সোমবার ● ১ জানুয়ারী ২০২৪
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » মাটিরাঙ্গায় এলজিইডির সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম
মাটিরাঙ্গায় এলজিইডির সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল(এলজিইডি) অধিদপ্তরের আওতাধীন উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে মাটিরাঙ্গার ঠিকাদার কালামের বিরুদ্ধে।
সেই সাথে উন্নয়নমূলক কাজের বিপরীতে নির্ধারিত হারে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে গুইমারা উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে।
সড়ক নির্মাণ ও মেরামতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বিটুমিনসহ নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, মূল ঠিকাদারের পরিবর্তে অদক্ষ ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানো, রাস্তা তৈরির সময় ঠিকাদারের কাজের যথাযথভাবে তদারকি না করা আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সড়ক নির্মাণ বা মেরামতের ২-৩ মাস যেতে না যেতেই তা নষ্ট বা যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার আশংকা করেন এলাকাবাসীরা। তারা জানান, এধরণের পুকুর চুরি দেখার কেউ নাই। এ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায়না। সে কথায় কথায় দলীয় ক্যাডার বাহিনীর ভয় দেখায়। আমাদের ভেতর ভেতরে রক্তক্ষরণ হলেও বলতে পারছি না। সরকারি বরাদ্দে অবমূল্যায়নের ফলে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি স্কুল সংলগ্ন বড় সড়ক হতে রাবার বাগান পর্যন্ত ২০২১-২০২২ইং অর্থবছরের ১২০০মিটার রাস্তার সংস্কার কাজ করছেন দিপঙ্কর এন্টারপ্রাইজের সত্বাধীকারী। এই ১কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১কোটি ১৪লাখ টাকা।
রবিবার(৩১ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদারকে টেন্ডারের চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার কথা বললেও কোনো তোয়াক্কা না করে অনুমোদনবিহীন নিম্ন মানের সামগ্রী, ইট-সুরকি ব্যবহার, বিশেষ করে ৩নাম্বার ইটের আদলা দিয়ে তার উপর রোলার চালিয়ে সমান করার সময় ইটের বড় বড় আদলাগুলো ধুলোয় পরিণত হচ্ছে। এভাবে কাজ সম্পূর্ণ করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে।
ইটের খোয়া এতটাই নিম্ন মানের ব্যবহার করা হচ্ছে যা ইটে পা দিয়ে চাপ দিলে তা ভেঙে যাচ্ছে। সিডিউল মোতাবেক নির্ধারিত পরিমাপের তোয়াক্কা না করে দায় সারা মতো কাজ চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন, মহিউদ্দীন, মাহিমসহ আরো বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, রাস্তার কাজে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কাউকে এসে তদারকি করতে দেখা যায়নি। তাছাড়া কাজের ধরণই বলছে অফিসকে মোটা অংকে ম্যানেজ করেই দায় সারা কাজ করা হচ্ছে।
এ কাজে তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন গুইমারা উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী নাঈম। তিনি বলেন, নিম্ন মানের সামগ্রী তথা ৩নাম্বার ইট ব্যবহারের ভিডিও চিত্রটি দেখে বিষয়টির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই পুরাতন ৩নং ইট সরিয়ে নিয়ে নতুন ১নাম্বার ইট দিয়ে কাজ করার ব্যাপারে ঠিকাদারকে চিঠি ইস্যূ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ঠিকাদার কালাম কাজের অনিয়মের বিষয়ে বলেন, আমার কাজ ভালো হচ্ছে না খারাপ তা অফিস বুঝবে আপনারা ভিডিও করার কে? আপনাদের সমস্যা কি? সাংবাদিকরা কাজের দূর্নীতির ছবি তুলতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে বলেন, আপনাদেরকে ছবি তোলার অনুমতি কে দিযেছে? এ কাজে আমার ১০/১২লাখ টাকা লস হবে। অফিসকে কমিশন দিয়েই কাজ করছি। একপর্যায়ে ঠিকাদার কালাম তার দলীয় ক্যাডার বাহিনী নিয়ে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে চাঁদাবাজীর বেলেইম দেয়ার ব্যার্থ চেষ্টা করে। সাংবাদিকদের ভিডিও ধারণ করে দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। পরে এলাকাবাসী ঠিকাদার কালাম ও তার ক্যাডার বাহিনীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করে সাংবাদিকদের পক্ষ নিলে তোপের মুখে পড়ে সে তার বাহিনীসহ চুপসে যান।
এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মান্নান কমিশন বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বলেন, রাস্তার কাজ খারাপ-ভালো জেলা অফিস দেখবে। আমার দায়িত্ব শুধু দেখা শোনা করা এর চেয়ে বেশি কিছু না বলে তিনি দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
খাগড়াছড়ি জেলা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো: বেলাল বলেন, ঠিকাদারকে চিঠি ইস্যুর বিষয়ে আমি অবগত নই। এলজিইডির কাজের মান ১৯/২০/২১ মানের হয়ে থাকে পুকুর চুরির কোনো সুযোগ নেই। কোনো অনিয়ম করে থাকলে এ ব্যাপারে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেন।
জেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো: রফিকুল ইসলামের নিকট এসকল বিষয়ে জানতে অসংখ্যবার মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এলাকাবাসী এ ধরনের পুকুর চুরির ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ কামনা করে সিডিউল অনুযায়ী কাজ করার আকুতি জানিয়েছেন।