রবিবার ● ২৭ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহের এমপি তাহজীবের বিরুদ্ধে বিধি ভেঙে ‘ডরিন টাওয়ার’ নির্মাণে দুদকের অনুসন্ধান
ঝিনাইদহের এমপি তাহজীবের বিরুদ্ধে বিধি ভেঙে ‘ডরিন টাওয়ার’ নির্মাণে দুদকের অনুসন্ধান
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (২৭ মার্চ ২০১৬ : বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৩০মিঃ)বিল্ডিং কোড অমান্য ও ফুটপাত দখল করে নির্মিত হয়েছে ২৫ তলা ভবন ‘ডরিন টাওয়ার’৷ রাজধানীর গুলশান-২ বাণিজ্যিক এলাকায় ৬/এ নম্বর গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউতে অবস্থিত ওই টাওয়ারটির মালিক প্রাক্তন ছাত্রনেতা নূর-ই আলম সিদ্দিকীর ছেলে ও ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি ৷ ফুটপাত ছাড়াও রাজউকের জমির কিছু অংশ দখল করে ওই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, এমন অভিযোগে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)৷ দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানেও মিলেছে অভিযোগে সত্যতা ৷ তবে অনুসন্ধান কাজ এখনও শেষ করতে পারেনি অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের উপ-পরিচালক মোনায়েম হোসেন৷ সর্বশেষ তিনি ঢাকার বাইরে বদলি হওয়ায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করে দুদকের সহকারী পরিচালক মো. খলিলুর রহমান শিকদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷
এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডরিন টাওয়ারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বেশ পুরনো ৷ ২০১২ সালের শেষের দিকে ওই অভিযোগ অনুসন্ধানে নামলেও কার্যত আমাদের অনুসন্ধান এখনো শেষ হয়নি ৷ ইতিমধ্যে অভিযোগের স্বপক্ষে বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে ৷ অনুসন্ধান কর্মকর্তাও সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ৷ রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বক্তব্য নেওয়া হয়েছে ৷’
তিনি আরো বলেন, অনেক দিন আগে অনুসন্ধান শুরু করলেও অদৃশ্য কারণে অনুসন্ধান কাজে স্থবিরতা দেখা দেয় ৷ তবে অনুসন্ধান কাজে গতি আনতে নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৷ আশা করছি, খুব শিগগিরই অভিযোগের দালিলিক প্রমাণসহ অনুসন্ধান কর্মকর্তা প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন ৷ অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) তাহজীব আলম সিদ্দিকী রাজধানীতে দখলদারিত্বের রাজত্ব কায়েম করেছেন ৷ আর রাজধানীর গুলশান-২ বাণিজ্যিক এলাকায় ৬/এ নম্বর গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউ ২৫ তলা ভবন ‘ডরিন টাওয়ার’-এর মালিক তিনিই ৷ অভিযোগ রযেছে, বিল্ডিং কোড অমান্য করে গড়ে তোলা হয় ভবনটি ৷ ব্যস্ত ফুটপাত ছাড়াও ভবন নির্মাণে রাজউকের জমির কিছু অংশও দখল করেন তিনি ৷ এমনকি রাজউকের জমি দখল করে গুলশানে ওই ভবন নির্মাণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে রাজউকের পৃথক অনুসন্ধানে ৷ তবে রাজউক থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ৷
এ বিষয়ে রাজউকের একটি সূত্র জানায়, রাজধানী গুলশান নর্থ অ্যাভিনিউর বাণিজ্যিক এলাকা-এর ৬/এ নম্বর প্লটে ২৫ তলা বিশিষ্ট ডরিন টাওয়ার নির্মাণের অনুমোদন (নম্বর-রাজউক/অ:/অ:/জ৩সি৩৭২৮/৯৭/১৪১-০২) দেওয়া হয় ৷ রাজউকের অনুমোদন পাওয়ার পরই ফুটপাত দখল করে ভবন নির্মাণ শুরু হয় ৷
স্থানীয়রা এ সংক্রান্ত অভিযোগ রাজউককে জানানোর পর রাজউকের কর্মকর্তারা কয়েকবার সরেজমিন পরিদর্শন করেন ৷ ডরিন ভবন নির্মাণে অনিয়ম করা হয়েছে বলে ২০১৫ সালের মে মাসে একটি অভিযোগ রাজউকে জমা পড়েছে ৷ যেখানে বলা হয়েছে, রাজউকের অন্তত ৩ কাঠা জমি দখল করা হয়েছে ৷ বর্তমানে অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য রাজউকের ওই জমির দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে, এমন অভিযোগে টাওয়ারটি পরিদর্শন করা হয় ৷ পরিদর্শনে ভবনের সামনের ফুটপাত দখলের বিষয়টি নজরে আসে৷ অবশ্য এ বিষয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷
এ বিষয়ে দুদকে আসা অভিযোগের সূত্রে আরো জানা যায়, ২৫ তলা বিশিষ্ট নির্মাণাধীন ডরিন টাওয়ারের পাশের রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জমির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তাহজীব সিদ্দিকীর৷ পাশাপাশি টাওয়ারটির রাস্তার সামনে ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ রাখা হচ্ছে গাড়ি চলাচল ৷ ভবন মালিকের ভয়ে স্থানীয়রা তটস্থ থাকায় কেউ তার অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না ৷
গুলশান-বনানী সড়কের মোড়ের ওই ভবনটির সম্মুখ ভাগ ফুটপাত দখল করে নির্মাণ করা হয় ৷ গুলশান-বনানী লিংক রোডের কিছু অংশ দখল করে বসানো হয়েছে লোহার ব্যারিকেড৷ সেখানে রাখা হয়েছে অসংখ্য গাড়ি ৷ বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবনের কোনো দিকেই ছাড় দেওয়া হয়নি ৷ আগুন বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কী অবস্থা হবে, এমন শঙ্কায় রয়েছেন আশপাশের ভবন মালিক ও বাসিন্দারা ৷ ভবনটির সামনে গুলশান-বনানী লিংক রোডটি দ্বিমুখী হলেও এমপির হস্তক্ষেপে চালকদের একমুখী চলতে বাধ্য করা হচ্ছে ৷
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি ৷