বৃহস্পতিবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ৪৫ শিক্ষক-কর্মচারীর
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ৪৫ শিক্ষক-কর্মচারীর
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ এমএ হালিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। কলেজটিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ২২শ’র মতো। শিক্ষক কর্মচারী আছেন ৫৬ জন। তার মধ্যে ৪৫ শিক্ষক-কর্মচারীই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উচাখিলা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন শিক্ষকেরা। এ সময় সাংবাদিকদের হাতে ধরিয়ে দেন ইউএনও’র কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগটি।
মো. আমিনুল হক নামে এক শিক্ষক বলেন, গত ১০ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুসারে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে পাঁচটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এগুলো হচ্ছে অর্থ ও ক্রয়, আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা, উন্নয়ন সংক্রান্ত , বেতন ফি আদায়, ও শিখন অর্জন মূল্যায়ন উপকমিটি। বিশেষ করে অর্থ ও ক্রয় উপকমিটি ও আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা উপকমিটির সদস্যরা কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে অধ্যক্ষের সাথে বিবাদ শুরু হয়। আমিনুল হক আরও বলেন, অধ্যক্ষ এমএ হালিম অর্থ ও ক্রয় উপ-কমিটির সাথে কোনো আলোচনা না করে প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা খরচ করে আসছেন। অথচ নগদ ১৫ হাজার টাকার বেশি অর্থ অধ্যক্ষের হাতে রাখার নিয়ম নেই। খরচের জন্য বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়লে অর্থ ও ক্রয় উপ-কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।
আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা উপ-কমিটির সদস্য শিক্ষক মো. এমদাদুল হক বলেন, নিরীক্ষার সময় অধ্যক্ষ এমএ হালিমের বিরুদ্ধে ছয় লাখ টাকার বেশি আপত্তি উঠে। কিন্তু আপত্তি নিষ্পত্তি না করে কমিটির সদস্যদের নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চাপ দেন অধ্যক্ষ। কিন্তু শিক্ষকেরা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেন।
প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখার শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, উপ-কমিটি গঠিত হওয়ার পর থেকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কমিটিকে উপেক্ষা করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। অধ্যক্ষ শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। গত ১৯ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা অনুদান প্রাপ্ত হয়। সেই অনুদানটি সংগ্রহ করার জন্য অধ্যক্ষ ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন বলে শিক্ষকদের জানান। কিন্তু কাকে ঘুষ দিয়েছেন নাম জানতে চাইলেও বলেননি। এছাড়াও অনুদান থেকে শিক্ষক ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ বিতরণ করে বাকী তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা নিজের পকেটে রেখে দেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান।
আরও কয়েকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে অধ্যক্ষ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা শুরু করেন। এসব আচরণের মধ্যে শিক্ষকদের গুণ্ডা বলে আখ্যায়িত করা, শিক্ষক পরিষদের সভায় উপস্থিত হয়ে শিক্ষকদের দিকে তেড়ে গিয়ে মারমুখি আচরণ করার পাশপাশি নানা ধরনের হুমকি প্রদান করার অভিযোগও রয়েছে অধ্যক্ষ এমএ হালিমের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে উচাখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কলেজটির দাতা সদস্য আনোয়ারুল হাসান খান সেলিম জানান, ঐতিহ্যবাহি কলেজটির বর্তমান অচলাবস্থার জন্য দায়ী অধ্যক্ষ। তাঁর উপযুক্ত বিচার না হলে কলেজটির ভবিষ্যত অন্ধাকার।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ এমএ হালিম বলেন, শিক্ষকদের এসব অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁরা কোথায়, কখন, কার কাছে অভিযোগ করেছেন এ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। অভিযোগ করলে তদন্ত হবে। তখন তিনি বিষয়টি জেনে নেবেন।