রবিবার ● ১৯ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ময়মনসিংহে টানা বর্ষনে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে
ময়মনসিংহে টানা বর্ষনে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ধেবাউড়ায় টানা বর্ষনে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়ছে হাজার হাজার পরিবার। ফলে পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটছে সাধারণ কেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষ সহ এলাকাবাসির।
স্থানীয়রা জানান, ধেবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের খাগগড়া এলাকায় নিতাই নদীর ভাঙ্গনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকশেদ আলীর বাড়িসহ একাধিক বাড়ি পানিতে ভেসে গেছে। রক্ষা পাইনি এই বাড়িতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রায় ৮০ শতাংশ কমপ্লিট হয়ে যাওয়া বীর নিবাসটিও। এই ভাঙ্গন এলাকার প্রায় দশটি পরিবারের ব্যাপক ক্ষতির পাশাপাশি ওখানে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও ২নং গামারিতলা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে নিতাই নদীর ভাঙ্গনে প্রায় বিশটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়াও নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রবল শ্রুতে নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করায় ঢলের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম। এ অবস্থায় পানিবন্দী হয়ে পড়ছে হাজার হাজার পরিবার। চরম কষ্টে দিন কাটছে সাধারণ কেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষের। অনেকের ঘরে পানি থাকায় রান্নাবান্না করতে পারছেনা। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটছে তাদের।
খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের খাগগড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোকশেদ আলীর বাড়ির পাশে,গামারিতলা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে নিতাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্রবল বেগে স্ব স্ব শব্দে পানি ঢুকে নিচু এলাকার পোড়াকান্দুলিয়া, দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারিতলা, গোয়াতলা, ধোবাউড়া সদর, বাঘবেড় ইউনিয়নে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেইসাথে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। নিজের জীবনের পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে এলাকাবাসি। এমনকি ঢলের পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ।
বন্যা কবলিত তারানগর গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন,‘ বন্যার পানিতে আমরা গৃহবন্দী হয়ে আছি, ঘরের চুলা পানির নিচে, রান্না করা য়ায না, বাচ্চাদের নিয়ে শুকনো খাবার খেয়ে কোনরকম বেঁচে আছি।
বেদগাছিয়া গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমরা যে কি কষ্টে আছি এটা বলার মত কোন ভাষা নেই, ঘরের মধ্যে পানি।
পুরাকান্দুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মন্জুরুল হক জানান, কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ইউনিয়নের ২৮টি গ্রামের অধিকাংশই প্লাবিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বেশীরভাগ প্লাবিত গ্রামগুলো হচ্ছে বহরভিটা, বেতগাছিয়া, পুটিয়াকান্দা, টেকিরভিটা, আদরাপাতাং, রাউতি ও হরিণধরা। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন সরকার জানান, পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত গ্রামগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইশতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল বলেন ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘একটি বীর নিবাস’ মুক্তিযোদ্ধা মোকশেদ আলীর পরিবারকে দেওয়া হয়েছিলো , যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমপ্লিট হয়েছিল, দরজা জানালার কাজ চলমান ছিলো। দুঃখের বিষয় পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বীর নিবাসটিও নদীগর্ভে চলে গেছে।
এব্যাপারে ধেবাউড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম ও ইউএনও ফোজিয়া নাজনীন জানান, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে আমরা ইতিমধ্যে বন্ধ্যার্তদের জন্য দশ মেট্রিকটন চাল ও একলক্ষ টাকা পেয়েছি, আগামীকাল থেকে শুকানো খাবার, দু’টি করে মোমবাতি, পানি পরিষ্কারের ট্যাবলেট সহ ত্রাণ বিতরণ করা হবে।