শনিবার ● ৭ মে ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ এবং হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি
লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ এবং হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সিনিয়র কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব চাকমা বান্দরবানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ভূমি বেদখল, পাহাড়ি উচ্ছেদ ও জুমভূমি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ করতে দ্রুত আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
আজ ৭ মে ২০২২ শনিবার সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি গত ২৬ এপ্রিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক লামার সরই ইউনিয়নের তিন পাহাড়ি গ্রামের সাড়ে ৩০০ একর জুমভূমি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি পরিবারগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও দাবি জানান।
বান্দরবানে সবচেয়ে অবহেলিত, পশ্চাদপদ ও বৈষম্যের শিকার ম্রো ও ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর বাস্তুভিটা বেদখল ও তাদেরকে উচ্ছেদ করে কোম্পানীর মুনাফা লাভের চেষ্টা অত্যন্ত ঘৃন্য ও নিন্দনীয় বলে সচিব চাকমা মন্তব্য করেন এবং বলেন স্বাভাবিকভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে উঠছে।
মেরিডিয়ান কোম্পানীর সাথে মিলে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ গত কয়েক বছর ধরে লামায় ম্রোসহ পাহাড়ি জাতিসত্তার লোকজনকে তাদের বংশপরম্পরায় ভোগদখল করে আসা জুমভূমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে ইউপিডিএফ নেতা অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘উক্ত দুই কোম্পানীর লোকজন এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পাহাড়ি পরিবারগুলোকে হামলা, মামলা ও তাদের ঘরবাড়ি ও ক্ষেতখামার আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আসছিল। ২০১৯ সালে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোন কাজ হয়নি, কোম্পানী দুটি তাদের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ করেনি। তাদের হুমকি ও হয়রানির কারণে ডলুছড়ি মৌজার ঢেঁকিছড়া গ্রামের ১৪টি ম্রো পরিবার ইতিমধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।’
সচিব চাকমা বলেন, ‘লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ইতিমধ্যেদ ম্রোদের ৩০০ একর জমি জবরদখল করেছে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে গত ২৬ এপ্রিল কোম্পানীর লোকজন আরও জমি বেদখলের জন্য ল্যাংকম পাড়া, রেংয়েন পাড়া ও জয়চন্দ্র পাড়ায় পাহাড়িদের সাড়ে ৩০০ একর জমির ফসল আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এতে তাদের বনজ, ফলদ ও ঔষধী গাছসহ জুমের ধানক্ষেত নষ্ট হয়, যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।’
তিনি উক্ত হামলাকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও জঘন্য অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, অবিলম্বে উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, রাবার বাগানের নামে ম্রোসহ পাহাড়িদের উচ্ছেদ ও তাদের জমি বেদখল বন্ধ করতে হবে, বেদখলকৃত জমি মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
পাহাড়িদের বংশপরম্পরায় ভোগদখল করা জমি তথাকথিত খাস চিহ্নিত করে কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ইজারা প্রদান কিংবা অধিগ্রহণের কোন অধিকার সরকারের নেই বলে সচিব চাকমা দাবি করেন। ‘যেখানে শিক্ষাদীক্ষা, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য উন্নয়নসূচকে পশ্চাদপদ ম্রোসহ অন্যান্য পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোকে ভূমি অধিকারসহ তাদের সার্বিক বিকাশের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো তাদেরকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, যা চরম অন্যায়, অমানবিক এবং সংবিধানের মূলনীতি ও মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।’
সচিব চাকমা সরকারের বিরুদ্ধে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতি পক্ষপাত ও ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের অভিযোগ করেন এবং বলেন, ‘ঘটনার সময় ম্রো ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীদের জানমাল রক্ষায় এগিয়ে না আসা, হামলাকারীদের নিরস্ত না করা এবং ঘটনার এতদিন পরও সরকারী কোন কর্মকর্তা কর্তৃক ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করা সেটাই প্রমাণ করে।’
ন্যায়বিচার লাভের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে মন্তব্য করে ইউপিডিএফ নেতা লামায় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোম্পানীর কিংবা সরকারের অন্যায় জবরদখল আর নিরবে সহ্য করবেন না। স্থানীয়ভাবে নিজেরা সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। লড়াই সংগ্রাম হলো অধিকার আদায়ের একমাত্র পথ। আপনারা একা নন, ইউপিডিএফ পার্টি আপনাদের সাথে রয়েছে।’