সোমবার ● ২৮ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাউজানে চুরি-ডাকাতিতে ব্যবহার করছে চেতনানাশক স্প্রে
রাউজানে চুরি-ডাকাতিতে ব্যবহার করছে চেতনানাশক স্প্রে
আমির হামজা, রাউজান প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের রাউজানে চেতনানাশক স্প্রে ছিটিয়ে একাধিক চুরির ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। অপরাধীরা চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহারের ফলে জনমনে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অপরাদকর্মে ভয়ংকর স্প্রের ব্যবহার বাড়লেও নিরব ভূমিকা পালন করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় চেতনানাশক স্প্রে দ্বারা অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত হচ্ছে। খবর নিয়ে যানা যায়, স্বল্প টাকায় ভয়ংকর চেতনানাশক স্প্রে মিলছে অনলাইন (ফেইসবুক, ওয়েবসাইট) পন্য বিক্রয়কারী মাধ্যমে।
জানা যায়, গত বুধবার (২৩ নভেম্বর) গভীর রাতে কদলপুর ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঈশান ভট্টেরহাট এলাকায় সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীনের ঘরে ঢুকে চেতনানাশক স্প্রে দিয়ে অচেতন করে ৩ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। পরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। একই রাতে চুরির উদ্দেশ্যে একই ওয়ার্ড এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরও বেশ কয়েকটি ঘরেও হানা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায় স্প্রে ব্যবহারকারী চোরের দল। অন্যদিকে গত ৩০ অক্টোবর ভোররাতে ৮ নম্বর কদলপুর ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পরীর দীঘির পাড়ের উত্তর পূর্ব পাশে ভোমরপাড়া ইউপি মেম্বার আলী আকবরের বাড়িতে চেতনানাশক স্প্রে ছিটিয়ে টাকা স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনা ঘটে। দুষ্কৃতকারীরা ইউপি মেম্বার আলী আকবরের ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে চেতনা নাশক স্প্রে ছিটিয়ে পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান করে আলমিরা খুলে ৮০ হাজার টাকা, এক ভরি ওজনের ৮টি স্বর্ণের আংটি ও দুটি মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। গত ৯ নভেম্বর উপজেলার পাহাড়তলী ইউপির আবাসিক এলাকায় আবু তৈয়ব এর ঘরে চেতনানাশক স্প্রে ছিটিয়ে পরিবারের সদস্যদের অজ্ঞান করে আলমির হতে নগদ ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে যান।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট রাউজান পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সামীমুল ইসলাম চৌধুরীর আধাপাকা ঘরের টিন কেটে চেতনানাশক স্প্রে ছিটিয়ে ৬ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৬৫ হাজার টাকা লুট করে। একই রাতে তাদের প্রতিবেশী মোহাম্মদ সায়েমের ঘরের জানালা দিয়ে চেতনানাশক স্প্রে ছিটিয়ে জানালার গ্রীল ভাঙার চেষ্টা চালানো হয়। ফজরের আযান হওয়ায় জিনিসপত্র লুটে নিতে না পারলেও ভয়ংকর স্প্রে দ্বারা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হন নাসরিন আকতার (৬০), মোহাম্মদ সায়েম (৩৫), নাঈমা সুলতানা (২৬), মোহাম্মদ সাইফুল আলম (৪৫), সাহিন আফরোজ (৩২), শাওরিন সাইফ (১২), সানিয়া সাইফ (৮) ও সুহাইনা সোহাগ (দুই মাস) নামে এক পরিবারের আটজন। ২৪ঘন্টা পর অচেতন অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ভর্তি করানো হলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন কয়েকদিন। ভুক্তভোগী সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঘটনার ওইদিন রাত প্রায় ২টায় রান্নাঘরের বোর্ড কেটে ঘরে ঢুকে দুস্কৃতিকারীরা আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে চেতনানাশক স্প্রে দিয়ে অজ্ঞান করে। এরপর আমার আলমিরার তালা ভেঙে জমি ক্রয়ের জন্য ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আনা নগদ ৩ লাখ টাকা, প্রায় এক ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন, ৯০ হাজার টাকা মূল্যমানের নতুন নোট নাইন, ২০ হাজার টাকা মূল্যের রেডমি মোবাইল লুটে নেয়। সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল হক চৌধুরী লাভলু বলেন, ‘মারাত্মক বিষয় হচ্ছে দুষ্কৃতকারীরা চেতনানাশক স্প্রে’র ব্যবহার করছে। এজন্য সবাই আতংকে আছে।’ চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহারকারী অপরাধীদের আতঙ্কে থাকার কথা জানিয়েছেন রাউজান পৌর এলাকার একাধিক জনসাধারণ। এ বিষয়ে রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, কয়েকটি ঘটনায় চেতনানাশক স্প্রে ছিটানোর অভিযোগ পেয়েছি। অপরাধীরা স্প্রে ছিটিয়ে অপকর্ম করছেন এটা সত্য। সম্প্রতি সাবেক ইউপি সদস্য জয়নালের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চেতনানাশক স্প্রে বিক্রি বা সরবরাহকারীদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলেও জানান ওসি।