শনিবার ● ১৬ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » জলউৎসবের মাধ্যমে শেষ হলো সামাজিক উৎসব বৈসাবী
জলউৎসবের মাধ্যমে শেষ হলো সামাজিক উৎসব বৈসাবী
ষ্টাফ রিপোর্টার ::(৩ বৈশাখ ১৪২৩ বাংলা : বাংলাদেশ সময় সকাল ১০.৩০মিঃ) ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বাংলাদেশে অনেক ধরনের উৎসব রয়েছে তার মধ্যে পাহাড়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার এ উৎসব অত্যন্ত জনপ্রিয়। জলউৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মারমা সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক সংস্থা (মাসস)’র আয়োজনে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার আর উৎসবমণ্ডিত পরিবেশের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হলো মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জলউৎসব। প্রতিবছর সাংগ্রাই উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের এ ঐতিহ্যবাহী প্রাণপ্রিয় উৎসব পাহাড়ে বয়ে আনে অনন্য আনন্দ-উল্লাস। নৈসর্গিক অরণ্যভূমি পার্বত্য অঞ্চলে বর্ষবিদায় এবং বর্ষবরণের এ মহাউৎসব পাহাড়িদের প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’। ১৫ এপ্রিল শুক্রবার রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে অনুষ্ঠিত মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই জলউৎসবের মাধ্যমে শেষ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের উৎসবপ্রিয় মানুষের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবী। পার্বত্য অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীদের নিজস্ব ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চা এবং দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার প্রত্যয়ে ও পুরাতন বছরের সকল গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছরের শুভ কামনা জানাতে এ বৈসাবী ও জলকেলি উৎসবের আয়োজন করা হয়।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় আনন্দঘন এ মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা,রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান।
এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থা (মাসস) এর সভাপতি অংসুছাইন চৌধুরী।
জলউৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। বাংলাদেশে অনেক ধরনের উৎসব রয়েছে তার মধ্যে পাহাড়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার এ উৎসব অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি করে তিনি পাহাড়ে যে শান্তি স্থাপন করেছেন তা নিঃসেন্দহে তাঁর সম্প্রীতিময় চেতনার বহিঃপ্রকাশ।
বিশেষ অতিথি সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, পাহাড়ে এমন অনেক সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন বৈসাবি উৎসব করা যেত না, রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেত না। আমার বন্ধুরা বলতেন, এটা নাকি ভারতীয় সংস্কৃতি। তিনি সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, এখানকার ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ঐতিহ্যকে সকলের মাঝে লালন করতে হবে।
একদিকে বিশালাকার মঞ্চে মারমা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর গান-নাচ আর অন্যদিকে তখন চলছিলো মারমা তরুণ-তরুণীদের জলউৎসব। ভালোবাসা আর স্নিগ্ধতার একে অপরকে ভিজিয়ে দিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিলো মারমা অধ্যুষিত ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তরুণ তরুণীরা। একে অপরের প্রতি পানি ছিটানোর মাধ্যমে নিজের মধ্যে যে ভালোবাসার এক অজানা অনুূভূতি লুকিয়ে ছিলো তা প্রকাশ করেছে প্রতিটি মারমা তরুণ-তরুণীরা।
বৈসাবি উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই জলউৎসবে পার্বত্যবাসীসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসে তরুণ-তরুণী ও বিভিন্ন ধর্ম-বণের লাখো মানুষ। এ উৎসব পাহাড়ে এক অনন্য অনুভূতিময় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি করে।