সোমবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » গোয়াহরি বিলে ঐতিহ্যের পলো বাওয়া উৎসব পালিত
গোয়াহরি বিলে ঐতিহ্যের পলো বাওয়া উৎসব পালিত
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক“পলো বাওয়া উৎসব”পালিত হয়েছে। বার্ষিক এই “পলো বাওয়া উৎসব”শনিবার (২১জানুয়ারি) উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহন করেন গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ।
প্রতিবছর টান্ডার সময় এ উৎসব হত। অধিক পানি ও কচুরিপানা না থাকায় মাছ নিয়ে ঘরে ফিরছেন অনেককেই। শিকারকৃত মাছের মধ্যে ছিল বোয়াল, শউল, মিরকা, কারপু, বাউশ, ঘনিয়া, রওউসহ ভিবিন্ন জাতের মাছ।
গোয়াহরি গ্রামের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রতি বছরের মাঘ মাসের পহেলা তারিখ এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হত কিন্তু এবার বিলে মাছ বেশি থাকায় এলাকাবাসী মিলে এসময় পলো বাওয়ার সিদ্বান্ত নেন।
“পলো বাওয়া উৎসবকে”কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ রিবাজ করছিল। এই উৎসব আগামী ১৫ দিন পযন্ত চলবে। গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষক্ষ থেকে এই পনের দিন বিলে মাছ ধরায় আটল (নিষেধাজ্ঞা) নেই।
তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর ২য় ধাপে পলো বাওয়া হবে। এই পনের দিনের ভিতরে বিলে হাত দিয়ে মাছ ধরা হবে এবং কেউ চাইলে পেলান জান (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন।
পলো বাওয়া এই উৎসবে অংশ নিতে শনিবার সকাল ৮টা থেকে গোয়াহরি গ্রামের সৌখিন মানুষ বিলের পারে এসে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিলের পারে লোক সমাগম বাড়তে থাকে। পূর্ব নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ১০টা হওয়ার সাথে সাথে সবাই এক সাথে বিলে নেমে শুরু করেন পলো বাওয়া। শুরু হয় ঝপ ঝপ পলো বাওয়া।
প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী এ“পলো বাওয়া উৎসবে” গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সী পুরুয় অংশ নেন।
সরেজমিনে গোয়াহরি বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের উপর ঝাপিয়ে পড়েন লোকজন। যাদের পলো নেই তারা মাছ ধরার ছোট ছোট বিভিন্ন জাল নিয়ে মাছ শিখারে ব্যস্ত সময় কাটান।
এসময় মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ করতে বিলের পারে ছোট ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের পুরুষ-মহিলা, দূর থেকে আসা অনেকের আত্বীয়- স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দায়িড়ে থাকতে দেখা যায়।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ছেলে বুড়ো মিলিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক লোক পলো বাওয়া উৎসবে অংশগ্রহন করেন। বিল থেকে অন্যান্য বছরের তুলনায় মাছ শিকার হয়েছে বেশি।
গোয়াহরি গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, পলো বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। আমার কাছে পলো বাওয়া উৎসব খুব মজার বিষয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি এ উৎসবে অংশ গ্রহন করি। আমাদের গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে এই উৎসব পালন করে আসছেন।
মাদ্রাসা শিক্ষক গোয়াহরি মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন, আমি একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। এই মাছ ধরায় অংশ নিতে পেরেছি তাই আমার খুব আনন্দ লাগছে।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশরাফুজামান বলেন, আমি পলো বাওয়ায় অনেক বছর দেখিনি। আমার ভাগ্যভাল এবার এ উৎসব দেখতে পারলাম আমার খুবই ভাল লাগছে। পলো দিয়ে মাছ শিকার একটি মজার বিষয়।
বিশ্বনাথে মোবাইল চোরের সহযোগীদের হামলায় নারীসহ আহত ৬
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে প্রতিপক্ষের লোকজনের হামলায় নারীসহ ৬জন আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। (১৯ জানুয়ারী) বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামে মরম মিয়ার বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলায় আহতরা হলেন-গড়গাঁও গ্রামের মরম মিয়া (৫০) তোরন মিয়া (৫৩) রেখা বেগম (৪৫), মনফর আলী (৬০), মতিন মিয়া (৫০), কুতুব উদ্দিন (৫০)। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। খবর পেয়ে রাতেই থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
গড়গাঁও গ্রামের কয়েকজন জানান, আমাদের পাশ্ববর্তি আগশ্বাসন গ্রামের শরিফ উদ্দিন নামের এক আত্বীয় আমাদের গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টায় বেড়াতে আসেন। গ্রামের মধ্যখানে তিনি আসামাত্রই তার মোবাইল ফোনটি আমাদের গ্রামের পাবেল মিয়া নিয়ে যায়।
এসময় বেড়াতে আসা শরিফ উদ্দিনের আত্বচিৎকারের গ্রামের বেশকিছু লোকজন ছুটে আসেন এবং পাবেলকে আটক করে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। এনিয়ে পাবেলের লোকজনের সঙ্গে মরম মিয়ার লোকজনের কথাকাটাকাটি হয়। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৯টায় পাবেলের পিতা জামাল মিয়া, চাচা কামাল মিয়ার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন লোক মরম মিয়ার বাড়িতে হামলায় চালায়।
এতে মরম মিয়াসহ ৫জন আহত হন। হামলাকারীরা বিভিন্ন অপরাধে সাথে জড়িত রয়েছেন বলে গ্রামের কয়েকজন জানান।
এব্যাপারে আগশ্বাসন গ্রামের শরিফ উদ্দিন বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আমি গড়গাঁও গ্রামে আত্বীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বের হই।
গড়গাঁও গ্রামের মধ্যখানে যাওয়ার পর একজন লোক আমাকে পেয়ে আমার মোবাইল ফোন দিয়ে সে অন্যজনের সঙ্গে জরুরী কথা বলতে চায়। এসময় আমি সরল বিশ্বাসে তাকে আমার ফোন দিয়ে কথা বলতে দেই। সে ফোনে কথা শেষ করে আমার ফোনটি নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এসময় আমার আত্বচিৎকারে গড়গাঁও গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় তাকে আটক করতে সক্ষম হই ও মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করি।
মরম আলী বলেন, হঠাৎ গ্রামের মধ্যখানে একজনের আত্বচিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বের হয়ে এগিয়ে যাই। এসময় আত্বচিৎকারী লোক তার মোবাইল ফোনটি একজন ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে এমটাই জানান। আমাদের গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
আটককারী আমাদের গ্রামের পাবেল। আমরা কেন তাকে দৌড়ে ধরে দিলাম এ কারণে সে (পাবেল) তার পিতা জামাল, চাচা কামালসহ লোকজন নিয়ে রাতেই আমাদের বাড়িতে এসে হামলায় চালায়। হামলায় আমাদের ৫জন আহত হন এবং ঘরে থাকা নগদ ৫০ হাজার টাকা তারা নিয়ে যায়।
পাবেল মিয়ার চাচা কামাল মিয়া বলেন, কথাকাটাটির জেরে তাদের সঙ্গে হালকা মারামারি হয়েছে। এতে আমাদের কয়েকজন আহত আছেন। আমাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা।
বিশ্বনাথ থানার এসআই বিনয় ভূষন চক্রবর্তি বলেন, ওসি স্যারের নিদের্শে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বিশ্বনাথে সরকারি গর্ভীর নলকুপ কমিউনিটি সেন্টারের সামনে : ২ঘন্টা পর উদাও
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের ময়নাগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বিলাশ বহুল শেখ মহল কমিউনিটি সেন্টারের সামনে বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়কের উপর ৫/৭ জন শ্রমিক ১টি গভীর নলকুপ স্থাপন করতে দেখা যায়। ঘটনাটি গতকাল ১৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার, দুপুর দেড় টার দিকে।
সরকারি নলকুপ, তাও আবার সরকারি সড়কের উপরে। এমন দৃশ্য দেখে এলাকাবাসিসহ পথচারিরা প্রথমে চকমে উঠেন। জড়ো হন অনেকেই। খবর পেয়ে দু’জন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, এটি সরকারি নলকুপ।
কিন্তু সরকারি সড়কের উপর নলকুপ কেন স্থাপন করা হচ্ছে, বা বিলাশ বহুল কমিউনিটি সেন্টারের সামনে কেন সরকারি নলকুপ স্থাপন করা হবে এবিষয়ে জানতে চাইলে কাজের দায়িত্বে থাকা শ্রমিক মো: হাসান আলী বলেন, নলকুপটি বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যার এসএম নুনু মিয়ার।
সাংবাদিকরা এ তথ্য জানার পর কথা হয় উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম নুনু মিয়ার (এপিএস) দবীর মিয়ার সাথে ও উপজেলা জনস্বাস্থ্য অফিসের এক কর্মকর্তার সাথে। এর টিক ২ঘন্টা পরই স্থাপনকৃত গভীর নলকুপটি উদাও হয়ে যায়!
এটি কোন প্রকল্পের নলকুপ এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মো: রাসেল ভুইয়ার ০১৮৭৫৩৩৯৩৬১ নম্বরে মোবাইলে একাধিক কল করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যার এসএম নুনু মিয়া বলেন, ভুল বসত আমার কমিউিনিটি সেন্টারের সামনে স্থাপন করা হচ্ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, এ বিষয়ে তিনিও কিছুই জানেন না।
কাজের দায়ীত্বে থাকা নলকুপ শ্রমীক হাসান আলী আরো জানিয়েছে, সে গত কয়েক দিনে এই এলাকায় ৮টি নলকুপ স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ৭টিই প্রভাবশালীদের বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি নলকুপ বিতরণে অনিয়ন ও স্বজন প্রীতির অভিযোগে ইতিপূবে বিশ্বনাথে ঝাড়ু মিছিল হয়েছে।