বৃহস্পতিবার ● ১৪ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » মাটিরাঙ্গায় নিষিদ্ধ গাইড বই বিতরণ: নিরব স্থানীয় প্রশাসন
মাটিরাঙ্গায় নিষিদ্ধ গাইড বই বিতরণ: নিরব স্থানীয় প্রশাসন
অন্তর মাহমুদ,মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি :: (১ বৈশাখ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় রাত ১২.৩৫মিঃ) খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গায় পৌর প্যানেল মেয়র-১,মাটিরাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য মো: আলাউদ্দিন লিটন এর নেতৃত্বে নিষিদ্ধ গাইড বই বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষা খাতকে ধবংসের অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে বলে অভিযোগ ৷ গত ৪ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে মাটিরাঙ্গা মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামের সঞ্চালনার মধ্যদিয়ে উক্ত সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ গাইড বই বিতরণের ঘটনা ঘটে ৷ শিক্ষাঙ্গনে প্রকাশ্যে জনসমুখে সরাসরি নিষিদ্ধ গাইড বিতরণের এমন নজির সারাদেশে এটাই প্রথম ৷
জানা গেছে, নির্ধারিত ১০০ জনের মধ্যে কম পক্ষে ৬০জন ছাত্র/ছাত্রীর হাতে এই নিষিদ্ধ গাইড বই তুলে দেয়া হয়েছে ৷ শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের নিষেজ্ঞরা বার বার চারদিকে শিক্ষর গুনগত মান নিশ্চিত করার লক্ষে শিক্ষক ও স্ব স্ব এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের সচেতন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোন প্রভাব পড়েনি মাটিরাঙ্গা মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলে ৷ উল্টো শিক্ষারমান উন্নয়নে সরকারের গৃহীত নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শণ করা হয়েছে এখানে ৷ স্কুলের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির এ ধরনের কার্যক্রম এই স্কুলের অর্জিত সুনামকে মাটিতে নামিয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা সচেতন ব্যক্তিবর্গরা ৷
দেশে সব রকম নোট ও গাইড বই বিক্রয় ও বিতরণে সরকারীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকা সত্বেও প্রভাবশালী (নন ম্যাট্রিকুলেশন) এমন ধরনের নেতা কেন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে নিষিদ্ধ বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড তুলে দিচ্ছেন তা পরিষ্কার করে কেউ বলতে পারেনি ৷ সরকার ১৯৮০ সালে নোট ও গাইড প্রকাশনা নিষিদ্ধ করে প্রণীত নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইনের ৩,৪ নং ধারা অনুসারে নোট বই বিক্রি,ছাপানো ও সরবরাহ (বিতরণকারী) ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড সহ ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখেছেন ৷
২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পুনরায় জেলা প্রশাসকদের নোট, গাইড বই বাজারজাত বন্ধের নির্দেশ দেয় ৷ অতঃপর বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির করা রিটের শুনানিতে ২০০৯ সালের নভেম্বরে হাইকোর্ট প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নোট গাইড মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রয় ও বাজারজাতকরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে ৷ ২০১৩ সালের খসড়া শিক্ষা আইনেও যাবতীয় নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৷
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুলে অবৈধ গাইড বই বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাটিরাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১, আলাউদ্দিন লিটন গাইড বই বিতরণের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উন্নতির লক্ষে স্কুলের নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এ সব গাইড বই বিতরণ করেছি ৷ এ সময় তিনি দৃঢ় কন্ঠে বলেন,গাইড বই বিতরণে দেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আমাদের কখনো কখনো আইনের উর্ধেব উঠে গিয়ে কাজ করতে হয় ৷ এ সময় তিনি প্রতিবেদককে গাইড বই বিতরণের বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের জন্য নিষেধ করেন ৷
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান,দেশে প্রচলিত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতিতে আমাদের শিক্ষকবৃন্দের পেশাগত দায়িত্ব পালনে দক্ষতার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে স্কুলের সামগ্রিক সফলতা সুমন্নত রাখা ও পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট নিশ্চিত করতেই আমরা ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে গাইড বই বিতরণ করেছি ৷ এ সময় তিনি নোট বই বা সহায়ক বইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ৷
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মোহতাচিম বিল্লাহ জানান,সরকারী ভাবে গাইড বিতরণ সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ ৷ ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা গাইড বই বিতরণের ঘটনা আমি পুর্বে শুনিনি ৷ তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন,যদি ছাত্র/ছাত্রীদের স্কুল থেকে গাইড বই সরবরাহ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় তাহলে ঐ স্কুলের শিক্ষকদের ভুমিকা কি ?
এ বিষয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো: শামছুল হক মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে গাইড বই বিতরণ সারা জেলায় চলছে দাবী করে বলেন,মাটিরাঙ্গা মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুলের গাইড বই বিতরণের বিষয়টি আমার জানা নাই ৷ আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোজ খবর নেব ইত্যাদি ৷