বুধবার ● ১৫ নভেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ : বাঘ-ভাল্লুক ভরা পাহাড়ে পথ চলায় অতিক্রম করেছে ৫৪ বছর
সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ : বাঘ-ভাল্লুক ভরা পাহাড়ে পথ চলায় অতিক্রম করেছে ৫৪ বছর
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: আজ ১৫ নভেম্বর-২০২৩ সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ এর সাংবাদিকতা পেশায় ৫৫ বছরে পর্দাপণ । একেএম মকছুদ আহমেদ ইতিমধ্যে ৭৯ বছর পার করলেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতা জীবনে ৫৪ বছর পূর্ণ করেছেন।
১৯৯৫ সালে আমি যখন বগুড়ায় দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় এবং দৈনিক আজকের ভোলা পত্রিকায় কর্মরত ছিলাম তখনও সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ ভাইয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো।
সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই আমাকে অনেক স্নেহ করেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত প্রথম জাতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম এর প্রধান উপদেষ্টা। একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই সিএইচটি মিডিয়া পরিবারে অত্যান্ত শ্রদ্ধাভাজন একটি নাম।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি থেকে ১৯৭৮ সালের ২৬শে মার্চ সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সাপ্তাহিক ‘বনভূমি’ পত্রিকা। এরপর ১৯৮৩ সালের ২৬শে মার্চ প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক গিরিদর্পণ’ পত্রিকা।
বনভূমি পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হলেও দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দৈনিক গিরিদর্পণ প্রকাশনার ৪১ বছর পূর্ণ করেছে। দুটি পত্রিকার প্রকাশক সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই।
জ্যোষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট সাজ্জাদ শরিফ লেখেছেন ; সাংবাদিকতা মানে ‘কুমিরভরা পুকুরে সাঁতার কাটা’।
বাংলাদেশে সাংবাদিকতার কপাল সব সময়ই মন্দ। যে গণতন্ত্র আর সার্বিক মানবিক স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ আর এর আগের আন্দোলনগুলো হলো, কথা বলা ও মতপ্রকাশের অধিকার ছিল তার ভিত্তি। আর এর প্রাণই ছিল সাংবাদিকতা চর্চার অবাধ স্বাধীনতা।
মুক্ত সাংবাদিকতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পৃথিবীব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার মূল ভিত্তি। এটা কথার কথা নয়। ১৯৫৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারিতে সংবিধান প্রণয়ন নিয়ে আলোচনার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদে কী বলেছিলেন, আমরা একটু ফিরে দেখি।
স্পিকারের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আপনারা বলে থাকেন যে বাকস্বাধীনতা মানেই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা। আপনি কি জানেন যে সম্পাদকদের ডেকে বলা হয়, আপনারা এটা ছাপাতে পারবেন না, আপনারা ওটা ছাপাতে পারবেন না। স্যার, তাঁরা সত্য কথা পর্যন্ত লিখতে পারেন না এবং আমি সেটা প্রমাণ করে দিতে পারি।…নির্দেশটা যায় সচিবালয় থেকে…। সরকারের তরফ থেকে একজন হাবিলদার বা একজন ইন্সপেক্টর গিয়ে নির্দেশনা দেন যে আপনি একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে লিখতে পারবেন না।’
সাংবাদিকতা করতে গিয়ে একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই অনেক ঝড়ঝঞ্জা এবং প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। তিনি মাঝে-মধ্যে সময় পেলে তাঁর মনের কথা এবং পাহাড়ে সাংবাদিকতা করতে গেলে বন্ধুদের আর বল্টুদের মন মত সংবাদ প্রকাশ করা কথা ইত্যাদি।
তাহলে আমরা বলতে পারি, সাংবাদিকতা করতে গিয়ে একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই সাংবাদিকতা মানে ‘বাঘ-ভাল্লুক ভরা পাহাড়ে পথ চলা’। আর সেই ‘বাঘ-ভাল্লুক ভরা পাহাড়ে পথ চলা’ অতিক্রম করে একেএম মকছুদ আহমেদ ভাইয়ের এর সাংবাদিকতায় ৫৪ বছর পেরিয়ে ৫৫ বছরে পর্দাপণ।
সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই শুরুতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধীতা করেছেন এবং এখনো সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে তিনি রাজপথে দাঁড়ান।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সীমাহীন কষ্ট ও পরিশ্রম করে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন।
সাংবাদিকতার এই দীর্ঘ জীবনে একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই অনেক সাংবাদিক এবং সাংবাদিক নেতা তৈরি করেছেন। রাঙামাটি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে ওনার পিছনে ঘুরে এবং তিনি হাত কলামে অনেকই সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেছেন তাদের অনেকে বর্তমান সময়ে বড় সাংবাদিক। ১৯৮৩ সালে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামকে তৎকালিন সরকার রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি এই তিন পার্বত্য জেলায় ভাগ করে। বর্তমানে এই তিন পার্বত্য জেলায় অসংখ্য গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই শিক্ষকতা পেশার সাথে সাথে ১৯৬৯ সালের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদী পত্রিকায় রাঙামাটি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি দৈনিক জনপথ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক নিউনেশন, বিবিসি-বাংলা, রয়টার এবং সংবাদ সংস্থা এপি-তেও দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন। তিনি ভয়েজ অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি গিয়াস কামাল চৌধুরীকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংবাদ পরিবেশন করে সহযোগিতা করেছেন। একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদান রাখায় একেএম মকছুদ আহমেদ ভাইকে দৈনিক আজাদী পত্রিকা ২০০৩ সালে ‘চারন’ সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেন। বাংলাদেশে তাঁর আগে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীনকে চারন সাংবাদিক হিসবে সম্মাননা জানানো হয়েছিল। এই দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া বাংলাদেশে চারণ সাংবাদিক হিসেবে আর কোন সংস্থা বা সংগঠন অন্য কাউকে চারন সাংবাদিক হিসেবে সম্মাননা দেয়নি।
সাংবাদিকতা করার এখন যে সহজ অনলাইন যোগাযোগ ও ডিজিটাল মাধ্যম রয়েছে এমন মাধ্যম তিনি পাননি। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সীমাহীন কষ্ট ও পরিশ্রম করে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। শত প্রতিকুলতার পরেও তিনি সফল সাংবাদিক হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ একেএম মকছুদ আহমেদকে সিএইচটি মিডিয়াসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন থেকে অসংখ্য সম্মাননা প্রদান করেছেন।
আমাদের রাষ্ট্রীয় পরিধিতে সাংবাদিকতা চর্চায় স্বাধীনতার পরমপ্রতিশ্রুতি তাই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের এক অন্তর্গত বাস্তবতা। অথচ সত্য হলো, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সাংবাদিকতা চর্চার ক্ষেত্র রাষ্ট্রের তরফ থেকে ক্রমাগত সংকুচিত করা হয়েছে। ১৯৭৫ সালে বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর অধিকাংশ সংবাদপত্রের প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই বছরের ১৫ আগস্টে সপরিবার বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর দেড় দশক ধরে চলে সামরিক শাসন। সামরিক শাসনে যেখানে গণতন্ত্রই নেই, সেখানে মুক্ত সাংবাদিকতার প্রশ্নই বা ওঠে কোথায়! স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের আমলের শেষ দিকে ছোট ছোট বিষদাঁতওয়ালা কিছু পত্রিকা তাঁকে নাস্তানাবুদ করে ফেলে। কোনো কারণ না দেখিয়ে পত্রিকার নিবন্ধন বাতিল করার একটি নিবর্তনমূলক আইন তিনি সেগুলোর ওপর অহরহ প্রয়োগ করেন। এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এর ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের বাকস্বাধীনতা এবং সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রনয়ন করে দেশের সাংবাদিকদের মুক্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করা হয়েছে।
বর্তমানে একেএম মকছুদ আহমেদ ভাই বয়সের ভারে কিছুটা দুর্বল হলেও মানসিক ভাবে তিনি এখনো চির তরুন। এখনো বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে থাকেন। একেএম মকছুদ আহমেদ সফলভাবে আরো দীর্ঘ সময় ধরে সাংবাদিকতা করবেন এই প্রত্যাশা আমাদের সিএইচটি মিডিয়া পরিবারের।
লেখক : নির্মল বড়ুয়া মিলন
মূখ্য সম্পাদক
সিএইচটি মিডিয়া টুয়েন্টিফোর ডটকম
তারিখ : ১৩ নভেম্বর-২০২৩
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।