শনিবার ● ৫ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » ধর্ম » নবীগঞ্জ ৯২ মন্ডপে শারদীয় উৎসব দূর্গাপুজার প্রস্তুতি সম্পন্ন
নবীগঞ্জ ৯২ মন্ডপে শারদীয় উৎসব দূর্গাপুজার প্রস্তুতি সম্পন্ন
উত্তম কুমার পাল হিমেল, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে ৯২ টি পূজার মন্ডপে বছর ঘুরে আবারো হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজার ব্যাপক প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ০৯ অক্টোবর বুধবার ষষ্টীবিহিত পুজার মাধ্যমে শুরু হচ্ছে ৫ দিনব্যাপী বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজা।
আনন্দময়ীর আগমনে ধনী-গরিব আবালবৃদ্ধ সকল পুজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে যেন আনন্দের কমতি নেই কোন অংশেই। তবে দেশের চলমান পরিস্থিতি ও বিভিন্ন স্থানে পূজাকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত ঘটনার কারনে কিছুটা আতংক বিরাজ করছে। বাঙ্গালী হিন্দুদের সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দুর্গাপুজার আগমনী সুর শুভ মহালয়ার মাধ্যমে ইতিমধ্যে সকলের মাঝে বিরাজ করছে। প্রতিটি পুজা মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজ সম্পাদন করার জন্য দিনরাত নিরবিছিন্নভাবে কাজ করে প্রতিমা তৈরীর কাজ শেষ করে রং তুলির আছড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিত্রশিল্পীরা।
তারপর মন্ডপ সাজসজ্জার কাজ শেষ করলেই উৎসবের আমেজে মেতে উঠবেন সবাই। তাই শারদীয় এ পুজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল পুজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে বিপুল আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আনন্দ ও উৎসাহ উদ্দীপনা ঘাটতি নেই বিভিন্ন সংগঠন ও সামাজিক লোকজনের মাঝেও ।
শাস্ত্রমতে জানাযায়, এ বছর দেবী দোলায় আগমন করবেন ফল মড়ক দোলায়াং মরকং ভবেৎ এবং ঘোটকে গমন করবেন, ফল ছত্রভঙ্গ বসুন্ধরা।
সমাজের সকল আসুরিক শক্তির বিনাশ সাধন করে সর্বত্র শান্তি স্থাপনের মুলমন্ত্রই হলো শারদীয় দুর্গাপুজার মুল উদ্দেশ্য। সারা দেশের ন্যায় এ বছর নবীগঞ্জ ১৩ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে ৯২ টি মন্ডপে সাড়ম্বরে পূজা অনুষ্টিত হবে। প্রত্যেক পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় এ বছর সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুলিশ ও আনসার বাহিনীর লোকের পাশাপাশি সেচ্ছাসেবকরাও প্রতিটি পুজামন্ডপে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া উপজেলায় ৯২ টি পুজামন্ডপের জন্য নবীগঞ্জ থানা পুলিশের ১৩ টি মোবাইল টীম ও স্টাইকিং ফোর্সসহ সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে।
এখন শুধু মাত্র অপেক্ষার পালা। আর মাত্র ৩ দিন পরেই প্রতিটি পুজামন্ডপে পঞ্চমীর বোধনের মাধ্যমে অসুর শক্তি বিনাশীনি দেবী দুর্গা এ মর্ত্যধামে আবাহন করবেন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ নবীগঞ্জ উপজেলা কমিটির সহ সভাপতি রঙ্গ লাল রায় বলেন,আসন্ন শারদীয় দুর্গাপুজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পাদনের জন্য আমাদের সেচ্ছাসেবক ও পুলিশ প্রশাসনসহ সকল শ্রেনীপেশার মানুষের সহযোগীতা কামনা করি।
উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেল বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলার ৯২ টি পূজা মন্ডপে সর্ববৃহৎ উৎসব শারদীয় দূর্গাপুজা সাড়ম্বরে পালনের প্রস্ততি হাতে নেওয়া হয়েছে। পৌর এলাকাসহ কিছু ঝুকিপূর্ন মন্ডপসহ সবকটি মন্ডপেই ইতিমধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা জোরদারের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। দুর্গাপুজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে সম্পাদনের জন্য ধর্মবর্ণ নিবিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সহযোগীতা কামনা করি।
নবীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, শারদীয় দুর্গা উৎসব যাতে সুন্দর ও সুষ্টভাবে পালন করা হয় এ ব্যাপারে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
নবীগঞ্জ থানার নবাগত ওসি কামাল হোসেন বলেন,শারদীয় দুর্গাপুজা সুন্দরভাবে পালনের জন্য সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। প্রতিটি পূজামন্ডপে পুলিশ ও আনসার দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নের একটি করে পুলিশের ষ্টাইকিং ফোর্স মোবাইল টীম সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অসুপ বলেন,শারদীয় দুর্গাপুজা সুন্দর ও সুষ্টভাবে পালনের জন্য সরকার ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তার জন্য আজকে রবিবার বিশেষ আইনশৃঙ্গলা সভা আহবান করা হয়েছে।
আগামী ০৯ অক্টোবর বুধবার ষষ্ঠীপুজার মধ্য দিয়ে নবীগঞ্জের সকল পুজা মন্ডগুলোতে ৫ দিন ব্যাপী শারদীয় দূর্গাপুজা শুরু হয়ে ১৩ অক্টোবর রবিবার মহা দশমীবিহিত পুজার মাধ্যমে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পুজা সম্পন্ন হবে।
হিন্দু ধর্মবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এ পূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ন্যায় নবীগঞ্জের সকল পুজারী ও ভক্তবৃন্দের মাঝে সর্বত্র যেন উৎসবের আমেজ বিরাজ করলেও দেশের চলমান পরিস্থিতি ও পূজাকে কেন্দ্র করে কিছু ঘটনায় অনেকের মাঝে আতংকের কারনে উৎসবের আমেজ অনেকটা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন পুজারীবৃন্দ। তবে পুজারীদের বিশ্বাস অসুর বিনাশিনী দেবী দুর্গাপুজার মাধ্যমে সমাজের সকল অনাচার দুর হয়ে আবার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।