মঙ্গলবার ● ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » কৃষি » আত্রাইয়ে সরিষা ফুলে মেতেছে মৌমাছি ও মৌয়ালরা
আত্রাইয়ে সরিষা ফুলে মেতেছে মৌমাছি ও মৌয়ালরা
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ের প্রতিটি মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ন প্রতিটি মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক সপ্লিল পৃথিবী।
যেদিকে তাকায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁ-ধাঁলো বর্ণীল সমরাহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে শরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পন এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনো মুগ্ধকর এক মূহুর্ত।
ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আত্রাই উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ১০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১হাজার বক্সের মাধ্যমে সংগ্রহ করছেন মৌয়ালরা।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মৌয়াল আমিরুল ইসলাম জানান, সরিষার জমিতে তারা দেড় মাস থাকবেন। এরপর কালোজিরা ও ধনিয়ার জমিতে মধু সংগ্রহ করতে যাবেন নড়াইল, গোপালগঞ্জ অথবা মাদারীপুরে। সেখান থেকে লিচুর মধু সংগ্রহে যাবেন পাবনার চাটমোহর অথবা দিনাজপুরে। সবশেষে যাবেন সুন্দরবনে। এভাবেই তারা বছর অবধি বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে মৌবাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। তারা বছরে সাড়ে ৫ মাস মধু সংগ্রহ করেন। এই সময় তাদের মৌমাছি’র আলাদা কোনো খরচ করতে হয় না। যেহেতু ফুল থেকেই মধু সংগ্রহ করে তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতে পারছে। কিন্তু বাকি সাড়ে ৬ মাস মৌমাছিকে চিনি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।
মৌয়াল আমিরুল ইসলাম আরো বলেন, প্রতি সপ্তাহে এক একটি বক্স থেকে ৫ থেকে ৮ কেজি মধু পাওয়া যায়। এভাবে সকল বক্স থেকে সপ্তাহে ১০ থেকে ১২ মণ মধু সংগ্রহ করে থাকেন তারা।
এ ব্যাপারে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী বলেন, সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির চাষ হলে সরিষার ফলন ১০ ভাগ বেড়ে যায়। তাই সরিষার ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরিষা ক্ষেত থেকে বিনা খরচে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা। এতে মৌমাছি ব্যবসায়ী যেমন একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও বাড়ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন জানান, এবারে আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমান সরিষা চাষ হয়েছে। যথা সময়ে জমি চাষ যোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
আত্রাইয়ে কৃষিঋণ মেলা অনুষ্ঠিত
আত্রাই :: কৃষি খাতকে স্বনির্ভরতা ও কৃষকদের ফসল ফলাতে সহায়তা স্বরুপ নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে কৃষিঋণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার ১২ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ হল রুমে দিনব্যাপী এ মেলায় ৮ শতাংশ সুদে সোনালী, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, অগ্রণী, জনতা, রুপালী এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কৃষকের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ করে।
চেক বিতরণী অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান প্রামানিক, ইউএনও ইকতেখারুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম, ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন, কৃষি অফিসার কেএম কাওছার হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মেহেদী হাসান, আত্রাই সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার শাহাদৎ হোসেন, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ম্যানেজার শাহীন আলম, অগ্রণী ব্যাংক ম্যানেজার হায়াৎ মাহমুদ, জনতা ব্যাংক ম্যানেজার মাফিদুল ইসলাম, রুপালী ব্যাংক ম্যানেজার নাসির উদ্দিন, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ম্যানেজার মাজেদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ইউএনও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী নওগাঁ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে জেলার ১১ টি উপজেলায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মানুষ আজ বিভিন্ন এনজিওতে জড়িয়ে পরার কারনে প্রচুর পরিমানে সুদের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। সরকার কৃষি ও কৃষকের কথা চিন্তা করে ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ৮ শতাংস সুদে কৃষিঋণ দিচ্ছেন।