শুক্রবার ● ৮ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটি জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিক্রিয়া
রাঙামাটি জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিক্রিয়া
স্টাফ রিপোর্টার :: সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন ঘোষণা করা হয়েছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা কমিটির প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বাংলাদশ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধত একটি বামপন্থী গণমানুষের একটি রাজনীতিক দল।
গণমানুষের ভোটের ও ভাতের অধিকার নিয়ে আমাদের পার্টি ২০১৭ সাল থেকে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করছে।
গত ৫ আগষ্ট-২০২৪ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর নতুন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমাদের পার্টি অগ্রসর হচ্ছে, এ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে আমরা যে এসেছি তা কিন্তু খুব সহজে হয়ে যায়নি, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমুহ তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলেছেন বৈষম্য ও কোটাবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনে ১৫৮০ জনের অধিক মানুষের প্রাণ গেছে।
ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আন্দোলনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২জন সদস্য নিহত হয়েছে। সংখ্যাটা যদি আমরা হিসাব করি মহান মুক্তিযুদ্ধ বাদে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন পরিবর্তনের জন্য বা কোন সংগ্রামের জন্য এত আত্মহতি দিতে হয়নি।
এবার এতবেশী আত্মহতি দিতে হয়েছে, বাংলাদেশে এমন একটি সরকার গত ১৫ বছর ধরে চরম কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাশাসন প্রতিষ্ঠা করে ছিলো সেই স্বৈরাচারকে উৎখাত করার জন্য ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান মধ্যে দিয়ে নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কার অত্যান্ত জরুরী।
অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে। এ সরকারের কাছে সমতল-পাহাড়ের গণমানুষের আখাঙ্খা একটু বেশী। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষরা বৈষম্যের স্বীকার।
গত বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে স্মারক নম্বর-২৯,০০, ০০০০, ০০০, ২১৪, ১৮, ০০২২,২৪-১১৯ মূলে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় পরিষদ শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলিমা বেগম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠনের নামের তালিকা প্রকাশ করেন।
সেই তালিকায় বড়ুয়া, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, লুসাই, চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর কোন সদস্যর নাম না থাকয় বৈষম্যহীন বলা যাচ্ছে না। এছাড়া রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জুরাছড়ি, বরকল, কাউখালী ও রাজস্থলী উপজেলা থেকে কোন সদস্য রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে রাখা হয়নি। তাহলে কি অন্তবর্তীকালীন সরকার স্বৈরাচারের দোসরদের কবল থেকে রাঙামাটিবাসীকে রক্ষায় বারংবার ব্যর্থার পরিচয় দিচ্ছেন।
১. কাজল তালুকদার পিতা- জ্যোতি প্রকাশ তালুকদার-চেয়ারম্যান।
যারা সদস্য হয়েছেন :২. দেব প্রসাদ দেওয়ান পিতা- যোগেশ চন্দ্র দেওয়ান, ৩. প্রনতি রঞ্জন ধীসা পিতা-মৃত ননী পুতুল খীসা, ৪. প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান পিতা- প্রফুল্ল কুমার দেওয়ান, ৫. বরুন বিকাশ দেওয়ান পিতা- রনজিত কুমার দেওয়ান, ৬. কাওসিংমং পিতা- চাইখোয়াই হলা, ৭. নাইণ্ড প্রু মারমা, স্বামী- বাচ্চু মং, ৮. ড্যানিয়েল লাল মুয়ান সাং পাংখোয়া পিতা- সুমসুমা পাংখোয়া, ৯. রাঙানী তঞ্চঙ্গ্যা স্বামী- লাল ছোয়াক লিয়ান পাংখোয়া, ১০. সাগরিকা রোয়াজা পিতা- সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, ১১. সয়াল দাশ পিতা- দেবেন্দ্র লাল দাশ, ১২. মোঃ হাবীব আজম পিতা- মোঃ চান মিঞা, ১৩ মিনহাজ মুরশীদ পিতা- মৃত সামসু আলম, ১৪ বৈশালী চাকমা পিতা- সমর বিজয় চাকমা ও ১৫ লুৎফুন্নেসা বেগম পিতা- আবুল খায়ের।
১৫ জনের মধ্যে চাকমা জনগোষ্ঠীর ৬ জন, মারমা ২জন, পাংখোয়া ১জন, তনচঙ্গা ১জন, ত্রিপুরা ১ জন, মুসলামান ৩জন ও হিন্দু ১জন। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিষদের ৫টি জনগোষ্ঠীর লোকজন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে স্থান পেয়েছেন।
বৈষম্যে স্বীকার হয়েছে বড়ুয়া, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, লুসাই, চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠনে একটি জনগোষ্ঠীর থেকে চেয়ারম্যান পদ সহ ৬জন অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে রাখা হয়েছে।
একই জনগোষ্ঠীর ১/২ জন করে অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে রাখা হলে রাঙামাটিতে বসবাসরত প্রায় সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রাখা যেত।
বড়ুয়া, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, লুসাই, চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজনের সাথে সরাসরী বৈষম্যে করা হয়েছে।
যাঁরা রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে ছিলো তাদের নাম, যেসব পরিবার আওয়ামীলীগ পরিবার নামে চিহ্নিত তাদের নাম, যাঁরা আওয়ামীলীগ সরকারের এনজিও কর্মীর নাম, একই পরিবার থেকে একাধিক সদস্য এবং যাঁদের পরিবারের সদস্যর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযাগ দুদক এ তদন্তাধীন তাদের নাম রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে দেখে আমরা হতভাগ এবং বিস্মিত।
মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগকে পূর্ণবাসন করার জন্য রাজনৈতিক স্বার্থে একটি গোষ্ঠী উঠে পড়ে লেগেছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠনের তালিকায় বির্তকিত ব্যাক্তিদের নাম যাঁরা প্রস্তাব করেছেন ও এ সকল নাম যাঁরা সুপারিশ করেছেন এবং যাঁরা অনুমোদন করেছেন তারা স্বৈরাচারের দোসরদের রাঙামাটি জেলা পার্বত্য পূর্নরায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় লিপ্ত।
এছাড়া অন্তবর্তীকালীন বাংলাদেশ সরকার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় আইন ও বিচার বিভাগ, সলিসিটর অনুবিভাগ (জিপি-পিপি শাখা) স্মারক নং- সলিসিটর/জিপি-পিপি (রাঙ্গামাটি)-২৬/২০২৪ (অংশ-১)-১৬৭ তারিখঃ ৩/১১/২০২৪ ইংরেজি তারিখ স্বৈরাচারের দোসরদের পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)সহ সরকারি কৌসুলী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাবলিক প্রসিকিউটর ও সহকারী প্রসিকিউটর নিয়োগ দিয়ে আরেক বিতর্কের জন্ম দেয়।
স্বৈরাচারের দোসরদের রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদে এবং রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) নিয়োগ দিয়ে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যূত্থানের শহীদদের রক্তের সাথে প্রতারণার শামিল ।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ ধারনা করছে একটি মহল সুকৌশলে পাহাড়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতে পারে।
ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান মধ্যে দিয়ে গড়া অন্তবর্তীকালীন সরকার যেন সতর্কতার সাথে পাহাড়ে বসবাসরত গণমানুষের আখাঙ্খা আমলে নিয়ে বৈষম্যেহীনভাবে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা কমিটির পক্ষ থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।