বুধবার ● ১৫ মার্চ ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও মানুষের বৈচিত্র্য মুগ্ধ করেছে কানাডিয়ান হাই কমিশনার লিলি নিকোলসকে
রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও মানুষের বৈচিত্র্য মুগ্ধ করেছে কানাডিয়ান হাই কমিশনার লিলি নিকোলসকে
রাঙামাটি :: ১৪ মার্চ ২০২৩ অপরাহ্ন ৩টায় বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাই কমিশনার মিজ লিলি নিকোলস (Lilly Nicholls) রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরীর সাথে তার অফিসকক্ষে এক সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।
হাই কমিশনার মিজ লিলি নিকোলস সৌজন্য সাক্ষাতে চেয়ারম্যানকে তার রাঙামাটি ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবগত করেন। কানাডা সরকারের অর্থায়নে এবং ইউএনডিপির মাধ্যমে পরিচালিত প্রকল্পগুলো দেখে এসেছেন বললেন। বিশেষ করে রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, জীববৈচিত্র্য, মানুষের বৈচিত্র্য, উঁচু পাহাড়ে পানি সরবরাহ এবং সোলারের মাধ্যমে পানি উত্তোলন, সরবরাহ এবং নিচে চাষাবাদ, স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের কার্যক্রম, উইমেন ফ্রেন্ডলি টয়লেট ব্যবস্থা তাকে মুগ্ধ করেছে। তিনি এসমস্ত কাজ করার ক্ষেত্রে পরিষদ কি ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চান।
চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী হাই কমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কানাডা সরকারের অর্থায়নে এবং ইউএনডিপি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত ‘শিক্ষা ও দক্ষতার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে মেয়ে ও নারীর ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পটি একটি ভালো এবং উল্লেখযোগ্য প্রকল্প। পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী ও মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য এই ধরনের প্রকল্প শুরু করার জন্য তিনি কানাডা সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রকল্পে জেলার ১০০টি স্কুলে মেয়ে ও নারীর শিক্ষার উন্নয়ন, স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধ করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম, কিশোরী মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত শিক্ষা কার্যক্রম, নারী বান্ধব টয়লেট নির্মাণ, নারীদের কর্মসংস্থান এবং ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক যেমন- সেলাই প্রশিক্ষণ, গ্রাফিক ডিজাইন ও ফ্রিল্যান্সিং এবং ফুড ও বেভারেজ এর ওপর প্রশিক্ষণ ইত্যাদি এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত আছে। এছাড়া এই প্রকল্পে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিসে চাকরী পূর্বকালীন প্রশাসনিক দক্ষতা লাভের জন্য ৩৪ নারী ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাইজড করার জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি কোভিডের কারণে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও সাফল্যের সঙ্গে পরিষদ এটি বাস্তবায়ন করতে সমর্থ হয়েছে। এজন্যে তিনি এলাকার নারী উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান। বিশেষ করে রাঙামাটি জেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম, উইমেন ফ্রেন্ডলি টয়লেট করা গেলে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন। চেয়ারম্যান কানাডা সরকারের অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে কানাডায় পড়াশুনার ব্যবস্থা করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কানাডা সরকার বৃত্তি দিয়ে স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কানাডায় পড়াশুনার সুযোগ করে দিলে স্থানীয় মানবসম্পদ উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।
হাই কমিশনার চেয়ারম্যানকে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সহযোগিতা ওপর আস্থা রাখার জন্য বলেন। তিনি জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষদেরকে শিক্ষায় এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য কানাডা সরকার, বাংলাদেশ সরকার এবং জেলা পরিষদগুলোর সমন্বয়ে আরও বড় আকারে বোর্ডিং স্কুল/ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠার প্রকল্প নেওয়ার ধারণার ওপর আলোচনা করেন। তিনি বলেন, কানাডা সরকারের বৃত্তি নিয়ে পড়াশুনার ক্ষেত্রে নারীদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে এলাকার মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের ডেভেলাপমেন্ট এসিসটেন্স(হেড অব এইড) জো গুডিংস (Joe Goodings), পলিটিকেল কাউন্সেলর ব্রাডলি কোটস(Bradley Coates), পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাঃ আশরাফুল ইসলাম, সদস্য রেমলিযানা পাংখোয়া, নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান, ইউএনডিপির সহকারি আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা, ন্যাশনাল প্রজেক্ট ম্যানেজার সুপ্রদীপ চাকমা এবং পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা অরুনেন্দু ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাই কমিশনার মিজ লিলি নিকোলস পরে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান এর সাথে তার কার্যালয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাতে করেন।