সোমবার ● ২৩ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি : সুনয়ন চাকমা
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি : সুনয়ন চাকমা
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থীত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক জিমিত চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এর রাঙামাটি জেলা শাখার ৯ম কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। এতে রিপন চাকমাকে সভাপতি, তনুময় চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও রুপায়ন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
গত শুক্রবার (২০ জানুয়ারি ২০২৩) রাঙামাটির সদর এলাকায় এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
কাউন্সিলের ব্যানার শ্লোগান ছিল “পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামে একমাত্র রাজনৈতিক সমাধান, রাষ্ট্রীয় মদদে অব্যাহত ভূমি বেদখল, নারী নিপীড়ন, খুন, গুম ও জেলগেট থেকে পূনরায় গ্রেফতারসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হও ছাত্রসমাজ।”
কাউন্সিল অধিবেশনে পিসিপি’র রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি নিকন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সোহেল চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের জেলা সভাপতি রিনিশা চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখার সভাপতি রিমি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক থুইনুমং মারমা। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সতেশ চাকমা।
পিসিপির দলীয় সঙ্গীত ‘পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী দল’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে কাউন্সিল অধিবেশন উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ইউপিডিএফ সংগঠক সচল চাকমা।
কাউন্সিল অঅধিবেশনে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জেলার তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আওজ চাকমা। শোকপ্রস্তাব শেষে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে দুই মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
কাউন্সিল অধিবেশনে ইউপিডিএফ সংগঠক সচল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠির শাসন-শোষণের হাত থেকে নিপীড়িত জনগণকে মুক্ত করার লক্ষ্যে আমাদের পার্টি গঠন করা হয়েছিল। তাই পার্টি শাসকগোষ্ঠী ও জাতীয় দালাল-প্রতিক্রিয়াশীলদের নানা বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করছি বলে কোন অপশক্তি পার্টির অগ্রাযাত্রাকে রোধ করতে পারছে না। আগমীতেও এই পার্টির নেতৃত্বে পাহাড়ি জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করবো।
তিনি আরো বলেন, মুঘল, ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়া পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে একের অধিক চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু কোন চুক্তিই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। পাহাড়ি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংস করতে পরিকল্পিতভাবে যুগ যুগ ধরে সেনা শাসন জারি রাখার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন-গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাসহ নানা নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি জাতির এই দুর্দিনে অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে বেগবান করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসার জন্য ছাত্র-যুব-নারী সমাজ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
পিসিপি’র সভাপতি সুনয়ন চাকমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ শুধুই নামেমাত্র একটি সংগঠন নয়। এই নামের সাথে অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। এই সংগঠনের রয়েছে শাসকগোষ্ঠীর রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাস। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেক সহযোদ্ধা জীবন উৎসর্গ করেছেন। সুতরাং এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পারা গর্বের বিষয়।
তিনি আরো বলেন, পরিবারে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনসহ ব্যক্তিগত জীবনে নানা পিছুটান থাকে, যা সমাজের অধিকাংশ মানুষই ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে না। ফলে তারা ব্যক্তি স্বার্থকে বেশিরভাগ প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমরা জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অবিচল থেকে সংগ্রাম করে যাচ্ছি, সমস্ত কিছু বিসর্জন দিয়ে সংগঠনে এসেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, ব্যক্তি স্বার্থের কাছে বশীভূত না হয়ে লড়াই সংগ্রামের পথ আঁকড়ে ধরে রয়েছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে কোন অপশক্তি দমাতে পারবে না। আমরা ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের জেলার সভাপতি রিনিশা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ভুমি বেদখল, নারী নিপীড়ন, হত্যা, গুমসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রিমি চাকমা বলেন, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের অংশ হিসেবে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে অসংখ্য সেনা, র্যাব, পুলিশ বাহিনী নিয়োজিত করে রেখেছে। তার পাশাপাশি সমতল থেকে সেটলার বাঙালিদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী বহিরাগত সেটলারদের তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে। ফলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সেটলার বাঙালি কর্তৃকে পাহাড়ি নারী-শিশুরা মোটেই নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্য ও সেটলার কর্তৃক এযাবৎ অনেক পাহাড়ি নারী স্কুল-কলেজে, ছড়ায় পানি আনতে গিয়ে, ক্ষেত-খামারে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কিন্তু সরকার এসব ঘটনার প্রতিকার ও বিচারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা যদি অধিকার অর্জনে সোচ্চার না হয় তাহলে পাহাড়ে জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনও সফল হবে না। তাই নারীদের অধিকার অর্জন করতে হলে সংগঠন সাথে যুক্ত থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সোহেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনই একমাত্র রাজনৈতিক সমাধান। ছাত্র-ছাত্রী ও পাহাড়ের জনমানুষের পূর্ণস্বায়ত্তশাসন হল একটি স্বপ্ন। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য অপার সম্ভাবনাময়ী ছাত্র সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য নানা বিষয়ে জানাশোনা থাকতে হবে।
অধিবেশন শেষের দিকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি নিকন চাকমা ১৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির প্রস্তাবনা পেশ করেন। এতে উপস্থিত প্রতিনিধিরা করতালির মাধ্যমে প্রস্তাবিত নতুন কমিটিকে পাস করে নেন।
নতুন কমিটিতে রিপন চাকমাকে সভাপতি, তনুময় চাকমাকে সাধারণ সম্পাদক ও রুপায়ন চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
পরে কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিকে বিলুপ্ত করে নতুন কমিটিতে নির্বাচিত সকল সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান।
কাউন্সিলে দ্বিতীয় পর্বে ফুল দিয়ে নতুন কমিটির সদস্যদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও বিদায়ী কমিটির সদস্যদের বিদায় জানানো হয়।