা সরকারী জায়গা দখল নিয়ে৷
রাঙামাটি সদর হাসপাতালের সড়কটি জরুরী রোগীবাহী গাড়ি চলাচলের জন্য প্রসস্থ থাকা অত্যান্ত প্রয়োজন কিন্তু অবৈধ দখলদারদের সড়কের জায়গা দখলের কারনে হাসপাতাল সড়কটি সরু হয়ে গেছে৷
চট্টগ্রাম - রাঙামাটি প্রধান ডাকঘর থেকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক)পর্যন্ত মাঝখানে হাসপাতাল গেইট থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত জায়গাটি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের৷ যা গণপুর্ত বিভাগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য হুকুম দখল করে আজ থেকে ৩০ বছর আগে৷ চট্টগ্রাম - রাঙামাটি প্রধান সড়ক থেকে হাসপাতালে প্রবেশের যে সড়কটি রয়েছে তার দুই দিকে অবৈধ স্থাপনা তো আছেই, এখন নতুন করে শুরু হয়েছে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার জায়গা দখলদারি৷ হাসপাতালে আসার পথে বাম দিকে মিনতি ফার্মেসীর বিপরীতে যে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মান করা হচ্ছে বিল্ডিংয়ের সাথে লাগোয়াভাবে রাস্তার জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন ভাবে দোকানপাট৷
এই জায়গার পূর্বের মালিক ঠিকাদার মিজানুর রহমান জানান, যেখানে দোকান ঘর নির্মান করা হচ্ছে সেই জায়গাটি আমি বিক্রি করি নাই এবং জায়গাটি আমার সীমানা প্রাচীরের ভিতরে কখনো ছিলনা, জায়গাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের৷ কেউ বেআইনীভাবে হাসপাতালের জায়গা অবৈধবাবে দখল করলে তারা আইনী ব্যবস্থা নিতে পারেন, এতে আমার বলার বা করার কিছু নেই৷
এসব অবৈধ দোকান গড়ে ওঠা বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক চিকিত্সক (আরএমও) ডা. মং ক্যা শিং বলেন, আমি খেয়াল করি নাই, একটু সরেজমিনে দেখতে হবে৷
গণপুর্ত বিভাগ কোন জায়গা বা স্থাপনা করে দেয়ার পরবর্তী যদি কোন বেআইনী বা অবৈধ দখলদার জায়গা দখল করে সেক্ষেত্রে গণপুর্ত বিভাগের কোন ভুমিকা আছে কিনা এবিষয়ে জানতে রাঙামাটি গণপুর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী জহির রায়হানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমাদের গণপুর্ত বিভাগের জায়গা হলে অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে৷ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে আমরা জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে পারি৷
হাসপাতালে আসার পথে বাম দিকে মিনতি ফার্মেসীর বিপরীতে যে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মান করা হচ্ছে বিল্ডিংয়ের সাথে লাগোয়াভাবে রাস্তার জায়গা দখল করে নির্মানাধীন দোকান ঘরের বিষয়ে জহির রায়হান বলেন, অতিসম্প্রতি আমি ওখানে যায়নি তাই বিষয়টি জানিনা, তবে আমি কালকেই সরেজমিনে গিয়ে দেখবো৷ আমাদের গণপুর্ত বিভাগের জায়গা যদি কেউ অবৈধভাবে দখল করে আমরা অবশ্যই আইনী ব্যবস্থা নেবো৷
বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তিদের এমন “দেখবো” জাতীয় আশ্বাস পাই ঠিক, কিন্তু বাস্তবে রুপদানে কোন যথাযত পদক্ষেপ না থাকার কারণে আজ রাঙামাটিতে এত অবৈধ জায়গা দখলদারিত্ব প্রথা গড়ে তোলা হয়েছে৷ আর এইসব অবৈধ দখলদারিত্বের সব বিষয়ে জ্ঞাত থাকার পরও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ভুমিকা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন৷
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে বিশেষ করে জেলা শহর গুলিতে প্রত্যেকদিন প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে৷ নিরপেক্ষ থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন তড়িত্ পদক্ষেপ না থাকার কারণে এই দখলদারেদের দুঃসাহস এতদুর গড়িয়েছে৷ যেকোন অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলতে সময় লাগে, উপযুক্ত সময়ের মধ্যে প্রশাসন যদি তাত্ক্ষনিক পদক্ষেপ নিতো দখলদারেরা অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলতে পারতো না৷ অবৈধ স্থাপনা গড়া হয়ে গেলে অবৈধ দখলদারেরা জায়গার মালিক হয়ে যায়৷ আমরা অবৈধ দখলদারির বিষয়ে সমতলের উদাহরণ দিতে পারি , সমতলে অবৈধভাবে জায়গা দখলের সাহস তো অনেক দুরের কথা, একটা ইটও অথবা অবৈধভাবে কেউ খুটি স্থাপন করে তার অবস্থা কি হবে সেটা কারোরই অজানা নয়৷ আর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা সবকিছু জেনেও মুখে কুলুপ এটে বসে থাকেন আর নাকে তেল দিয়ে ঘুমান৷
রাঙামাটি শহরের ম্যাজিষ্ট্রেট কলেনীর সামনে থেকে প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট(পিটিআই) এর রাস্তার দুই পাশে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনার কারণে গুরুত্বপুর্ণ এই রাস্তাটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম৷ প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট এলাকার পরিবেশ দেখে মনে হয় অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলার প্রতিযোগীতায় নেমেছে অবৈধ দখলদারেরা৷ তবুও প্রশাসনের কর্তারা প্রশ্ন করেন কোথায় হচ্ছে অবৈধ দখল? নির্দিষ্ট করে দেখিয়ে দেন৷ দেখিয়ে দিলে “ধন্যবাদ” দেন৷
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একজন সাংবাদিক ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের উচিত্ বেশি করে কচু শাক খাওয়া, এতে চোখের জ্যোতি বাড়বে, চোখের সামনে সব পরিষ্কার দেখবেন৷
উল্লেখ্য, সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী জেলা, আন্তঃজেলা সড়ক ও মহাসড়কের দুই পাশে যত অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা রয়েছে সেগুলো উচ্ছেদের ঘোষণা দেন৷ রাঙামাটিতে এ কার্যক্রম পরিচালনা বা রাস্তার দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৷
এব্যাপারে রাঙামাটি সড়ক বিভাগের উচ্চমান সহকারী আমির হোসেন বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানিনা৷