সোমবার ● ১৫ জুলাই ২০২৪
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » বাগেরহাট পৌরসভায় অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়কই খানাখন্দে ভরা মানুষের ভোগান্তি চরমে
বাগেরহাট পৌরসভায় অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়কই খানাখন্দে ভরা মানুষের ভোগান্তি চরমে
এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাট জেলা শহরের দেশের প্রথম শ্রেণির বাগেরহাট পৌরসভা অধিকাংশ সড়কই খানাখন্দে ভরা দেড় লাখ মানুষের ভোগান্তি চরমে । পৌরসভার ৭৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়কের ৭০ ভাগই চরম ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকাংশ সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এমন অবস্থায় ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে যানবাহনে চলাচল করতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
১৯৫৮ সালে ১৫ দশমিক ৮৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাগেরহাট শহর পৌরসভায় রূপান্তরিত করা হয়। ১৯৯১ সালে উন্নীত হয় দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভায়। বাগেরহাট পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৭টি মহল্লায় বর্তমানে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ বসবাস করে। বাগেরহাট জেলা সদর হওয়ায় ৯টি উপজেলায় মানুষকে তাদের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত এ শহরে আসতে হয়। বছরের পর বছর বাগেরহাট পৌরসভার ৭৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই সংস্কার করা হয়নি।
সরজমিন দেখা যায়, নূর মসজিদ মোড় থেকে এলজিইডি, রাহাতের মোড় থেকে চানমারী ব্রিজ, পুরাতন বাজার থেকে সম্মিলনী স্কুল, নূর মসজিদ থেকে সরকারি মহিলা কলেজ হয়ে হাড়িখালী মোড়, মুনিগঞ্জ-হাড়িখালী রোড যান চলাচলের অনুপোযগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও বাগেরহাট শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা, খারদ্বার, বাসাবাটী, শাহাপাড়া, দশানী, গোবরদিয়া, সোনাতলা, সরুই এলাকার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এর উপরে জলাবদ্ধতা। একটু বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় শহরের অধিকাংশ রাস্তা।
শহরের ইজিবাইক চালক আব্দুল জলিল বলেন, শহরের অধিকাংশ সড়ক এখন রিকশা, অটোরিকশা চলাচলের অনুপোযগী হয়ে পড়েছে। আগের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। না পারতে কেউ আর অটোতে উঠতে চায় না। সড়কে বের হলেই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। অটোরিকশা প্রায়ই নষ্ট হচ্ছে। তারপরেও পেটের টানে বাধ্য হয়ে অটো চালাচ্ছি। মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী সুমন শেখ বলেন, আমি সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। জরুরি প্রয়োজনে প্রতিদিনই শহরে আসতে হয়। কিন্তু রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে রিকশা, ইজিবাইক তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতেও কষ্ট হয়। বিষয়টি বলারও কেউ নেই, দেখারও কেউ নেই। নরসুন্দর সুনীল বলেন, দু’দিন আগেও এই ভাঙা রাস্তায় ভ্যান উল্টে পড়ে গিয়ে এক গর্ভবতী নারী আহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। এমন দুর্ঘটনা এই সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে। রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ার কারণে আমার সেলুন ও আশপাশের দোকানগুলোতে কাস্টমারও কমে গেছে। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।
বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সভাপতি তালুকদার আব্দুল বাকী বলেন, বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পৌরসভার আওতাধীন। কিন্তু দুঃখের বিষয় দীর্ঘদিন কোনো প্রকার সংস্কার কাজ না করায় টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত গাড়ির ক্ষতি হচ্ছে। আমরা মালিক সমিতি সমস্যা সমাধানে একাধিকবার ইট, বালি দিয়ে ভাঙা স্থান মেরামত করেছি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার ভাঙা অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে খারাপ অবস্থায় থাকা সড়কগুলো নিয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে চান না পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান। তবে দ্রুতই পৌরসভার প্রধান ১১টি সড়কসহ ভাঙাচুরা সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
চাকশ্রী-গিলেতলা সড়ক খানাখন্দে ভরা জনদুর্ভোগ
বাগেরহাট :: বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার চাকশ্রী-গিলেতলা ব্যস্ততম সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দ ও বড় বড় গর্তে পানি জমে যেন কাঁদা মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যানবাহন ও স্থানীয়রা। ফলে হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা।
গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক দিয়ে গিলেতলা, খানপুর, চাকশ্র্রী, বাইনতলা এলাকার অন্তত অর্ধশত গ্রামের মানুষ খুলনা, রামপাল, মোংলা, ফয়লা, ভাগাসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন। এ সড়কের আসপাশে অনেকগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকটি বড় বাজার রয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন ও হাজার হাজার মানুষ এ সড়কটি যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার চাকশ্রী থেকে গিলেতলা পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে যায়। সড়কের উপরের পিচ উঠে অনেক জায়গায় কাঁদা জমে আছে। সড়কের চাকশ্রী এ বি সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে, একুববারিয়া, বাইনতলা নেছারিয়া আলিয়া মাদ্রাসা এলাকাসহ অন্তত ১৩টি স্থান দেবে গেছে। এসব জায়গায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও স্থানীয়রা।
এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক মো. আল আমিন জানান, ‘রাস্তার যে বেহাল দশা, তাতে চলাচল করা খুবই কষ্ট। কয়েকদিনে দুইবার আমার ইজিবাইক উল্টে গেছে। যাত্রীসহ আমি আহত হয়েছি। চাকশ্রী এ বি সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু হানিফ বলেন, ‘দুই কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। কোন যানবাহন পাওয়া যায় না ভাঙা রাস্তার জন্য। বৃষ্টির সময় কয়েকবার গর্তের মধ্যে পড়ে গেছি। আমার বন্ধুরাও আহত হয়েছে।’
বাসচালক ওমর ফারুক বলেন, ‘চাকশ্রী থেকে গিলেতলা মাত্র সাড়ে ৫ কিলোমিটার পথ যেতে স্বাভাবিকভাবে ২০ মিনিট লাগার কথা। কিন্তু খানাখন্দের কারণে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রীরাও চরম ভোগান্তির শিকার হয়। আমাদের গাড়ির বেশ ক্ষতি হয়।’
আলম শেখ নামে এক বৃদ্ধ আক্ষেপ করে বলেন, ‘২ থেকে ৩ বছর ধরে রাস্তাটি খুব খারাপ হয়েছে, এখন চলাচল করা যায় না। বাস চলতে পারে না। মানুষজন অসুস্থ হলে হাসপাতালেও নেয়া যায় না।’
রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ জানান, ‘তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তাটির বেহাল দশা। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য নিজের পকেটের টাকা দিয়ে খানাখন্দে ইট দিয়েছি, কিন্তু এখন আর দেয়ার মতো জায়গা নেই। সব জায়গায় খারাপ অবস্থা। এখনই যদি এই সড়ক সংস্কার না করা হয়, তাহলে রাস্তা দিয়ে আর মানুষ যাতায়াত করতে পারবে না।
রামপাল উপজেলার প্রকৌশলী গোলজার হোসেন জানান, ‘সড়কটি সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির ৩ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। খুব দ্রুত কাজ শুরু হবে।’ সড়কের বাকি কাজ আগামী অর্থবছরে করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।