সোমবার ● ২১ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবিতে সড়ক অবরোধ : ইউএনও’র হস্তক্ষেপে প্রত্যাহার
বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবিতে সড়ক অবরোধ : ইউএনও’র হস্তক্ষেপে প্রত্যাহার
মো. আবুল কাশেম, স্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের বিশ্বনাথ ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর জনবহুল সড়ক সংস্কার কাজে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন লাখ লাখ যাত্রীসাধারণ। প্রায় তিন বছর ধরে ঠিকাদারের মনগড়া সময় নিয়ে অবহেলিত কাজ আর অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এই জনপদের জনসাধারণ।
প্রতিদিনই ঠিকাদারের খোঁড়া অংশে মালবাহি ও যাত্রীবাহি গাড়ি আটকে গিয়ে ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
একাধিকবার কাজের মেয়াদ শেষ হলেও জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আতাঁত করে ঠিকাদার সময় বাড়িয়ে রাজার হালে কাজ করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। জনবহুল এই সড়কের মাত্র এক কিলোমিটার আরসিসি ঢালাই কাজ করতে একবছর সময় লাগিয়েছেন। তাও তিনবার সড়ক বন্ধ করে এই আরসিসি ঢালাই কাজ করেছেন তিনি।
আর এর প্রতিবাদে জনসাধারণের পাশাপাশি ফুঁসে ওঠেছেন এই সড়কের পরিবহণ শ্রমিকরা। শ্রমিক নেতারা দ্রুত সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করার দাবিতে ও অন্তহীন ভোগান্তির প্রতিবাদে সড়কের উপর তাদের মিনিবাস এলোপাতাড়িভাবে রেখে সড়ক অবরোধ করেন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পীরের বাজার ও মিয়ার বাজারে ৬ঘন্টা তারা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহানের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিক নেতারা।
এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর-বিশ^নাথ রামপাশা সড়কের বাস মিনিবাস শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ফজর আলী, জগন্নাথপুর বাস মিনিবাস শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি গোলাম রব্বানী, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান সঞ্জু দেব ও তৈয়বুর রহমাসহ আরও অনেকে।
সড়ক অবরোধকালে বরযাত্রীর গাড়ি, যাত্রীবাহি ও মালবাহি গাড়ি আটকে বিশাল যানজটের সৃষ্ঠি হয়। ফলে স্কুল কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জনসাধারণ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এসময় সিলেট থেকে জগন্নাথপুর যাওয়ার পথে যানজটে আটকা পড়েন জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আখতারুজ্জামান আকতার।
এসময় মেয়র শান্তনা দিয়ে শ্রমিক নেতাদের সাথে কথা বলেন। শ্রমিক নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন।
দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পর মেয়র জেলা প্রকৌশলীকে বলেন উপস্থিত শ্রমিক নেতাদের সাথে সমন্বয় করে একটু কথা বলেন।
কিন্তু জেলা প্রকৌশলী মেয়রের কথা রাখেন নি। পরে মেয়র তার গাড়ি যানজটে রেখেই মোটরসাইকেলে চলে যান। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী এপ্রিল মাসের ভেতরে কাজ শেষ করার আশ্বাস দেন।
শ্রমিক নেতা ফজর আলী বলেন, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আতাঁত করে সাব ঠিকাদার সুহেল খান তার ইচ্ছেমতো সময় নিয়ে আর জনসাধারণকে ভোগান্তি দিয়ে ধীরগতিতে কাজ করছে। দ্রুত এই সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করা না হলে আগামি ২৭মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে বলে জানান। তবে ঠিকাদারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ইউএনও নুসরাত জাহান বলেন, ঠিকাদার ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বসা হবে। আর যাতে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, তাই কতদিনে কাজ শেষ করবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছ থেকে লিখিত নেয়া হবে।
বিশ্বনাথে ১৩ কিলোমিটার সংস্কার কাজ দীর্ঘ দুই বছর ধরে শেষ দেখছেন না জনসাধারণ
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে সড়ক প্রসস্থকরণ ও সংস্কার কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সুহেল এন্টার প্রাইজ’র অবহেলায় ‘বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়কে’ চলাচলের ক্ষেত্রে জনদূর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
কাজ শেষ করার নির্দিস্ট সময়কাল বৃদ্ধি করার পরও সড়কের কাজ শেষ না হওয়ার ফলে সোমবার (২১ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে সড়কে বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক দূর্ভোগে অতিষ্ঠ হয়ে উঠা পরিবহন শ্রমিকরা।
এদিকে সড়ক সংস্কার কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারিতা ও অবহেলার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠার সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সরকারি দলের অনেক নেতা ‘বরাদ্ধ দিয়েও, সরকারের সমালোচনা করার মাধ্যম হয়ে উঠা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের’ বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের ফেসবুক একাউন্টে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন বাধ্য হয়েই।
সম্প্রতি ‘সরকারের উন্নয়নকে কৌশলে থামিয়ে দিয়ে, সাধারণ মানুষকে সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ করে তুলতে বিএনপি-জামায়াতের আর প্রয়োজন নেই। এজন্য শুধু বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়ক সংস্কার কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই (মেসার্স সুহেল এন্টার প্রাইজ) যথেষ্ট’ বলে নিজের ফেসবুক একাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
আর এই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেন বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক মহাব্বত আলী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে গিয়ে লিখেছেন ‘খাঁটিকথা, মনের কথা. আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের কোন প্রতিবাদী নেতা নেই, আমাদের আছেন নিজ নিজ বলয় ভারী করতে চামছা জামাত-বিএনপির এজেন্সি কাউয়াদের (কাক) প্রিয় নেতা, প্রিয় ভাই হতে। আর আজীবন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী তৃনমুল পর্যায়ের কর্মীদের জন্য আছেন আল্লাহ’।
এমনি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়ক সংস্কার কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের (মেসার্স সুহেল এন্টার প্রাইজ) বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে প্রতিবাদি হয়ে উঠছেন সমাজের বিভিন্ন স্থরের ক্ষুব্ধ জনসাধারণ। যেকোনো সময় প্রকাশ্যে রাজপথে এর বিস্ফোরন ঘটতে পারে বলেও ধারণা করছেন বিজ্ঞজনেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বিশ্বনাথ পৌর শহরের প্রান কেন্দ্র থেকে জগন্নাথপুর সীমানা পর্যন্ত মাত্র ১৩ কিলোমিটার সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ দুই বছর ধরে জনভোগান্তির এই কাজের শেষ দেখছেন না জনসাধারণ। এর ভেতরে একবার কাজের মেয়াদও শেষ হয়েছে।
একই সাথে কাজ শুরু করে বিশ্বনাথের পার্শ্ববর্তি জগন্নাথপুর উপজেলার অংশের কাজ মেয়াদের ভেতরেই সম্পন্ন করেছেন সেই ঠিকাদার। অথচ বিশ্বনাথ উপজেলার অংশের ঠিকাদার ক্ষমতার অপব্যবহার করে, নিজের প্রভাব দেখিয়ে মেয়াদ বাড়িয়ে বছরের পর বছর পার করে ধীরগতিতে করছেন তার অংশের কাজ।
মেয়াদ শেষ হওয়াকালীর সময়ের মধ্যেও বিশ্বনাথ অংশের ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ কিলোমিটার অংশের কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি এই ঠিকাদার। সম্প্রতি ময়নাগঞ্জ বাজার থেকে বিশ্বনাথের সীমানা ৮ ঘর পর্যন্ত ভালো সড়কের কার্পেটিং খোঁড়ে রাখা হয়েছে।
ফলে ওই খোঁড়া কার্পেটিং অংশে মালবাহী ট্রাক ধেঁবে গিয়ে ৬/৭ ঘন্টা উভয় পাশে যাত্রীবাহী গাড়ি আটকে যানজট সৃষ্টি করছে। আর ওই যানজটে আটকে থেকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ।
এছাড়াও দুই বছরে চান্দশির কাপন থেকে বিশ্বনাথ পৌর শহর পর্যন্ত মাত্র এক কিলোমিটার আরসিসি ঢালাই কাজে জনবহুল এই সড়কটিতে চলাচল বন্ধ করা হয়েছে তিনবার, এরপরও শেষ হয়নি। আর একাধিক বার সড়কে চলাচল বন্ধ হওয়ার ফলে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া ও সময় ব্যয় করে আরও অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে বিশ্বনাথ বাজারে প্রবেশ করতে হয়েছে বা হচ্ছে।
দীর্ঘ প্রায় দু’বছরেরও বেশী সময় অন্তহীন ভোগান্তির শিকার হওয়া সিলেটের বিশ্বনাথ ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার লাখ লাখ মানুষ দূর্ভোগের শেষ হবে কোন দিন তা কেউই জানেন না।
এব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সুহেল এন্টার প্রাইজ’র সত্ত্বাধিকারী সুহেল খানের সাথে গত কয়েক দিন ধরে সরাসরি বা মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও থাকে পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী আবু সাইদ বলেন, আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর ভেতরে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
বিশ্বনাথের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক নুশরাত জাহান বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের নেতাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়কে বাস চলাচল বন্ধ না করার জন্য বলা হয়েছে। আর সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দ্রুত সড়কের কাজ শেষ করার প্রদক্ষেপ নেওয়ায়।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এস এম নুনু মিয়া বলেন, নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে দ্রুত সড়কের কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।