শনিবার ● ১৮ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাউজানে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
রাউজানে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: চট্টগ্রামের রাউজানে সন্দেহের বর্শবর্তী হয়ে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হয়েছে। গত ১৫ মে বুধবার রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়ন ৭নম্বর ওয়ার্ডের খানপাড়া গ্রামের মমতাজ মিয়া সওদাগর প্রকাশ নানা মমতাজের বাড়িতে এই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম সোহাগ আলম (৪৬)। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন নিহতের বড় ভাই সোনা মিয়া (৪৮), তার স্ত্রী পারভিন আক্তার, তার দুই ছেলে মো. তারেক (২২), মো. আশিক (২০)। নিহত সোহাগ আলম ও সোনা মিয়া উভয়ও একই এলাকার মৃত মমতাজ মিয়া সওদাগর প্রকাশ নানা মমতাজের ছেলে। তাদের উভয়ের পেশা কসাই। মমতাজ মিয়ার দুই পরিবারের ১৯ সন্তানের মধ্যে এরা বড় পরিবারের সন্তান।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোনা মিয়া ও সোহাগ আলমের সৎভাই সাহাবুদ্দিনের সাথে বিগত ২০২৩ সালের ১৪ মার্চ ও ১ মে সোনা মিয়াসহ দুই ছেলের মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে বিগত ২০২৩ সালের ২ মে মো.তারেক(২২), সোনামিয়া(৪৮), ননা মিয়া(৪২), মো.আশিক(২০), পারভিন আকতার (৪৫) বিরুদ্ধে আদালতে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোহাগ আলমকে এই মামলার ইন্ধনদাতা সন্দেহ প্রায় সময় গালিগালাজ করতেন সোনা মিয়ার পরিবার।
গত ১৫ মে (বুধবার) ছিল এই মামলার হাজিরার দিন। সোনা মিয়ার পরিবার গং বিকালে আদালতে হাজিরা দিয়ে সোহাগ আলম গালিগালাজ করতে থাকেন। এবং ঘরে থাকা সোহাগ আলমের স্ত্রীর সাথে বিবাদে জড়াতে চেষ্টা করেন। বাড়ির অদূরে আমগাছের ছায়ায় বসে থাকা সোহাগ আলম তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়ার আওয়াজ শুনে বাড়িতে ফিরলে সোনা মিয়া, তার ছেলে তারকে ও আশিক দেশীয় অস্ত্র দিয়ে সোহাগ আলমের উপর হামলা চালান। সোহাগ আলম হামলা হতে বাঁচতে তার ছোট ভাইয়ের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখানে তারা ঘরের দরজা ভেঙে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দ্বারা কসাইয়ের মত মারাত্মকভাবে সোহাগকে জখম করেন। ঘরে বাইরে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এতে সোহাগ আলম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই বুধবার রাত ১০ টার দিকে তিনি নিহত হন। এই ঘটনায় নিহত সোহাগ মিয়ার স্ত্রী গুলিয়ানার আক্তার ও তার সৎ ভাই শাহেদ ও তার স্ত্রী কোহিনুর আক্তার আহত হয়েছেন। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঘটনার পরপরই রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ন কবির, রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন ও চুয়েট ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ জাবেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পাহাড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় বড় ভাইয়ের হতে ছোট ভাই খুন বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মামলা দায়ের করেছেন। রাউজান থানার পুলিশ সুকৌশলে আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। সোহাগ আলমের পরিবার যাতে সুষ্ঠু বিচার পায় তার সকল প্রকারের সহযোগিতা করে যাব। নিহত সোহাগ মিয়ার স্ত্রী গুলিয়ানার আক্তার বলেন, আমার স্বামীকে সোনা মিয়া ও স্ত্রী ছেলেরা আমার চোখের সামনে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চায়। আমি আমার দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে কিভাবে থাকব। ১৬ মে সোমবার বেলা ৩ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এই তার স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। এইদিন বাদে আসর জানাজা শেষে ইমাম গাজ্জালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মা বাবার পরের স্থান বড় ভাইয়ের। সেখানে সন্দেহের বর্শবর্তী হয়ে স্ত্রীর ইন্ধনে ছোট ভাইয়ে খুন করা খুবই দুঃখজনক। এটা সমাজের কারো কাম্য নয়। রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই অজয় দেব শীল জানান, আটক আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাউজানে জিপিএ-৫ পেলো দুই জমজ বোন
রাউজান :: একসাথে জম্মু একসাথে পড়াশোনা করে এবার এই দুই জমজ বোন জিপিএ ৫ পেয়েছেন, তারা হলেন জামিলা বিনতে আজম চৌধুরী ও জাহারা বিনতে আজম চৌধুরী। তাদের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। পড়াশোনা করে এক বোনের ডাক্তার ও আরেক বোনের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখেনন। তারা বিঙ্গাপন বিভাগ থেকে পড়াশোনা করে জিপিএ ৫ অর্জন করেন চট্টগ্রামের রাউজানে এসএসসি পরীক্ষায় দুই জমজ বোন পে জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তারা হলেন জামিলা বিনতে আজম চৌধুরী ও জাহারা বিনতে আজম চৌধুরী। উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্ত্তা দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করেন দুই ছাত্রী। এই দুই যমজ বোন এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেন। তাদের এই সাফল্য এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। জমজ দুই মেয়ের এমন সাফল্যে দেখে খুশি বাবা ও মা। তারা উপজেলা হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্ত্তা গ্রামের কবির মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ীর প্রবাসী মো: নরুল আজিম চৌধুরী ও গৃহিনী রহিম আক্তারের দুই কন্যা সন্তান।
জমজ দুই বোন বলেন, বাবা মায়ের ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণা এই সফলতা অর্জন করেছেন। এই মেধাবী দুই শিক্ষার্থী বলেন গ্রামেও পড়াশোনা করেও ভালো ফলাফল করা যাই। ভবিষ্যতে ডাক্তার ও শিক্ষক হওয়া স্বপ্ন দেখছেন এই জমজ দুই বোন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত জামিলা বিনতে আজম চৌধুরী জানান, নিজেদের সাফল্যে উচ্ছাসিত আমরা। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিবারের সহযোগিতায় আমরা ভালো ফলাফল করেছি। এজন্য বিশেষ করে আমাদের স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতে একজন শিক্ষক হতে চায়। সামনে আরও ভালো ফলাফল করে যেন আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। সবার কাছে দোয়া চাই। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত
জাহারা বিনতে আজম চৌধুরী বলেন, আমরা দুই বোন একসাথে জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি এতে অনেক বেশি আনন্দিত। তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়ে বলেন ভবিষ্যতে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করতে চান। স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা উম্মে কুমকুম হাবিবা বলেন, এরা দুইজনই অনেক মেধাবী। তারা নিয়মিত স্কুলে ক্লাস করতেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে তাদের এই সাফল্য। মা রহিম আক্তার জানান, ছোটবেলা থেকেই আমাদের দুই মেয়ের একসাথে বড় হওয়া। তারা সবসময় মিলেমিশে থাকেন। একসময় মানুষ যমজ সন্তান হলে সমাজের মানুষ নানারকম কথা বলতেন। আজ আমার দুই যমজ মেয়ে পুরো এলাকায় চমক দেখিয়েছেন। তাদের এই অর্জনে আমি গর্বিত। এ ব্যাপারে উত্তর সর্ত্তা দরগাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রাধন শিক্ষক তড়িৎ কান্তি বড়ুয়া বলেন, তারা দুইজন অনেক মেধাবী। তাদের এই অর্জনে অভিভূত স্কুলের সকল শিক্ষকরা। তারা দুই জমজ বোনসহ এবার আমাদের স্কুল থেকে ৪জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমি সবার সফলতা কামনা করেছি। তারা মানুষের মতো মানুষ হয়ে। যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে পারে সেই প্রত্যাশা করেন।