সোমবার ● ১১ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » কলা পাকাতে মিশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ
কলা পাকাতে মিশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: (১১ এপ্রিল ২০১৬ : বাংলাদেশ সময় রাত ৮.৫৫মিঃ) গাজীপুরের কলার আড়ত্গুলোতে কলা পাকাতে প্রকাশ্যেই মিশানো হচ্ছে কার্বাইড, ডিডিটি এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ৷
বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা ও অপুষ্ট কলা এক মাসেও পাকে না৷ তাই কলা পাকাতে রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে কৃত্রিম উপায়ে কলা পাকিয়ে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা৷
১১ এপ্রিল সোমবার গাজীপুর শহরের রেল গেট সংলগ্ন সাহাপাড়া এলাকার কলার আড়ত্-এ ঘুরে দেখা গেছে, কলা পাকানোর জন্য ছোট্ট ঘর তৈরী করে থাকে৷ যেটাকে ” হাউজ” বলে৷ এই হাউজে ১২-২৪ ঘন্টা কলা রাখা হয়, এর ভিতরেই কলা সম্পূর্ণভাবে পেকে যায়৷ আর এই অল্প সময়ে কলা পাকানোর জন্য ব্যবহার করে কার্বাইড, পোকা মারার বিষ ডিডিটি এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ৷ বিষাক্ত পদার্থের স্প্রে দিয়ে কলা নরম করে, পরে ডিডিটি’র সাথে কার্বাইড মিঙ্ করে স্প্রে করে যাহাতে কলার সবুজ রং হলুদে পরিণত হয়৷ বাহ্যিকভাবে আকর্ষনীয় ও হলুদ দেখা গেলেও এর ভিতরে শক্ত থাকে৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলার আড়ত্দার আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানায়, কলায় এসব পদার্থ মিশালে কলা দ্রুত পাকে এবং কলা দেখতে আকর্ষনীয় হয় বিধায় পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম একটু বেশী হলেও কলা কিনে নিয়ে যায়৷ এতে আমাদেরও লাভ বেশী হয়৷ তাছাড়া কলা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে৷ এসব পদার্থ মিশানো কলা খেলে যে মানুষের ক্ষতি হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানায়, ‘সবাই মিশায়, তাই আমিও মিশাই’৷
এসব পদার্থ কোথা থেকে কেনা হয় জানতে চাইলে সে জানায়, যেখান থেকে যখন কলা কিনে আনা হয়, তখন সেখান থেকেই এসব পদার্থও কিনে আনা হয়৷
আরো অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গাজীপুর সদর, কালীগঞ্জ, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে কলার আড়ত্ রয়েছে৷ এসব কলার আড়ত্-এ প্রতিদিন কলা পাকানোর জন্য এবং কলার রং আকর্ষনীয় করার জন্য কার্বাইড, ডিডিটি এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশানো হচ্ছে৷
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. আলী হায়দার খান আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, এসব বিষাক্ত পদার্থ মিশানো ফল খেলে মানব দেহে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে৷ আর দীর্ঘদিন বিষাক্ত পদার্থ মিশানো ফল খেলে কিডনিও বিকল হতে পারে৷ এমন কি মৃত্যুও হতে পারে৷
ডিডিটি: ডিডিটি সাধারণত পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হয়৷ আর ‘ডিডিটি’র সঙ্গে অন্য কেমিক্যাল মেশালে এর ক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়৷ যা মানবদেহে ঢুকলে কম সময়ে মারাত্মক ক্ষতি করে৷ ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধি সৃষ্টি করে৷ বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশংকা থাকে বেশি৷
অপর দিকে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেছেন, ‘ডাইক্লোরো ডাইফিনাইল ট্রাইক্লোরোইথেন’ বা ডিডিটি সাধারণত পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হয়৷ আর ‘ডিডিটি’র সঙ্গে অন্য কেমিক্যাল মেশালে এর ক্ষমতা কয়কে গুণ বেড়ে যায়৷ যা মানবদেহে ঢুকলে কম সময়ে মারাত্মক ক্ষতি করে৷ ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধি সৃষ্টি করে৷ বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হওয়ার আশংকা থাকে বেশি৷
চিকিত্সকদের মতে, ‘ডিডিটি’ ও কেমিক্যাল মেশানো খাদ্য খেয়ে কেউ মারা গেলে বহু বছর পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে পরীক্ষা করলেও সেই কেমিক্যালের আলামত পাওয়া যাবে৷ দেড়শ’ বছরেও এসব কেমিক্যালের তেজস্ক্রিয়া নষ্ট হয় না বলে তারা জানান৷
কার্বাইড : ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ৷ এটি এক ধরণের যৌগ যা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উত্পন্ন করে এসিটিলিন গ্যাস৷ যা ফলে প্রয়োগ করলে এসিটিলিন ইথানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত হয়৷ কার্বাইড মিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে ভোগে৷ বিশেষ করে বদহজম, পেটেরপীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়৷ এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে৷ শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
স্থানীয় কৃষিবিদরা কেমিক্যাল সম্পর্কে একই মতামত পোষণ করে বলেন, ব্যবহারকারীরা নিজেরাও জানে না যে তারা কী ধরনের বিষ ব্যবহার করছেন৷ তারা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন বলে কৃষিবিদরা জানান৷
এবিষয়ে কথা হলে কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে বলেন, যারা খাদ্য দ্রব্যে এসব কেমিক্যাল মিশায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না যার ফলে দিনদিন এসব বেড়েই চলেছে৷ এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত খাদ্য খেয়ে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে৷
তাদের দাবি, খুব দ্রুত ওই সব কলাসহ বিভিন্ন খাদ্যে কেমিক্যাল মিশানো ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক৷ এবং কলায় বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশানো বন্ধ করা হোক৷