বৃহস্পতিবার ● ১৪ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে ব্যতিক্রমী বিয়ে
ঝিনাইদহে ব্যতিক্রমী বিয়ে
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়ি যাবে বর। বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে ফিরবে বাড়ি। আমাদের দেশে সচরাচর এমনটাই হয়। কিন্তু বিয়ের প্রচলিত প্রথা ভেঙে গতকাল বুধবার (১৩ জুলাই) ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে ঘটলো এর উল্টো ঘটনা। কনেযাত্রী নিয়ে বরের বাড়িতে হাজির হন কনে। তবে বিয়ের পর বরের বাড়িতেই থাকেন তিনি। কনে সংস্কৃতিকর্মী ইতি সেলিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িচালক আব্দুল কাদেরের মেয়ে। আর বর একই উপজেলার সামসুদ্দিন লস্করের ছেলে এম এ মালেক শান্ত। তিনি পেশায় বেসরকারি একটি টেলিভিশনের সাংবাদিক। জানা গেছে, বুধবার দুপুরে কয়েকটি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে করে ৪০-৫০ কনেযাত্রী নিয়ে একই উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের এম এ মালেক শান্তর বাড়িতে হাজির হন কনে। প্রথাগতভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশমুখে যেভাবে বরকে বরণ করা হয়, তেমনি এই বিয়েতেও কনেকে ফুলের মালা পরিয়ে, মিষ্টি মুখ করে বরণ করে নেন বরপক্ষের আত্মীয়-স্বজনরা। এরপর বর-কনে আসনে বসে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। সব অতিথিদের আপ্যায়ন করানো হয় এবং কনে থেকে যান বরের বাড়িতে। কনেযাত্রীর মধ্যে ছিলেন ইউএনও কানিজ ফাতেমা লিজা, এসি ল্যান্ড বনি আমিন, কনের বাবা আব্দুল কাদেরসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনরা। ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে উৎসাহের কমতি ছিল না। বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে বরের বাড়িতে যেমন উৎসাহী লোকজনের ভিড় ছিল তেমনি কনের বাড়িতেও অনেক মানুষ জড়ো হন। আর এই প্রথার বাইরের বিয়ের প্রস্তাবটি আসে মূলত বর শান্তর পক্ষ থেকে। তিনি চেয়েছেন এই বিয়ের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। কনের বাবা আব্দুল কাদের জানান, বরের বাড়িতে তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেযাত্রী হিসেবে তিনি সহ পরিবারের সদস্যরা এসেছেন। ব্যতিক্রমী এ বিয়েতে আসতে পেরে তিনি অত্যন্ত খুশি। এ বিষয়ে কনে ইতি সেলিনা বলেন, ছেলেরা যদি পারে মেয়েদেরকে বিয়ে করে নিয়ে আসতে তাহলে মেয়েরা কেন পারবে না। কনে যাত্রীদের বরের বাড়িতে নিয়ে বিয়ে করতে পেরে আমি অনেক খুশি। তিনি আরও বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম এভাবে বিয়ে করবো, ঠিক হবে কি না। কিন্তু পরে আমি রাজি হই। শুরুতে দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশী আপত্তি জানালেও পরে তারা রাজি হন। ব্যতিক্রমী এ বিয়ে নিয়ে বর এম এ মালেক শান্ত বলেন, এই বিয়ের মাধ্যমে সমাজে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। আমরা চেয়েছিলাম বিয়ের একটি নতুন ধারা তৈরি করতে। এতে সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য একটু হলেও কমবে। তিনি জানান, এই বিয়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে হয়েছে। কনে তার পূর্বপরিচিত। পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। শৈলকুপার ইউএনও কানিজ ফাতেমা লিজা জানান, ব্যতিক্রমী এ বিয়ের কনে ইতি সেলিনা তার গাড়িচালকের মেয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেযাত্রী হিসেবে তিনিও উপস্থিত ছিলেন।
আষাড় মাসেও বৃষ্টি নেই, কৃষকরা দিশেহারা
ঝিনাইদহ :: আষাড় মাস শেষ, অথচ বৃষ্টি নেই। এবার ভরা আষাড়ের দেখো মেলেনি বৃষ্টির। ফলে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। বীজতলা দিতে না পেরে অনেক কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আষাড় মাসের এই শেষ দিকে আগে দিনভর টিপটপ বৃষ্টি আর মাঠঘাট থৈথৈ করতো পানিতে। আর এখন ভরা আষাড়ে চৈত্রের খরায় পুড়ছে ঝিনাইদহ। গোটা জেলার কোথাও ভারি বর্ষনের দেখা মেলেনি। এ নিয়ে ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগও শংকায় পড়েছে। মাঠঘাট পানি শুন্য। উচ্চমুল্যের ডিজেল কিনে বীজতলা তৈরী করতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে কাংখিত বৃষ্টি না হলে একদিকে যেমন কৃষকের সেচ খরচ বৃদ্ধি পেয়ে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, অন্যদিকে আমন ও আউস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশংকা দেখা দিতে পারে। সাধুহাটীর বংকিরা গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ দিয়ে বীজতলা তৈরী কেেরত হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কৃষক বাবলুর রহমান জানান, আউস আবাদে সম্পুরক সেচ দিতে হচ্ছে, অথচ আগে সেচ লাগতো না। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজগর আলী জানান, ভরা আষাড়ে বৃষি না হওয়ায় কৃষকদের হেক্টর প্রতি খরচ বেড়ে যাবে। তাছাড়া অনেক কৃষক এখনো বীজতলা দিতে পারেনি। করণ আমন আবাদ পুরো আষাড়ের বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল। কৃষিবিদ আজগর আলী আরো জানান, চলতি আবাদ মৌসুমে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় এক লাখ ছয় হাজার ৮৩৮ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৬ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে আউসের আবাদ হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় উভয় আবাদ ঝুকির মুখে পড়েছে।
বিক্রি নেই কোরবানী পশুর চামড়া
ঝিনাইদহ :: জরিনা বেগম একটি ছাগল কোরবানি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। অগত্য তিনি চামড়া ফ্রি দিয়েছেন। আনোয়ার পাশার ২০ কেজি ওজনের ছাগলের চামড়া বিক্রি করেছেন ২০ টাকায়। আতিকুর রহমানের ৮০ কেজি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র এক’শ টাকায়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পশুর চামড়া বিক্রি হতাশা ব্যক্ত করেছেন। অথচ এই চামড়া ১০ বছর আগেও তারা চড়া দামে বিক্রি করে সেই টাকা গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন, চামড়া বিক্রি তো দূরের কথা, কেউ নিতেও আসেনি। কোরবানির পর চামড়া বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। বিক্রি করতে না পেরে পরে নিজ খরচে কেউ কেউ আড়তে পৌছে দিয়েছেন। সাধুহাটী ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান হাবু বলেন, আমি একটি খাসি কোরবানি দিয়েছি। চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, সরকার চামড়ার যে রেট দিয়েছে তার অর্ধেক দামও চামড়া বিক্রি করতে পারেনি মানুষ। ক্ষোভ প্রকাশ করে ফারুক হোসেন নামে এক গৃহস্থ জানান, কোরবানির চামড়া পুরোটাই গরিবের হক। এটা বিক্রি করে দান করতে হয়। এখন দাম যত কমবে গরিব তত বঞ্চিত হবে। আগে একটা বড় গরুর চামড়া বাড়িতে এসে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যেত আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। ওই সাইজের গরুর চামড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০/২০০ টাকায়। তার মানে গরিবরা তাদের পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাবলুর রহমান নামে এক গৃহস্থ জানান, চামড়ার দাম কমার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। কারণ, চামড়ার পণ্যের দাম তো বাড়ছে। তাহলে কাঁচা চামড়ার দাম কেন কম হবে? গরিব মেরে লাভ কার প্রশ্ন রাখেন তিনি। চামড়ার দাম কমে যাওয়া কিংবা না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান জানান, গ্রাম গ্রামে ফড়িয়ারা যে দামে চামড়া কিনছে তাতে কোরবানীদাতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, তারা যে চামড়া ১০০ টাকায় কিনছেন সেই চামড়া আড়তে ৩০০ টাকা দামে আমরা কিনছি। আসলে গ্রামাঞ্চলে গুজব ছড়িয়ে চামড়া কেনা হচ্ছে। চামড়া ব্যবসয়ীদের মতে ২০ টাকার একটি ছাগলের চামড়া কিনে লবণ ও শ্রমিক খরচসহ সংরক্ষন করতে ৬০ টাকা খরচ আছে। তিনি বলেন ইউরোপের দেশগুলো এখন আর চামড়া যায় না। যে কারণে দাম অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। তাছাড়া ট্যানারি ও শহর অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা লোকসান দিতে দিতে পথে বসেছে। উল্লেখ্য এবার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট সাত টাকা আর খাসির চামড়া তিন টাকা বাড়ানো হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুট ৪৭ থেকে ৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকায় ১৮ থেকে ২০ টাকা, বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ঢাকার বাইরে এবং ঢাকায় বকরি ও খাসির চামড়ার দাম একই থাকবে। কিন্তু বাস্তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে গরুর কাঁচা চামড়া কেনাবেঁচা হতে দেখা গেছে। খাসি বা বকরির চামড়ার কোনো মূল্য মিলছে না।
সাপের কামড় খেয়ে সেই সাপ ধরে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যুবক
ঝিনাইদহ :: সাপের কামড় খাওয়ার পর সেই সাপ দুটি নিজেই ধরে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন আলামিন বিশ্বাস (২৫) নামের এক যুবক। গত শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকূপার বিজুলিয়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবক আলামিন শংকামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। আলামিন বিজুলিয়া গ্রামের মহসিন বিশ্বাসের ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলামিন জানান, ঈদের আগের দিন শনিবার বেলা ১১টার দিকে তাদের গ্রামের একটি ইটের গাদার মধ্যে দুটি গোখরা সাপ দেখতে পায়। ইটের গাদা থেকে সেই সাপ দুটি বের করে মারতে গেলে দুটি সাপ তাকে কামড় দেয়। এরপর আমি সঙ্গে সঙ্গে সাপ দুটি ধরেই বিলম্ব না করে হাসপাাতালের জরুরি বিভাগে চলে আসি। চিকিৎসক তার শরীরে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা চালিয়ে তাকে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করেন। ২টি সাপ ধরে হাসপাতালে নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, চিকিৎসক যাতে চিনতে পারেন কোন জাতের সাপ তাকে দংশন করেছে এতে করে চিকিৎসা দিতে সুবিধা হবে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও সুস্থ আছেন বলে জানান আলামিন। শৈলকূপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুজায়েত হোসেন জানান, বিজুলিয়া গ্রামের এক যুবককে সাপে দংশনের পর দুটি সাপ ধরে নিজেই হাসপাতালে হাজির হওয়ার ঘটনাটি সত্য। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। এদিকে সাপ ধরে হাসপাতালে যুবক চিকিৎসা নিতে আসছে খবরে হাসপাতালের স্টাফদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্ট হয়েছে।