রবিবার ● ২৬ মার্চ ২০২৩
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » পুলিশ ও ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের বাঁধায় মাঠে দাড়াঁতে পারছেনা ঝালকাঠি বিএনপি
পুলিশ ও ক্ষমতাশীন আওয়ামীলীগের বাঁধায় মাঠে দাড়াঁতে পারছেনা ঝালকাঠি বিএনপি
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির, ঝালকাঠি :: ঝালকাঠি জেলা বিএনপি মাঠে টিকে থাকতে পারছেনা ত্রিমুখী চাপে। থাকার চেষ্ঠা করেও পুলিশ ও আওয়ামলীগের কঠোর বাঁধায় দাড়াতে পারছেনা মাঠে। পাশাপাশি বিএনপির নিস্ক্রিয় ও বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার হওয়া নেতাকর্মীরা এখনো মাঠে নামেনি। তাই ঝালকাঠিতে বিএনপির আন্দোলন বেগবান হয়ে উঠছেনা। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে বিএনপি মাঠ কর্মীরাই সন্দিহান।
সব শেষ জেলায় জেলায় কর্মসূচির অংশ হিসাবে জেলা সদরে পদযাত্রা করতে গেলে পুলিশের বাঁধায় পন্ড হয়ে যায়। যদিও এসময় বিএনপির পাল্টা প্রতিরোধে ৬ পুলিশ আহত হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এদিন লাঠি চার্জে আহত হয়েছে অর্ধশত নেতাকর্মী। এমনটাই দাবি বিএনপির। ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ বাদী মামলায় মোট ৩৮ জনকে আসামী করা হয়। এদের মধ্যে ২১ জন উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছে। কিন্তু গ্রেফতারকৃতরা এখনো জামিন পায়নি।
শহর বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনরা তাদের মাঠে থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ ভাবে প্রতিরোধ করছে। কর্মসূচির অনুমতি পাওয়া যাচ্ছেনা। আমতলা সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনেও কর্মসূচিতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। কার্যালয় সামনের সড়কে দাড়ালেও সরিয়ে দিয়ে ব্যানার নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। কোন কোন সময় পুলিশের সাথে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা যোগ দিয়ে তাদের কর্মর্সূচিতে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ বিএনপির।
ঘন ঘন মামলার আসামী ও জামিন বাতিলের আতঙ্ক নিয়েও মাঠে থাকার চেষ্টা করছে জেলা বিএনপি। তবে এ মূহুর্তে গ্রুপিং থাকার কারণেও সাংগঠনিক ভীত শক্ত ভাবে গড়তে পারেনি শহর বিএনপি। জেলা বিএনপির এ্যাডভোকেট সদস্য সচিব শাহদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে বিগত ২ বছর ধরে ঘর মুখো বিএনপি অনেকটা বেড়িয়ে আসতে পেরেছে। হামলা মামলা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতিরোধেও তারা মাঠে নামছে। নেতাকর্মীরা আন্দোলনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে বিএনপির একাংশের দাবি এতো কিছুর পরেও নিস্ক্রিয় নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছেনা বিএনপি। চাঙ্গা করা যাচ্ছেনা মাঠের আন্দোলন।
দল ও দলীয় নেতা কর্মীদের চাঙ্গা রাখার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম লিটন, জেলা যুবদল সদস্য মো. সাদ্দাম হোসেন ও সদর উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক মো. তৌহিদ বলেন, ঝালকাঠি-২ আসনের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত এমপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপি নেত্রী ঝালকাঠির সন্তান জেবা আমিনা খান সবাইকে সক্রিয় রাখতে আপ্রান চেষ্টা করছেন। তাই তিনি ২০১৮ সাল থেকে জেলা বিএনপির হাল ধরে এখন পর্যন্ত আমাদের পাশে আছেন। কিন্তু দলের ভিতরে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র তার সহযোগীতা ও পাশে থাকার বিষয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা। জেবা খান ছাত্রদল, যুবদলসহ সকল অংগ সংগঠনের মামলা হামলায় আহত কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের আর্থিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তাদের খাবারের ব্যবস্থা এবং বাহিরে থাকা পরিবারের খোজ খবর নিয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন।
কর্মসূচি সঠিক ভাবে করতে না পারার বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান মুবিন বলেন, আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে ২ বছর ধরে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে। আন্দোলন আরো গতিশীল করতে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা দরকার। ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ ৫ বছর। জেলা সেচ্ছাসেবক দলের কমিটিও মেয়াদ উত্তীর্ন। যুবদলের ইউনিট কমিটি নেই। পূর্নাঙ্গ কমিটি হলে নেতাকর্মীরা পদ পদবী পেয়ে হামলা মামলা মাথায় নিয়ে মাঠে ঝাপিয়ে পরবে।
দলীয় সূত্র জানায়, জেলা বিএনপির আন্দোলনে এই মূহুর্তে নিস্ক্রিয় রয়েছেন ১০/১৫ জন নেতা। যাদের বিশাল একটি গ্রুপ বা সমর্থকরাও নিস্ক্রিয়। এদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল মন্টু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর, সাবেক সদর উপজেলা সভাপতি সরদার এনামুল হক এলিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সম্পাদক নাসিম উদ্দিন আকন উল্লেখযোগ্য।
নিস্ক্রিয় নেতা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল মন্টু মনে করেন, ঝালকাঠিতে বিএনপির মাঠে নামতে না পারার ব্যর্থতা আহ্বায়ক কমিটির। তিনি বলেন, এ কমিটি তাদের মেয়াদে সবাইকে নিয়ে একটি সভাও করতে পারেনি। সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেমন আমিসহ যারা নিস্ক্রিয় তাদের ডাকলে অবশ্যই আমরা যাব। তাদের পক্ষ থেকে কোন সাড়া নেই। তারা আমাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তি রাজনীতির ধোয়াশা তোলেন। কেন্দ্রীয় কোন নেতার সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু আমরাতো দলের আদর্শে উজ্জিবীত। এসব কথা বলে এরা আমাদের বিচ্ছিন্ন করে রেখে মাঠের রাজনীতিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেন বলেন, আমরা নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছি বলেই মাঠে নামতে পারছি। পুলিশ ও আওয়ামীলীগের নেতারা নানা ভাবে হয়রানী করছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেও শক্তি প্রয়েগ করছে। নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার আতঙ্কে সবাই। তরপরেও সবাই কর্মসূচি পালনে মাঠে আছি। যারা দলে নিস্ক্রিয় এদের প্রসঙ্গে এ্যাডভোকেট শাহাদৎ হোসেন বলেন, এরা সবাই বিগত দিনে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালে পদ পদবী নিয়ে ফায়দা নিয়েছে। এখন পদ হারিয়ে নিস্ক্রিয়। তাদের না ডাকার অভিযোগ শত ভাগ মিথ্যা। বিগত ১৫ বছরের তুলনায় ঝালকাঠি বিএনপি এখন অনেক বেশি সক্রিয় এবং চাঙ্গা।