রবিবার ● ১৯ মার্চ ২০২৩
প্রথম পাতা » ঢাকা » তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির দাবি
তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির দাবি
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সিগারেটে মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা। আজ (১৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন অর্থবছরের জন্য তামাক কর ও মূল্য সংক্রান্ত বাজেট প্রস্তাব গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরে সংগঠন দুটি।
সংবাদ সম্মেলনে নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৩৫.৭৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক (চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) আরোপের দাবি বিশেষভাবে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, অন্যান্য স্তরের তুলনায় নিম্ন স্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের তামাক ব্যবহারকারীকে (যারা মূলত নিম্ন স্তরের সিগারেটের বিভিন্ন ব্রান্ড ব্যবহার করে) ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করে। একইসাথে উচ্চ স্তরগুলোতে সিগারেটের দাম বাড়লে ভোক্তাদের মধ্যে সস্তা ব্রান্ড বেছে নেয়ার আগ্রহ কমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট করপদ্ধতি প্রবর্তন করলে তামাক করকাঠামোর কার্যকারিতা আরো শক্তিশালী হবে। তামাকপণ্য থেকে রাজস্ব আহরণ সহজ হবে, রাজস্ব আয় বাড়বে এবং আহরণ ব্যয় কমবে।
সংবাদ সম্মেলনে তামাক কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব সমর্থন করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “আইএমএফ এর ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে আগামী অর্থবছর থেকে মোট জিডিপি’র অন্তত দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর রাজস্ব আদায় করতে হবে। অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই কর আদায় বাড়াতে হবে কমপক্ষে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে এই লক্ষ্যমাত্রার উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করা সম্ভব। বর্ধিত রাজস্ব একইসাথে অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে।” বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “সিগারেট ব্যবহারকারীদের প্রায় ৭৫ শতাংশই কমদামি সিগারেটের ভোক্তা অথচ এই স্তরে সম্পূরক শুল্কহার মাত্র ৫৭ শতাংশ, এটা বাড়িয়ে কমপক্ষে ৬৫ শতাংশ করা হলে সিগারেটের ব্যবহার কমবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে।”
সংবাদ সম্মেলনে মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ, উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১১ টাকা থেকে ১২০ টাকা নির্ধারণ করে ৭৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৯৭.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ১৯ টাকা থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা নির্ধারণ করে ২৭.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১৫.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ৯,৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে এবং ৪ লক্ষ ৮৮ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৪ লক্ষ ৯২ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর বাংলদেশ লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, আত্মা’র কনভেনর মতুর্জা হায়দার লিটন এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
উল্লেখ্য, তামাক ব্যবহারজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা, যা একই সময়ে তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের (২২ হাজার ৮১০ কোটি টাকা) চেয়ে অনেক বেশি।