বৃহস্পতিবার ● ১৭ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » ইউপিডিএফ নেতা মিলনকে সেনা হেফাজতে হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
ইউপিডিএফ নেতা মিলনকে সেনা হেফাজতে হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: আজ ১৬ মার্চ বুধবার ১২ টায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর সংগঠক নবায়ন চাকমা (মিলন) কে সেনা হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ,বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ রাঙামাটি জেলা শাখা ।
সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমার সঞ্চলনায় ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম রাঙামাটি জেলার সভাপতি ললিতধন চাকমা সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ সংগঠক জয়েন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা প্রতিনিধি রিমি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের প্রতিনিধি মহিমা চাকমা।
সমাবেশে বক্তরা বলেন, নবায়ন চাকমা (মিলন ) শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তিনি দীঘিনালা উপজেলা ৪ নং দীঘিনালা ইউনিয়নের বাগানপাড়া এলাকার মনিভদ্র পাড়ায় একজনের বাড়িতে বিশ্রামরত অবস্থায় ছিলেন। গত ১৫ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে তিনটার সময় দীঘিনালা সেনা জোনের একদল সেনা সদস্য তার অবস্থান করা বাড়িটি ঘেরাও করে এবং তাকে আটক করে । আটকের পর পরই সেনারা মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। ইচ্ছেমত নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়লে সেনারা মুমূর্ষ অবস্থায় সেখান থেকে ক্যাম্পে নিয়ে আসে এবং দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দীঘিনালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা: সানজিদা জানান, মিলন চাকমাকে যখন হাসপাতালে আনা হয় তার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বক্তরা আর ও বলেন , পাহাড়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।কখনো ক্রসফায়ার, কখনো অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করে প্রতিনিয়ত পাহাড়ের সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকার কারণে নাগরিকের অধিকার ভূলঞ্চিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে দীর্ঘদিন ধরে বিশাল এক সেনা কারাগার বানিয়ে রাখা হয়েছে। সেনাবাহিনী নিরাপত্তা নামে পাহাড়ে ঘুম ,খুন, ধর্ষণ, তল্লাশি করে জনজীবন নিরাপত্তাহীনতায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিদেশে যতই না প্রশংসীত হচ্ছে তার চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘৃণিত হচ্ছে।
বক্তরা পাহাড়ে বিচার বহির্ভূত হত্যা কান্ড, ক্রসফায়ার, অস্ত্র উদ্ধারে নাটক ও প্রমোশন বানিজ্য বন্ধের দাবি জানান।নবায়ন চাকমার (মিলন) হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষী সেনাদের তদন্ত করে দৃষ্টান্তমঅূলক শাস্তির দাবি জানান।
দীঘিনালায় সেনা হেফাজতে ইউপিডিএফ নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সেনা হেফাজতে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা ওরফে মিলন চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া দীঘিনালা, বাঘাইছড়ি ও সাজেকে পালিত হয়েছে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি।
মঙ্গলবার ১৫ মার্চ ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে দীঘিনালা উপজেলার ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাগানপাড়া এলাকার মনিভদ্র কার্বারী পাড়ায় দীঘিনালা জোনের একদল সেনা তাদের সৃষ্ট কয়েকজন দুর্বৃত্তকে সাথে নিয়ে নবায়ন চাকমা মিলনকে আটক করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। পরে মুমুর্ষু অবস্থায় সেনারা তাকে দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে সেখান তাঁর মৃত্যু হয়।
তাঁর আটক ও মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে তাৎক্ষণিকভাবে দীঘিনালা, বাঘাইছড়ি ও সাজেকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ইউপিডিএফ’র স্থানীয় ইউনিটগুলো। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা অবরোধ পালন করে।
অপরদিকে, হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ বিকালে খাগড়াছড়ি উপজেলা সদর, পানছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, গুইমারা, রামগড়, বাঘাইছড়ি ও সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী তিন সংগঠনের নেতা-কর্মিরা।
এসব জায়গায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বক্তারা ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা ওরফে মিলনকে বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়ে বিচার বহির্ভুতভাবে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বক্তারা বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মুখপাত্র সংগঠন ইউপিডিএফ-এর কন্ঠকে রুদ্ধ করার জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যার কারণে তারা বিনা বিচারে ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে। আজকে যেভাবে বর্বরোচিতভাবে নির্যাতন চালিয়ে তারা ইউপিডিএফ নেতা মিলনকে হত্যা করা হয়েছে, এর আগে একই কায়দায় তারা নান্যাচরে পিসিপি নেতা রমেল চাকমাকেও নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। এছাড়া এযাবত তারা আরো বহু নেতা-কর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা করেছে। বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তারা দেশের আইনকে পদদলিত করছে। সরকারকে এই বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের জন্য অবশ্যই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত নিপীড়নকে জায়েজ করতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচার বহির্ভুত হত্যা ছাড়াও অন্যায় ধরপাকড়, রাত-বিরাতে নিরীহ জনসাধারণের ঘরবাড়িতে তল্লাশি, অস্ত্র গুজে দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে প্রেরণ, সশস্ত্র দুর্বৃত্তগোষ্ঠীকে মদদ ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে খুন, গুম, অপহরণ, নারী নির্যাতন, ভূমি দেখল এখন নিত্য নৈমিত্ত্যিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
বক্তারা বলেন, ইউপিডিএফ’র নেতা-কর্মীদের হত্যা করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন চলবে। যতই দমন-পীড়ন চালানো হবে ততই জনগণের আন্দোলন জোরদার হবে বলে বক্তারা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে সেনা হেফাজতে ইউপিডিএফ নেতা নবায়ন চাকমা মিলনসহ এ যাবত বিনা বিচারে হত্যার ঘটনায় জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারপূর্বক সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান।
খাগড়াছড়ি সদর: “পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও বিনা বিচারে হত্যা বন্ধ কর” এই স্লোগানে আজ মঙ্গলবার বিকালে খাগড়াছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন এর জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা।
পানছড়ি : দীঘিনালায় সেনা হেফাজতে ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা মিলনকে হত্যার প্রতিবাদে পানছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) পানছড়ি ইউনিট। আজ বিকালে পানছড়ি উপজেলার পুজগাং-এর মনিপুর এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বড়কলকে এসে শেষ হয় এবং সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুনীল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র পানছড়ি উপজেলা ইউনিটের সংগঠক সম্রাট চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক পিংকু চাকমা।
লক্ষ্মীছড়ি : দীঘিনালায় ইউপিডিএফ সংগঠক হত্যার প্রতিবাদে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়ন, দুল্যাতলী ও বর্মাছড়ি ইউনিয়নের কুতুকছড়ি এলাকায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিল পরবর্তী পৃথক পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত সমাবেশসমূহে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সভাপতি রুপান্ত চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মিঠুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য মধুমালা চাকমা, জাতিসত্তা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের নেতা বিনোদ মুন্ডা ও ইউপিডএফ সংগঠক নিরব চাকমা।
গুইমারা : আজ বিকাল ৪টায় দীঘিনালায় সেনা হেফাজতে ইউপিডিএফ নেতা হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ’র গুইমারা-মাটিরাঙ্গা ইউনিটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এত বক্তারা অভিযোগ করেন সরকার সেনাবাহিনীকে দিয়ে বিচার বহির্ভুতভাবে যাকে ইচ্ছে তাকে হয় গুলি করে নয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করছে। সরকারকে অবিলম্বে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে।
রামগড় : দীঘিনালায় সেনা হেফাজতে নির্যাতন চালিয়ে ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা ওরফে মিলন-কে হত্যার প্রতিবাদে আজ বিকালে রামগড়ে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা সাধারণ সম্পাদক লিটন চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা সভাপতি অসীম চাকমা।
সাজেক ও বাঘাইছড়ি: দীঘিনালায় সেনাবাহিনী কর্তৃক অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা মিলনকে হত্যার প্রতিবাদে আজ বিকালে রাঙামাটির সাজেক ও বাঘাইছড়িতে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছ ইউপিডিএফ। সাজেকের গঙ্গারাম ও মাচলং এলাকায় এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় ইউপিডিএফের স্থানীয় ইউনিটসমূহ এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
সাজেকের গঙ্গারাম এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশে কমন চাকমার চঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাজেক ইউনিটের ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা। মাচলং এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক প্রান্তিক চাকমা।
অপরদিকে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর এলাকায়ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ইউপিডিএফ বাঘাইছড়ি ইউনিট। লক্ষীমিত্র চাকমার সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন রিয়েল চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি রত্ন জ্যোতি চাকমা।
সেনা নির্যাতনে ইউপিডিএফ-এর নেতা নবায়ন চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় পিসিপি’র বিক্ষোভ
সংবাদ বজ্ঞিপ্তি :: পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক প্রতিনিয়ত রাত-বিরাতে হত্যা,খুন,গুম, অপহরণের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা পাহাড়ে জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনকারী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের দমনের উদ্দেশ্য করা হচ্ছে। এসব রাজনৈতিক এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে পাহাড় ও সমতলের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আজ বুধবার ১৫ মার্চ বিকাল সাড়ে ৪ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় ইউপিডিএফ-এর নেতা নবায়ন চাকমা (মিলন)-কে সেনাবাহিনীর দিঘীনালা সদর জোনের একটি দল কর্তৃক আটকের পর অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার প্রতিবাদে ও এ ঘটনার সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এই আহ্বান জানান।
সমাবেশে অমল ত্রিপুরা বলেন, সেনা হেফাজতে আটকের পর নির্যাতন করে নবায়ন চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন কিছু নয়। পাহাড়ে এই ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। ২০১৭ সালে রাঙামাটির নান্যাচরে পিসিপি নেতা রমেল চাকমাকে সেনা হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার লাশ সামাজিক-ধর্মীয় রীতি-নীতিকে উপেক্ষা করে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে ২০১৮ সালে মিঠুন, অনাদি, অনল চাকমা ও কাঠাং ত্রিপুরাসহ আরো অনেক নেতা-কর্মী, সাধারণ জনগণকে হত্যা এবং ২০১৯ সালে একই উপজেলায় (দীঘিনালায়) বড়াদাম এলাকায় কথিত বন্দুক যুদ্ধের নাম করে বুজেন্দ্র্র্র, রসিল ও নবীন চাকমাকে বিনা বিচারে হত্যা করেছিল সেনাবাহিনী। এছাড়াও সাজেক, নান্যানচর, রাঙামাটি ও বান্দরবানে বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যাকন্ডের ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনাগুলোর সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার না হওয়াতে সেনারা আজকে নবায়ন চাকমাকে নির্যাতন করে হত্যা করার দুঃসাহস পেয়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের আইনানুসারে কোন নাগরিক অপরাধ করলে আইনের আওতায় এনে আদালতে বিচার করা হয়। আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু নবায়ন, রমেল চাকমাদের বিনা বিচারে নির্যাতন করে হত্যাকান্ডের ভার কিভাবে পেলো পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনারা? এটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন নয় কি? যারা রক্ষক, তারা ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে পাহাড়ি জনগণ কার কাছে নিরাপত্তা পাবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণবিরোধী ‘ ১১ দফা ’ নির্দেশনার জারি করার মাধ্যমে সেনা শাসনকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। যার ফলে সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁদের অপারেশন উত্তরণের নাম ব্যবহার করে ইচ্ছেমতো পাহাড়ি জনগণের উপর নিপীড়ন-নির্যাতন, রাতের আধারে বিনা অনুমতিতে ঘরবাড়ি তল্লাশি, অপহরণ, মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক, কারা ফটক থেকে পুনরায় গ্রেফতার করে নতুন মামলায় দেখিয়ে আটক, খুন-গুম-হত্যা, নারী ধর্ষণ ও ক্যাম্প স্থাপনের নামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করা এবং অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে কতিপয় সেনা কর্মকর্তাদের প্রমোশন বাণিজ্য করা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সমাবেশ থেকে তিনি, নবায়ন,মিঠুন রমেল চাকমাসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের কর্তৃক সকল হত্যাকান্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে সকল ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধের দাবি জানান।
সংহতি বক্তব্যে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেতা জাবের হোসেন জুবেল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন করছে। এটিকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি পাহাড়ি জনগণের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
সমাবেশে সোহবত শোভন বলেন, পাহাড়ে জাতিগত নিপীড়ন চলছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে এটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে নবায়ন চাকমাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের অভিপ্রায়ে সরকার সেখানে সমতল থেকে লক্ষাধিক বহিরাগত সেটলার বাঙালি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও তথ্য প্রচার সম্পাদক রিপন জ্যোতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি ঢাকা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রনেল চাকমা, সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক জাবের হোসেন জুবেল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সোহবত শোভন। এছাড়াও উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মিতু সরকার।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে শাহবাগ ঘুরে এসে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।